হত্যার পর বাসের বক্সে ট্রাংকে লাশ এলো ঢাকায়, রহস্য উদঘাটন
হত্যার পর বাসের বক্সে ট্রাংকে লাশ এলো ঢাকায়, রহস্য উদঘাটন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৫৩ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
চট্টগ্রাম থেকে ঈগল পরিবহনের বাসে ট্রাংকের ভেতরে একটি অজ্ঞাতনামা নারীর লাশ ঢাকা গাবতলী বাস টার্মিনালে এসেছে। অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় ৬ বছর পর শনাক্ত করে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
অজ্ঞাতনামা লাশটি ২০১৫ সালের ৩ মে পাওয়া যায়। এরপর থেকেই লাশের পরিচয় শনাক্তে তদন্তে নামে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ঘটনার ৬ বছর পর লাশের পরিচয় শনাক্ত করে এবং এর সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
শনিবার (২৫ আগস্ট) পিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার।
তিনি বলেন, ৬ বছর আগে গাবতলী বাস টার্মিনালে পাওয়া লাশটি চট্টগ্রাম থেকে নিখোঁজ হওয়া শম্পা বেগমের (২৮)। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার দৌলতপুরে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল শুক্রবার কুমিল্লার ইপিজেড এলাকা থেকে রেজাউল করিমকে (৩৮) গ্রেপ্তার করে পিবিআই। গ্রেপ্তারের পর রেজাউল আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শম্পা হত্যার দায় স্বীকার করেন। রেজাউলের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার ইপিজেড এলাকায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রেজাউল পুলিশকে বলেন, তিনি ওই সময় নৌবাহিনীর করপোরাল (এখন অবসরে) পদে কর্মরত ছিলেন। ২০১৩ সালে খুলনা তিতুমীর নৌঘাঁটিতে কর্মরত থাকাকালীন একটি হাসপাতালে শম্পার সঙ্গে পরিচয় হয়। এর সূত্র ধরেই তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। রেজাউল চট্টগ্রামে বদলি হয়ে আসার পর শম্পাও সেখানে চলে আসেন। শম্পা কিছুদিন ফুফুর বাসা এবং একটি হোটেলে অবস্থান করেন। এরপর পাহাড়তলীতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে রেজাউলের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। তারা ২০১৫ সালের মে মাস পর্যন্ত ওই বাসাতে বসবাস করেছেন। তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য দেখা দিলে ২০১৫ সালের ২ মে রাতে শম্পার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেন রেজাউল। ঘটনা ধামাচাপা দিতে ট্রাংকে ভরে ঢাকাগামী ঈগল পরিবহনের একটি বাসে তুলে দেন শম্পার লাশ। এরপর তিনি শম্পার বাবা ইলিয়াস শেখকে জানান, শম্পাকে খুলনার বাসে তুলে দেওয়া হয়েছে। শম্পা বাবার বাড়িতে না পৌঁছলে তারা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন।
বনজ কুমার বলেন, শম্পার ভগ্নিপতি আবদুল মান্নান ২০১৫ সালের ১০ জুন চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানায় নিখোঁজের জিডি করেন। এর আগে ওই বছর ২৭ মে রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে নৌবাহিনী চট্টগ্রাম অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। বিভিন্ন অপরাধে সংশ্লিষ্টতার কারণে ২০১৯ সালে রেজাউলকে বাধ্যতামূলক অবসর পাঠায় নৌবাহিনী।
হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের বিষয়ে পিবিআই জানায়, মামলার তদন্তের শুরুতে চট্টগ্রাম মহানগর এবং জেলা এলাকার সব থানায় ২০১৫ সালে নিখোঁজ জিডিগুলোর অনুসন্ধান শুরু করে পিবিআই। তদন্তকারী কর্মকর্তা এক সপ্তাহ চেষ্টা করে ওই সময়ের কাছাকাছি প্রায় ১০–১২টি নিখোঁজ জিডির তথ্য পান। পিবিআই পাহাড়তলী থানার একটি জিডির সূত্রে জানতে পারেন, শম্পা বেগম ৩ মে থেকে নিখোঁজ। তদন্ত কর্মকর্তা নিশ্চিত হন দারুস সালাম থেকে উদ্ধার হওয়া লাশটি শম্পার। যে ট্রাংকে শম্পার লাশ পাওয়া গেছে, সেটি তাঁর বাবা ইলিয়াস শেখের।
ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, এটি একটি সূত্রবিহীন মামলা ছিল। শম্পাকে হত্যার পর লাশ প্রথমে ট্রাংকে রাখেন। সেই ট্রাংক রিকশায় করে চট্টগ্রাম এ কে খান মোড়ে ঈগল পরিবহনের কাউন্টারে নিয়ে আসেন। টিকিট কেটে বাসের বক্সে ট্রাংকটি তুলে দেন। চালকের সহকারীকে তিনি জানিয়েছিলেন, ভাটিয়ারী কাউন্টার থেকে টিকেটের যাত্রী উঠবে। কিন্তু পরবর্তী কাউন্টারে বর্ণিত যাত্রী না ওঠায় বাসটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা করে।
শম্পার বাবা ইলিয়াস শেখ বলেন, শম্পার সঙ্গে রেজাউলের বিয়ে হয়েছে বলেই তারা জানেন।