নৌকায় ভোট দেওয়ায় ৭ পরিবার একঘরে!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৮ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:০২ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে নিজগ্রামের প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে সাত পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১৭ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে এ তথ্য জানা যায়। এর আগে দোহালিয়া ইউনিয়নের রাজনপুর গ্রামের এ ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদ্যসমাপ্ত দোহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর মিয়া। নুর মিয়ার প্রতীক ছিল মোটরসাইকেল। নিজগ্রামের প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার মিয়াকে ভোট দেওয়ায় নুর মিয়ার নিজগ্রাম রাজনপুরে এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ সাত পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়েছে।
একঘরে করে রাখা পরিবারের লোকজন হচ্ছেন, রাজনপুর (আংগাঙ) গ্রামের সফিক মিয়া (৩৫), জুবের হেলাল (৪০), হাবিবুর রহমান (৩৫), বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসন্দর আলীর ছেলে লুৎফর রহমান (২৮), আকরামুল হক সোহেল, আনোয়ার হোসেন মিষ্টার (৪৫) ও আলী রাজ সানীয়া (২৫)। গেল শনিবার রাতে রাজনপুর গ্রামের খোকন মিয়ার মাঠে সৌদি আরব প্রবাসী ছমির উদ্দিনের আয়োজনে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রাজনপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন মিষ্টার বলেন, গ্রামের প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ায় গ্রামবাসী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ জন্য আমরা লজ্জাবোধ করছি। আমাদের সঙ্গে সবার কথাবার্তা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা হতাশ। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
বৈঠক উপস্থিত থাকা রাজনপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিন বলেছেন, গ্রাম-পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। তাদের সঙ্গে কেউ কথাবার্তা বললে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে।
তবে প্রবাসী ছমির উদ্দিন বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, একঘরে করে রাখার বিষয়টি সঠিক নয়। তাদের সঙ্গে কেউ যাতে ঝগড়াঝাটি না করে এ জন্য বৈঠক করে সবাইকে সতর্ক করেছি আমরা।
বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী নুর মিয়ার মুঠোফোনে বার বার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। দোয়ারাবাজার থানার অফিসার (ওসি) দেব দুলাল ধর বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কাউকে একঘরে করে রাখার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাংশু কুমার সিংহ জানান, ঘটনাটি শোনার পর পরই যাদের একঘরে করে রাখা হয়েছে, তাদের আজ বুধবার (১৭ নভেম্বর) অফিসে ডাকা হয়েছে। তাদের বক্তব্য শুনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, দোহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী করেন। তাদের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার মিয়া আনু নৌকা প্রতীকে ২ হাজার ৭৯৬ ভোট পান৷ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীমুল ইসলাম আনারস প্রতীকে ৫ হাজার ৬২৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর মিয়া মোটরসাইকেল প্রতীকে ৪ হাজার ২৪৯ ভোট পান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক চশমা প্রতীকে ১ হাজার ১৬ ভোট পান।