হলে নয়, পরীক্ষার্থীর জায়গা হলো মর্গে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৪৬ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ফুলবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদ মাতুব্বরের আর এসএসসি পরীক্ষা দেয়া হলো না। রোববার পরীক্ষার হলের পরিবর্তে তার লাশ পৌঁছেছে হাসপাতালের মর্গে। আগের দিন রহস্যজনকভাবে তার মৃত্যু হয়। ওই শিক্ষার্থী বিষপান করেছে বলে পুলিশ দাবি করলেও তার পরিবারের দাবি, হৃদরোগে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার।
আসাদ মাতুব্বর একই উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের বিষ্ণুদী গ্রামের আবুল কালাম মাতুব্বরের ছেলে। গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এক বিষয়ে ফেল করে। এবার সে ওই বিষয়ে রেফার্ড পরীক্ষার্থী ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে বাড়ির পাশে ক্ষেত থেকে ধান কেটে ফেরার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে আসাদ। তাকে প্রথমে নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। এরপর অবস্থার গুরুতর অবস্থায় তাকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। ফরিদপুরে আনার পথে সশা গ্রামের ব্রিজের কাছে পৌঁছানোর পর তার মৃত্যু হয়।
এদিকে পরিবারের লোকেরা আসাদের মৃত্যুকে হৃদরোগজনিত কারণ বলে লাশ বাড়িতে নিয়ে দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়। অন্য দিকে সালথা থানার পুলিশ খবর পেয়ে শনিবার রাত ৮টার দিকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসাদের মৃত্যুর পর এ নিয়ে প্রতিবেশীদের একটি পক্ষের মাঝে গুনজন চলতে থাকে। তাদের ভাষ্য, সকালে ক্ষেতে যাওয়ার আগেই বিষ খায় আসাদ। এরপর ক্ষেত থেকে ফিরলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারা বলছে, আসাদ অপমান ও অভিমানে বিষ খেয়েছে। ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে বল্লভদী ইউপি নির্বাচনে তার সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয়ের পর বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের উল্লাসে তার বাধা দেয়ার কারণ।
তারা জানান, বৃহস্পতিবার ইউপি নির্বাচনে আসাদ ছিল বিষ্ণুদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রতীক নুরুল ইসলামের পোলিং এজেন্ট। এ নির্বাচনে ২২ ভোটে হেরে যান নুরুল ইসলাম। পরের দিন আনারস প্রতীকের বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী খন্দকার শাহিনের সমর্থকেরা বিজয় মিছিল বের করে আসাদের বাড়ির পাশের স্কুল মাঠে উল্লাস করতে থাকে। আসাদ তাদের পরীক্ষার সময় এমন হৈ চৈ না করার অনুরোধ জানালে তাদের সাথে কথা কাটাকাটি ও একপর্যায়ে গালিগালাজ করে। এতে ক্ষুব্ধ আসাদ পরের দিন সকালে অভিমানে বিষ খায়।
তবে এ কথা অস্বীকার করে আসাদের বোন আম্বিয়া বেগম (২৫) বলেন, আসাদের আগে থেকেই হৃদরোগের সমস্যা ছিল। শনিবার সকালে সে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। আসাদ বিষ খায়নি জানিয়ে তিনি তার ভাইয়ের লাশটি কাটাছেঁড়া না করার অনুরোধ করেছিলেন।
আম্বিয়া বলেন, পুলিশের হাতে পায়ে ধরেছি লাশটি কাটাছেঁড়া না করার জন্য। তবু তারা শোনেনি। আমাদের কথা শোনার কেউ নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে নির্বাচনে বিজয়ী নুরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে কয়েকবার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোনটি বন্ধ করে দেন।
সালথা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: আশিকুজ্জামান বলেন, বিষপানে আসাদের মৃত্যুর খবর পেয়ে রাতে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। রোববার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।