যেভাবে কোরআনের হাফেজ থেকে দুর্ধর্ষ ডাকাত বিপ্লব
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩ ফেব্রুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০১:১৪ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
আবু জাফর বিপ্লব
পবিত্র কোরআনের ২৭ পারা পর্যন্ত মুখস্থ করেছিলেন তিনি। এরপর মাদ্রাসা থেকেই পালিয়ে যান। কাজ নেন একটি হোটেলে। কিন্তু পরিবারের লোকজন জানতে পারায় তাকে আবার সেখান থেকে নিয়ে এসে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। ২০০২ সালে এসএসসি পাস করার পর কোরআনের বাকী তিন পারা মুখস্থের জন্য আবারও সাতক্ষীরার নলতা দারুল উলুম মাদ্রাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
মাদ্রাসা থেকে আবারও পালিয়ে চলে আসেন ঢাকায়। কাজ করেন বাসের হেলপার হিসেবে। এরই মধ্যে শিখে নেন বাস চালনাও। পরে জড়িয়ে পড়েন দুর্ধর্ষ ডাকাতিতে। নেমে পড়েন ইয়াবা ব্যবসায়ে। বলছি দুর্ধর্ষ ডাকাত আবু জাফর বিপ্লবের কথা।
সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় বাসে যাত্রীবেশে ডাকাতির ঘটনায় আবু জাফর বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সাত সহযোগীর সঙ্গে তাকেও চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ডিবি পুলিশকে কোরআনের হাফেজ থেকে দুর্ধর্ষ ডাকাত হওয়ার ঘটনা শুনিয়েছেন এই বিপ্লব।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহাদাত হোসেন সুমা বলেন, ‘বিপ্লবসহ ডাকাতি মামলার আসামিরা একাধিকবার ডাকাতি-ছিনতাই বা খুনের মামলায় জেলে ছিল। প্রতিবার জেল থেকে বেরিয়ে আবারও আগের পেশায় গিয়ে একই কাজ করেছে তারা। চক্রটির সব সদস্যকে ধরতে অভিযান চলছে। দ্বিতীয় দফায় অভিযানে আরও ছয় জনকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
বিপ্লব জানান, ‘সাতক্ষীরা সদরের থানীপুর এলাকায় তার গ্রামের বাড়ি। বাবা মৃত জাবেদ আলী। নয় ভাইবোনের মধ্যে বিপ্লব সবার ছোট। বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার পর একপর্যায়ে একটা বাসেই ঝাড়ু ও ধোয়ামোছার কাজ নিই। সেখান থেকে ধীরে ধীরে বাসের হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করি। একইসঙ্গে বাস চালানো শিখেছি। টানা সাত বছর বাড়িতে কোনো যোগাযোগ করিনি। কিন্তু বাস চালাতে গিয়েই অসৎ সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি।’
গাড়ি চালাতে গিয়েই ২০১০-১১ সালে বিপুল ডাকাতের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। বিপুল বর্তমানে ভারতে পালিয়ে আছে। সেই বিপুলের হাত ধরে বাস নিয়ে ডাকাতির কাজ শুরু করেন তিনি। বেশিরভাগ সময় গাড়ির চালক হিসেবেই কাজ করতেন। ডাকাতির পাশাপাশি মাদকাসক্তও হয়ে পড়েন।
২০১৬ সালে একটি জোড়া খুনের মামলায় প্রথম পুলিশের হাতে ধরা পড়েন বিপ্লব। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাস নিয়ে ডাকাতি করতে গিয়ে নিজ দলের সদস্যদের মধ্যে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে মারামারি শুরু হয়। সবাই মিলে আবীর ও শাকিল নামে তাদেরই দুই সহযোগীকে গলা টিপে হত্যা করে। এরপর সেই লাশ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ফেলে আবারও ঢাকায় আসেন বিপ্লব। এ ঘটনার আড়াই মাস পর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি।
দেড় বছর জেল খাটার পর জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও পুরনো সহযোগীদের সঙ্গে ডাকাতির কাজ করতে থাকেন। ২০১৯ সালে সাভার থানা পুলিশ তাকে দেড় হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে। দেড় বছর কারাভোগ করে গত বছরের মাঝামাঝি জেল থেকে বের হন তিনি।
এরপর শুরু করেন চিংড়ি ব্যবসা। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ভালোই চলত সংসার। কিন্তু একদিন পুলিশ পরিচয়ে আরেক দল ডাকাত তাকে তুলে নিয়ে পুঁজির দেড় লাখ টাকা নিয়ে নেয়। শেষে নিজে আবারও ডাকাতির পুরনো পেশায় ফিরে যান। সবশেষ গাবতলী থেকে একজন ব্যবসায়ীকে তুলে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন তারা। এর আগে ২০ জানুয়ারি উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে যাত্রীদের তুলে নিয়ে আলোচিত ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করেছেন তিনি।