একটা চাকরি চান ফায়ারম্যান রনির স্ত্রী
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৯ জুন,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৪৩ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
‘আট মাস আগে আমাদের বিয়ে হয়। অকালে স্বামীকে হারালাম। আমার তো কোনও সন্তানও নেই। আমি কী নিয়ে বাঁচবো? কৃষি ডিপ্লোমা পাস করেছি। সরকার একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিলে বেঁচে থাকতে পারতাম।’
কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন নেভাতে গিয়ে মৃত ফায়ার সার্ভিসকর্মী রমজানুল ইসলাম রনির (২২) স্ত্রী রুপা বেগম। রনি শেরপুর সদরের হেরুয়া বালুরঘাট গ্রামের আকরাম হোসেন আঙ্গুর আলীর ছেলে। এদিকে ছোট ছেলে তারিকুল ইসলাম ও সদ্যবিধবা পুত্রবধূ রুপার যোগ্যতা অনুসারে সরকারের কাছে চাকরির আবেদন জানিয়েছেন রনির বাবা।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দেড় বছর আগে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন রনি। সর্বশেষ বদলি হন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনে। সেখানে স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। গত ৪ জুন রাতে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে দায়িত্ব পালনে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। এরপর ৫ জুন সকাল ১০টা পর্যন্ত তার মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। পরে তার স্ত্রী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও চট্টগ্রামে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নেন। এক পর্যায়ে লাশ শনাক্ত করেন।
বড় ছেলেকে হারিয়ে কান্না থামছে না আকরাম হোসেনের রনির চাচা আবুল কাশেম বলেন, ‘চার ভাইবোনের মধ্যে রনি বড়। প্রায় দেড় বছর আগে ফায়ার সার্ভিসে চাকরি হয়। ছোট ভাই তারিকুল ইসলাম এবার এইচএসসি পাস করেছে। ছোট বোন আশামণি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে নবম এবং আঁখিমণি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। তাদের লেখাপড়াসহ পরিবারের সব খরচ চালাতো রনি। আট মাস আগে শেরপুরের শ্রীবরদী থানার জালকাটা গ্রামের রুপার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিন মাস আগে সীতাকুণ্ডে বদলি হয়ে সেখানেই স্ত্রীসহ বসবাস করছিল।’
দাদা ইউনুস আলী বলেন, ‘আমার বড় নাতি রনির টাকায় চলতো সংসার। ছোট নাতির পড়াশোনাসহ সব খরচ দিতো। ছুটি নিয়ে বাড়ি আসতে চেয়েছিল। আমরা না করায় আসেনি। বাড়ি এলে আগুনে পুড়ে মরতে হতো না।’
এদিকে বিচারাধীন একটি মামলায় জামিনে থাকা রনির বাবা আকরাম হোসেন বলেন, ‘অনেক শখ ছিল রনি ডিফেন্সে চাকরি করবে। চাকরিও পেয়েছিল। কিন্তু দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেলো। আমি অসুস্থ। মিথ্যা মামলায় জেল খাটছি। এখন কীভাবে সংসার চালাবো। সরকারের কাছে আবেদন জানাই, আমার ছোট ছেলে তারিকুল ও পুত্রবধূকে যেন একটা চাকরি দেওয়া হয়।’
চরশেরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম মিয়া রনির পরিবারকে প্রয়োজনীয় অর্থসহায়তা দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স শেরপুরের উপ-পরিচালক মো. জাবেদ হোসেন বলেন, ‘সরকারি দায়িত্ব পালনকালে মৃত ফায়ার ফাইটার রনির পরিবারকে অর্থসহায়তাসহ সরকারি নিয়মানুযায়ী সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’