ঈদের দিনেও পাতে জোটেনি এক টুকরো মাংস
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১২ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৩৩ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ঈদের আমেজ এখনো শেষ হয়নি। সারা দেশে পশু কুরবানি হয়েছে। এসব পশুর মাংসের হকদার দুস্থ, প্রতিবেশী এবং যারা কুরবানি দেননি তারাও। প্রায় সবাই কুরবানির মাংস বণ্টনের আগে এই নীতি অনুস্মরণ করেন।ঈদের দিনেও জেলেপাড়ার মানুষের ভাগ্যে জোটে না এক টুকরো মাংস। ঈদের দিনেও তাদের পাতে ছিল একমুঠো সাদা ভাত আর ডাল। ঈদুল আজহার দিন সকালে চরফ্যাশনের ২১ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামপাড়া-মহল্লায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন পশু কুরবানি দেওয়ার চিত্র থাকলেও তার উল্টো চিত্র
ছিল চরফ্যাশনের উপকূলীয় জেলেপাড়ায় । ঈদের নামাজের মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের ঈদ। উনুনে রান্না হয়েছে সেই প্রতিদিনের মতো সামান্য ডালভাত । একদিকে কাজ নেই নদীতে মাছ নেই চলছে অবরোধ, অন্যদিকে পশু কুরবানির মাংস জেলেপাড়াবাসীর কাছে স্বপ্নের মতো ছিল। যেখানে পরিবারের সদস্যদের তিনবেলা মুখে খাবার
তুলে দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা । চরফ্যাশনের বেতুয়া মেঘনা নদীর জেলে আনোয়ারা বেগম বলেন, ঈদ হলেও এই ঈদ তো আমাদের জন্য নয়। আমি গাঙ্গে (নদী) গেলে পুরুষ আর বাড়িতে এলে নারী। অনেক আশা নিয়ে জাল টানি। কখনো মাছ মেলে, কখনো মেলে না। স্বামী মারা গেছেন। জীবন-সংগ্রামের সঙ্গে যুদ্ধ করা সমাজকে পরোয়া না করে শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে কখনো নদীতে বা কখনো খালের জাল ফেলে মাছ ধরি। মাছ বিক্রির টাকায় সেমাই চিনি নিয়ে ফিরলেই চুলায় রান্না উঠে ঈদের।
এবার নদীতে মাছ নেই, তাই আমাগো ঈদও নেই।জেলে আনোয়ারা বেগমের মতো জেলে হাসান বলেন, টানা দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা, নদীতে ইলিশ নেই। এই সংকটে ঈদ আনন্দবঞ্চিত আমরা চরফ্যাশনের মেঘনা-তেঁতুলিয়াপাড়ের ইলিশ শিকারিরা। দীর্ঘ সময় কর্মহীন থাকায় সংসারে অচলাবস্থা। তাই ভিন্ন কোনো আয়োজন ছাড়াই বছরের অন্যদিনের মতো ডাল-ভাতে কাটছে ঈদ। কেউ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসেনি ।
জেলে হাসান বলেন, আজ আমার ঘরে ঢাল মরিচ ভাজা হয়েছে। এর বেশি কিছু জোটেনি। জসিম উদ্দিন মাঝি। পেশায় জেলে। স্ত্রী নাজমা এবং দুই সন্তানসহ ঢালচরের হাজিপুর গ্রামের সাইফুল হাজির বাড়ির আঙিনায় ঝুপড়ি করে আশ্রয় নিয়েছে। এই দম্পতির ১২ সদস্যের সংসার চলে মেঘনায় মাছ ধরে। কিন্তু গত দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার পর এখন মাছের আকাল। তাই এবারের ঈদ তাদের জন্য আনন্দের পরিবর্তে এসেছে হতাশা নিয়ে। একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জন্য কোনো সহায়তা না পাওয়াসহ নানান কারণে এই ঈদের আনন্দ থেকে উপকূলীয় এলাকার ৪০ হাজার জেলে পরিবার এবারের ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত। এ বিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ঈদে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থা থেকে বরাদ্দ করা অনুদান তাদের সহযোগিতা করা হয়েছে।