মেয়ের নির্যাতনের বিচার চাওয়ায়, চুরির মামলায় ফাঁসলেন বাবা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৬ মে,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৫৩ পিএম, ৪ জানুয়ারী,শনিবার,২০২৫
ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর বাবা ফিরোজ মিয়া
ফাহমিদা আক্তার শ্রেয়ার (ছদ্মনাম) বয়স ১১ বছর। বাবা ফিরোজ মিয়া চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুরের একটি চা-বাগানে শ্রমিকের কাজ করেন। শ্রেয়া স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।
গত পহেলা জানুয়ারি ছিল দেশ জুড়ে বই উৎসব। তাই নতুন বই আনার জন্য সেদিন স্কুলে গিয়েছিল শ্রেয়া। স্কুল থেকে বের হয়ে কিছুটা সামনে যাওয়ার পর একটি কালভার্টের ওপর শ্রেয়ার পথ আগলায় স্থানীয় দুই বখাটে যুবক রুবেল ও মিজান। একথা সেকথার পর একপর্যায়ে রুবেল শ্রেয়াকে নতুন জামা কিনে দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। রুবেলের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে নতুন জামার আশায় তার মোটরসাইকেলের পেছনে চড়ে বসে শ্রেয়া।
শ্রেয়াকে মোটরসাইকেলে করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় রুবেল। সেখানে তাকে ১১ দিন আটকে রেখে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে রুবেল। এদিকে, মেয়েকে বাড়ি ফিরতে না দেখে ফিরোজ মিয়া ছুটে যান ভুজপুর থানায়। সেখানে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন তিনি। ফিরোজ মিয়ার অভিযোগ, পুলিশ তার মেয়েকে উদ্ধারের কোনো প্রচেষ্টাই নেয়নি।
এর দুদিন পর ফিরোজের মোবাইলে ফোন করে রুবেল জানায়, শ্রেয়া তার জিম্মায় আছে এবং তারা চট্টগ্রামের একটি বোর্ডিংয়ে আছে। রুবেলের ফোন পেয়ে ফিরোজ আবার ছুটে যান থানায়। তার উদ্দেশ্য ছিল রুবেলকে আসামি করে অপহরণ মামলা করার।
ফিরোজ মিয়া জানান, ভুজপুর থানায় তার এই মামলা নেওয়া হয়নি। থানা কর্তৃপক্ষ তাকে আদালতে গিয়ে মামলা করার পরামর্শ দেয়। ৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের নারী শিশু আদালতে গিয়ে মামলা করেন ফিরোজ মিয়া। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলার তদন্তভার দেয়। ১২ জানুয়ারি ভুজপুরের ঝঙ্কার এলাকায় রাস্তার ওপর থেকে শ্রেয়াকে উদ্ধার করে পিবিআই। এরপর চমেক হাসপাতালে স্বাস্থ্যপরীক্ষা শেষে তাকে রাখা হয় নগরীর ডবলমুরিং এলাকায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে। এরপর আদালতে জবানবন্দি গ্রহণ শেষে শ্রেয়াকে তার বাবা-মার জিম্মায় দেওয়া হয়। শ্রেয়ার বাবা বলেন, পুলিশ সময়মতো ব্যবস্থা নিলে হয়তো আমার মেয়েটি রক্ষা পেত।
সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বিলম্ব করেছে অভিযোগ করে ফিরোজ মিয়া বলেন, তারা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আমাকে খুবই চাপের মধ্যে রেখেছে। আসামিদের কথা মতো কাজ না করায় গত সপ্তাহে আমার বিরুদ্ধে মোটরসাইকেল চুরি ও দোকান ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা করেছে। গত ১০ মে তারা আমার মেয়েকে আবার অপহরণের চেষ্টা করেছে। এ ঘটনায় আমি থানায় অভিযোগ করেছি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিদর্শক পরিতোষ বলেন, ধর্ষণ মামলার প্রতিবেদন মেডিক্যাল রিপোর্ট ছাড়া দেওয়া যায় না। মেডিক্যাল রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রতিবেদন তৈরি করে আদালতে জমা দিয়েছি।
পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান ইত্তেফাককে বলেন, গত বৃহস্পতিবার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে মেডিক্যাল রিপোর্টে বলা হয়েছে। অপরাধী যেই হোক তাকে যথাসময়ে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
শ্রেয়ার বাবার অপহরণের মামলা না নিতে চাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে ভুজপুর থানার ওসি হেলাল উদ্দিন বলেন, মেয়ের বাবা মামলা করার জন্য থানাতেই আসেননি। তিনি আদালতে মামলা করেছেন। আদালতের আদেশ অনুযায়ী পিবিআই এই মামলার তদন্ত করছে।
চট্টগ্রামের জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক ইত্তেফাককে বলেন, পুলিশকে অবশ্যই জনবান্ধব হতে হবে। এক্ষেত্রে কারো কর্তব্যে অবহেলার বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হলে তার বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।