‘হাটে আইসা দেখি সব মাগনা’
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৪ এপ্রিল,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৪৪ পিএম, ৭ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২৫
‘বাজারো অততা (এত) জিনিসের দাম, কিনার কমতা (ক্ষমতা) নেই। আর এর মধ্যে হুনি মাগনা সব দিবো। হুইন্যা বিশ্বাস অইছিলো না। হুমা আইয়া দেহি আমারে বেগ ভইর্যা সবই দিছে।
এ যেন আসমান আতো (হাত) পাইছি। ’ বেশ কিছু দিন ধরে অর্থের অভাবে বাজার না করা সামছুন্নাহার (৬০), কমলা বেগম, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী একরামুল হক (৩২) ফ্রি হাটে এসে বিনা টাকায় ইফতারিসহ প্রয়োজনীয় বাজার পেয়ে খুশিতে কথাগুলো বলেন। এ রকম ঘটনা আজ রবিবার ঘটেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ী এলাকার উত্তর বনগাঁও রেলক্রসিং সংলগ্ন ইরা পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড অটোগ্যাস ফিলিং স্টেশনের কাছে রমজানের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্থাপিত নতুন একটি বাজারে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ‘মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংগঠন সামর্থ্যহীন ও অসহায়দের মাঝে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী ফ্রিতে বিক্রির জন্য দোকান খুলেছে। যাকে ‘ফ্রি হাট’ বলা হচ্ছে। আজ রবিবার সকালে হাটটির উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক এনামুল হক। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজা জেসমিন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাটের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ৩০০ পরিবারের মধ্যে বিভিন্ন রকম সবজি এবং ইফতারসামগ্রী বিনা মূল্যে বিক্রয় করা হয়।
ওই ফাউন্ডশনের কো-অর্ডিনেটর আজিজুল ইসলাম পলাশ জানান, হাটের কার্যক্রম রমজান মাসে চার সপ্তাহ চলবে। এতে আর নতুন নতুন পণ্য দেওয়া হবে।
আঠারবাড়ী ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রাম থেকে বিনা মূল্যের হাটে এসেছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী একরামুল। তিনি পেয়েছেন চার-পাঁচ পদের সবজি, একটি তাজা মাছ ও ইফতারের জন্য খেজুর ও মুড়ি।
শারীরিক প্রতিবন্ধী রিয়া মনি (১৯) ফ্রি জিনিস পেয়ে বলেন, 'এই জিনিস দিয়া কয়েক দিন চলব। টেহা দিয়া বাজার করণ লাগত না। ’
মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশনের সংগঠক এ কে এম হাসানুজ্জামান মৃদুল বলেন, করোনা সংক্রমণের সময়ে বিপাকে পড়া হতদরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়ে এই সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ। এর পর থেকে প্রতি রমজানের শুরুতেই কার্যক্রম চলে আসছে।
কর্মসূচি সমন্বয়ক মো. আজহারুল ইসলাম পলাশ বলেন, হাটের কার্যক্রম রমজান মাসের পরবর্তী তিনটি বারে চলবে। চাহিদা ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফ্রি সামগ্রীতে নতুন নতুন পণ্য যুক্ত হতে পারে।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক বলেন, প্রত্যেক জায়গায় এ ধরনের ফ্রি হাট বসিয়ে লোকজনকে সহায়তা করার জন্য ধনাঢ্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা দরকার। তাহলেই দারিদ্র্যমুক্ত ছাড়াও অসহায়রা দ্রব্যমূল্যের সংকটের মুখে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজা জেসমিন বলেন, কিশোর, তরুণ ও যুবকরা যদি এভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রমে এগিয়ে আসে তাহলে দরিদ্র ও অসহায়দের সহায়তা ছাড়াও নিজেরা ফিরতে পারবে অন্যায় ও অপরাধের কবল থেকে।