কান্নার শব্দ বন্ধে মুখে পুরে দেওয়া হতো গামছা
গৃহকর্মী শিশুটির সারা শরীরে খুনতির ছ্যাঁকা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩১ অক্টোবর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:২৩ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার জান্নাতুল নামে ৯ বছরের এক শিশুকন্যাকে খুনতি দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কান্নার শব্দ যাতে বাইরে না আসে সে জন্য মুখের মধ্যে গামছা পুরে দিত গৃহকর্তার স্ত্রী। বাড়িতে এসে নির্যাতনের এমন বর্ণনা দিয়েছে শিশুটি। সে রাজধানীর খিলক্ষেতের এক বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করত।
জানা যায়, উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের (ক্যানাল পাড়ার) জান বক্স দ্বিতীয় বিয়ে করে বাড়ি ছাড়েন। প্রথম স্ত্রী নুরজাহান খাতুন (৪৫) ২ মেয়ে ও ১ ছেলে নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন। অভাবের কারণে বাধ্য হয়ে ৯ বছরের মেয়ে জান্নাতুল খাতুন সাঁথিয়াকে রায়েকমারী গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মিঠুর ঢাকার বাসায় কাজের জন্য পাঠান। সেখানে মিঠুর স্ত্রী শাপলা খাতুন প্রায়ই জান্নাতুলকে মারপিট ও গরম খুনতির ছ্যাঁকা দিত। ৯ মাস পর গত ২৯ অক্টোবর তাকে বাসে ঢাকা থেকে পাবনায় পাঠানো হয়। মিঠুর মা মায়া খাতুন জান্নাতুলকে বাড়িতে পৌঁছে দেন।
সরেজমিন জান্নাতুলের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, তার দুই হাত, পিঠে, মুখে নির্যাতনের চিহ্ন। খুনতির ছ্যাঁকার দাগ এখনো শরীরের সঙ্গে মিশেনি। জান্নাতুল জানায়, কোনো কাজ করতে বা নির্দেশ পালন করতে বিলম্ব হলেই মিঠুর স্ত্রী শাপলা শুরু করত অত্যাচার। শব্দ যাতে বাইরে না যায় তার জন্য মুখের মধ্যে গামছা পুরে দিত। বাড়ি আসতে চাইলে তারা নিষেধ করত। মায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে দিত না। বাড়িতে এসে নির্যাতনের কথা কাউকে যেন না বলি সেজন্য মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছে। এমন কি শাপলা বলে দিয়েছিল বাড়িতে এসে আমি যেন বলি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলাম।
জান্নাতুলের মা নুরজাহান জানান, মিঠুর মা সাঁথিয়ার ক্ষেতুপাড়া আব্দুস সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মায়া ম্যাডাম ভরণ পোষণ ও বিয়ের চুক্তিতে বাসার কাজের জন্য আমার মেয়েকে ঢাকার খিলক্ষেতে তার ছেলের বাসায় পাঠান। মিঠুর মা মাসে মাসে ঢাকায় গেলেও অত্যাচারের কথা গোপন রেখেছিলেন। তিনি মেয়ের ওপর নির্যাতনের বিচার দাবি করেন।
এ ব্যাপারে মিঠুর মোবাইলে বার বার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। মিঠুর মা মায়া খাতুন জানান, জান্নাতুলকে আমি কাজের জন্য ঢাকা পাঠাই। সেখানে সে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে, বলেই ফোন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল ঢাকা হওয়ায় মামলা সেখানেই করতে হবে। আমি জান্নাতুলের পরিবারকে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত খিলক্ষেত থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন জান্নাতুলের মা।