‘আমি কোনো মামলায় যামু না, কারন আমি গরিব মানুষ’ : নাহিদের বাবা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২১ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৩৩ এএম, ২ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৫
একবছর প্রেমের সম্পর্কের পর মাত্র ছয়মাস আগেই ডালিয়াকে বিয়ে করে বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই ভাইয়ের সংসারের হাল ধরেছিল রাজধানীর নিউমার্কেটে ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত নাহিদ।
সংসার চালাতে বেছে নিয়েছিল কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারি ম্যানের কাজ। কামরাঙ্গীরচরে ছোট্ট এক রুমের মধ্যে সাজিয়েছিল সুখের সংসার। কিন্তু তাঁর অকাল মৃত্যুতে এখন দিশেহারা পরিবার।
নিহত নাহিদ ও তার স্ত্রী নববধূর হাতের মেহেদির রং এখনও মুছে যায়নি! কিন্তু এক নিমিষেই কর্পূরের মত নিমিষেই উড়ে গেল তার সব স্বপ্ন, ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা।
বুধবার (২০ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে নাহিদের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলের মর্গ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়ি নেওয়া হয়। বাসায় ফেরার পর বাবা মো. নাদিম হোসেন জানিয়েছেন নাহিদের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা করবেন না তিনি।
নাহিদের বাবা বলেন, আমরা অসহায় মানুষ। আমার ছেলে একটা ঘটনায় মারা গেছে। আমি চাই দোষীদের বিচার হোক। কিন্তু আমি মামলা করুম না। কোনো মামলায় যামু না। আমি গরিব মানুষ।
কেউ কোনো প্রকার সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ আসে নাই, কিছু বলেও নাই। তবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আসছিলেন। তিনি নাম-ঠিকানা নিয়ে গেছেন। বলেছেন- ‘দেখবো কী করা যায়’। এছাড়া কোনো সহায়তা কেউ করে নাই। কোনো বিচারের আশ্বাসও কেউ দেয় নাই।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নাহিদের বাবা বলেন, ‘নাহিদ আমার বড় ছেলে। ওর বয়স ১৮। ছয় মাস আগে বিয়ে করেছে। আমরা গরিব মানুষ। অভাবের সংসারে টানাটানি লেগেই থাকে। পয়সার অভাবে ছেলেটাকে বেশিদূর পড়াতেও পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়েছে নাহিদ। এরপরেই তাকে কাজে দিয়ে দেই। ১০ বছর বয়সে ও নিউ সুপার মার্কেটে কাপড়ের দোকানে কাজ শুরু করে। অল্প বেতন পেতো। তবুও তখন থেকেই আমার হাতে পয়সা দিতো।’
স্থানীয়রা জানান, নাহিদ খুব স্বাভাবিক জীবনযাপন করত। কাজে যেত আবার ফিরে আসত। নাহিদের বাবা-মা ঋণ নিয়ে তাঁর নানীর কাছ থেকে পাওয়া ছোট্ট একটু জায়গায় কোনোরকমে একটা বাড়ি করেছিলেন। বাড়িটা কোনো রকমে দাঁড়িয়ে আছে। নাহিদের বাবার টাকায় শোধ করা হতো সেই ঋণের টাকা। আর নাহিদের আয়েই চলত তাঁর পরিবার।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) কামরাঙ্গীরচরে বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। এসময় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত হন নাহিদ। ময়নাতদন্তে তার শরীরে বেশকিছু ক্ষত পাওয়া গেছে। এতে স্পষ্ট তার ওপর হামলা হয়েছিলো।
প্রসঙ্গত, এর আগে সোমবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ। যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।