পাথরের মতো দুই হাতের আঙুল শক্ত হয়ে যাচ্ছে নুরুল আমিনের
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৯ মার্চ,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১২:১২ পিএম, ৪ জানুয়ারী,শনিবার,২০২৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নুরুল আমিনের দুই হাতের আঙুলগুলো হঠাৎ করেই শক্ত হয়ে গেছে পাথরের মতো। দেখতেও অনেকটা কালচে রঙের, যেন আগুনে আগুনে পোড়ে গেছে! তাই নুরুল আমিন স্বাভাবিক কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না।
চিকিৎসকরা বলছেন, ৩৮ বছর বয়সী নুরুল আমিন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ভাস্কুলাইটিস রোগে আক্রান্ত। আর এটি বিরল ব্যাধি। এ রোগের কারণেই নুরুল আমিনের দুই হাতের আঙুল শুকিয়ে কালচে রঙের হয়ে গেছে।
গত জানুয়ারি মাস থেকে হঠাৎ করে দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ছাড়া বাকি আট আঙুলে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করতে থাকেন নুরুল আমিন। ধীরে ধীরে আঙুলগুলোর রঙ হয়ে উঠে কালচে। সেই সঙ্গে পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায় আঙুলগুলো। একটি হাতের আঙুল দিয়ে অন্য হাতের আঙুলে স্পর্শ করতে গেলেই ঠক করে শব্দ হয়। এখন ছোট-খাটো কাজের জন্যও অন্যের সাহায্য নিতে হয় নুরুল আমিনের।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের আমতলী গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিন দোকানে দোকানে স্টেশনারি সামগ্রী ডেলিভারি করতেন। স্ত্রী এবং তিন মেয়ে নিয়েই তার অভাবের সংসার। স্টেশনারি পণ্য ডেলিভারি করে যা আয় হতো, তা দিয়ে কোনোরকম সংসার চালাতেন। কিন্তু রোগাক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই কাজ বন্ধ করে বাড়িতে বসে আছেন তিনি। তাই অনেকটা মানবেতর জীবনযাপন করছেন নুরুল আমিন।
এ বিষয়ে নুরুল আমিন বলেন, সারা রাতদিন আঙুলের ব্যথা সহ্য করতে না পেরে এবং আঙুলগুলো পাথরের মতো শক্ত হয়ে যাওয়ায় প্রথমে আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে চিকিৎসকের কাছে যায়। কিন্তু ডাক্তার বলে দিলেন আমার রোগের চিকিৎসা ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে হবে না। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকায় যান।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের রিউমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আবু শাহীন পরীক্ষা করে জানান, তিনি বিরল ব্যাধি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ভাস্কুলাইটিস রোগে আক্রান্ত। এ রোগের চিকিৎসাও অনেক বেশি ব্যয়বহুল। এই রোগের কারণে আমি এখন কোনো কাজই করতে পারছি না। আমাকে ভাতও খাইয়ে দিতে হয়। অন্যের সাহায্য ছাড়া কোনো কিছুই করতে পারি না। স্টেশনারি পণ্য ডেলিভারির যে কাজ করতাম, সেটিও এখন বন্ধ। বাধ্য হয়েই ঘরে-বসে থাকতে হচ্ছে। তেমন সহায় সম্পদও নেই যে নিজের চিকিৎসা করাব। ১৫ দিন পর পর ঢাকায় গিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করতে হচ্ছে। পূর্ণ চিকিৎসার জন্য ৫-৬ লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এত টাকা আমার পরিবারের জোগান দেওয়া সম্ভব না।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়েগুলোকে একটু আদরও করতে পারি না। হৃদয়বানদের কাছে আমার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা চাইছি। সবার সহযোগিতায় আমি সুস্থ হয়ে পরিবার নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচতে চাই।
এ বিষয়ে নুরুল আমিনের মেয়ে নাজিফা বলেন, আমার বাবা আমাকে অনেক আদর করেন। কিন্তু এই রোগের জন্য কোলে নিতে পারেন না। বাবার জন্য আমার অনেক খারাপ লাগে। আমার বাবার চিকিৎসার জন্য আমরা সবার সহযোগিতা চাই।
নুরুল আমিনের স্ত্রী সাহিদা বেগম জানান, তার স্বামীর রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন তারা। ভিটে-বাড়ি অবশিষ্ট আছে। স্বামীর চিকিৎসার জন্য সরকার এবং বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ফাইজুর রহমান বলেন, নুরুল আমিনের হাতের রক্তনালী অতিমাত্রায় ইনফেকশন হয়ে নষ্ট হয়ে যায়, তখনই এরকম অবস্থা হয়। এটি বিভিন্ন কারণেই হয়ে থাকে। এটি একটি বিরল রোগ। এর চিকিৎসাও ব্যয়বহুল।