জীবন দিয়েও শিশুটিকে বাঁচাতে পারলেন না দফাদার এরফান মিয়া
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৭ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৫৮ এএম, ৭ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২৫
দফাদার এরফান মিয়া নিজের প্রাণ দিয়েও শিশু আমিন মিয়াকে বাঁচাতে পারলেন না। দুজনই চলে গেলেন পরপাড়ে। এমনি এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে ভৈরব শহরে আসার পথে উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী গ্রামে আজ বুধবার (১৬ মার্চ) দুপুরে মর্মান্তিক এই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলেন, মানিকদী চুমুরী বাজার এলাকার এরফান মিয়া। তিনি গজারিয়া ইউনিয়ন গ্রাম পুলিশের দফাদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আর নিহত শিশু আমিন মিয়া গজারিয়া গ্রামের মুর্শিদ মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, সাপ্তাহিক হাজিরা দিতে প্রতি বুধবার থানায় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে আসেন গ্রাম পুলিশের সদস্যরা। প্রতি সপ্তাহের মতো আজও বেলা ১১টার দিকে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে চালকের আসনে বসিয়ে শহরে আসছিলেন দফাদার এরফান মিয়া। অটো রিকশাটি গজারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অতিক্রম করার সময় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আমিন মিয়া দৌড়ে সড়ক পার হতে গেলে শিশুটিকে বাঁচাতে গিয়ে অটো রিকশাটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এরফান মিয়া। ফলে অটোরিকশাটি স্কুল ভবনের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লাগে। এতে দফাদার এরফান মিয়াসহ শিশু আমিন মিয়া গুরুতর আহত হয়। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দফাদার এরফান মিয়াকে মৃত বলে ঘোষণা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক। এ ছাড়াও গুরুতর আহত শিশু আমিন মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে-ও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এই মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম শাহারিয়ার জানান, আসলে দফাদার এরফান মিয়া একজন ভালো মনের মানুষ ছিলেন। মানুষের উপকার করার চেষ্টা করতেন। তিনি আরও জানান, ভালো আচার-ব্যবহারের কারণে একবার তিনি ঢাকা বিভাগীয় পর্যায়ে পুরস্কার লাভ করে ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।
ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম শাহারিয়ার আরও বলেন, মৃত্যুর আগেও প্রাণ দিয়ে একটি শিশুকে বাঁচাতে চেয়ে ছিলেন। সত্যিই সমাজে এমন মানুষ বিরল। আমরা পরিষদের পক্ষ থেকে নিহত দফাদার এরফান মিয়ার দাফন কাফনের ব্যবস্থা করছি। এ ছাড়াও আমার তার পরিবারের সুখে-দুঃখে পাশে থাকব এবং প্রয়োজনীয় আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করবো।
এ প্রসঙ্গে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ জানান, শুনেছি সাপ্তাহিক হাজিরা দিতে আসার পথে একটি শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে অটো রিকশার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুজনই নিহত হয়েছে। আমরা তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। তিনি আরও জানান, দফাদার এরফান মিয়া নিহতের বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছি। তার পরিবারের জন্য কী করা যায়, তা ভাবছেন।