avertisements 2

ছিলেন দেড় হাজার টাকা বেতনের কেরানি, এখন শতকোটির মালিক 'চুনা খোরশেদ'

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২২ সেপ্টেম্বর, বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৫৫ এএম, ২৫ ডিসেম্বর, বুধবার,২০২৪

Text

একসময় মনোয়ারা জুট মিলের সামান্য কেরানি হিসেবে দেড় হাজার টাকা বেতনের কর্মচারী মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বনে গেছেন শতকোটি টাকার মালিক। রয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল কয়েকটি গাড়ি। দেখলে মনে হয়, যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন তিনি। 

আজ বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের রসুলবাগ এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ১৯৮৫-৮৬ সালে বর্তমানে বন্ধ হয়ে যাওয়া মনোয়ারা জুট মিলে সামান্য কেরানি হিসেবে দেড় হাজার টাকা বেতনের চাকরি নেন খোরশেদ ওরফে চুনা খোরশেদ। মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কয়েক মাস বেকার থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের সিআইখোলা এলাকায় ঢাকা লাইমস ও যমুনা লাইমস নামে দুটি চুনা কারখানার ব্যবসা শুরু করেন। সেই থেকে তার পথ চলা আর কখনো থেমে থাকেনি। অবৈধভাবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন এবং সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে আবাসিক এলাকায় চুনা কারখানা গড়ে তুলে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন তিনি। 

অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, রসুলবাগ এলাকায় শিমড়াইল মৌজায় ১১৩ দাগের বারো শতাংশ জমির ওপর প্রায় পনেরো কোটি টাকা ব্যয়ে দশতলা আলীশান ভবন, একই এলাকায় আল মদিনা মহিলা মাদরাসা সংলগ্ন প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের দশ কাঠা জমির ওপর টিনশেড ভবন, নয়াআঁটি এলাকায় ছয় কাঠা জমির ওপর পাশাপাশি দুটি পাঁচতলা ভবন, যার আনুমানিক মূল্য আট কোটি টাকা, রাজধানীর বাড্ডা ও মিরপুর এলাকায় দুটি ভবন রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকা, ওয়ারী এলাকায় রয়েছে দুই হাজার পাঁচশত স্কয়ারফুটের দুটি ফ্ল্যাট, যার আনুমানিক মূল্য ১০ কোটি টাকা, সিদ্ধিরগঞ্জের সিআইখোলা এলাকায় প্রায় দুই বিঘা জমির ওপর ঢাকা ও যমুনা লাইমস নামে দুটি চুনা কারখানা, যার আনুমানিক মূল্য ৩০ কোটি টাকা, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নতুন মডেলের প্রায় চার থেকে পাঁচটি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ কোটি টাকা ইত্যাদির মালিক তিনি। এ ছাড়া নামে-বেনামে বিভিন্ন এলাকায় জমাজমি, বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা মজুদ রয়েছে তার। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সামান্য কেরানি থেকে কিভাবে শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন তার সম্পদের হিসাব দেখলে বেরিয়ে আসবে মূল তথ্য। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নয়াআঁটি এলাকার কয়েকজন জানান, চাঁদপুর এলাকা থেকে অন্নের সন্ধানে খোরশেদ মিয়া শিমড়াইল এলাকা থেকে এসে লজিং মাস্টার হিসেবে থাকতেন। পরে পেটের দায়ে শিমড়াইল এলাকায় চা দোকানির কাজও করেছেন তিনি। পরে মনোয়ারা জুট মিলে কেরানি হিসেবে কাজ করতেন। মাত্র কয়েক বছরে চুনা ব্যবসা করে শত কোটি টাকার মালিক কিভাবে হয়েছেন তা বুঝতে পারছি না।

রসুলবাগ এলাকার বাসিন্দা আলেক চান কালের কণ্ঠকে জানান, খোরশেদ মিয়া ওরফে চুনা খোরশেদ, একসময় যার ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরাত, সে আজ সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন। চুনা কারখানায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ ও সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চুনা খোরশেদ এখন কোটিপতি। টাকার বিনিময়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তিন নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতির পদটিও বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি।

মুক্তিনগর এলাকার বাসিন্দা মালেকা বানু কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আরে বাবা, খোরশেদ একসময় লজিং মাস্টার ছিল, ভাত খাইতে ভাত পাইত না। সে নাহি এহন অনেক বাড়ি-গাড়ির মালিক, গাড়িত কইরা চলে। কিভাবে কী হইলো কিছুই বুঝবার পারলাম না।'       

শিমড়াইল এলাকার বাসিন্দা আব্দুল খালেক কালের কণ্ঠকে বলেন, মাত্র কয়েক বছরেই খোরশেদ এত টাকার মালিক কিভাবে বনে গেল আমরা এলাকাবাসী অবাক হয়েই গেলাম। শুনছি ওর চুনা কারখানার গ্যাস ও বিদ্যুৎ ও সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েই সে এই টাকার পাহাড় বানাইছে।

সিআইখোলা এলাকার বাসিন্দা রহিমা বানু জানান, কারখানাটির পাশেই আমাদের বাসা। কারখানার কালো ধোঁয়া, আগুনের তাপে আমাদের জীবন শেষ। ছেলে-মেয়ে নিয়ে বিপাকে আছি। প্রায়ই আমাদের ছেলে-সন্তানরা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শুধু কারখানাটির বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও আগুনের তাপে।

এ বিষয়ে খোরশেদ ওরফে চুনা খোরশেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি ব্যবসা করে অনেক পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে ধীরে ধীরে এ জায়গায় এসেছি। আমি কোনোভাবেই অবৈধভাবে ব্যবসা করে সম্পদের মালিক হইনি। 

নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আবাসিক এলাকায় চুনা কারখানায় আমরা আর কোনোভাবেই পরিবেশের ছাড়পত্র নবায়ন করছি না। এসব ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা থেকে চুনা কারখানাগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন মিয়া জানান, দলীয় ব্যানার ব্যবহার করে কেউ যদি অবৈধভাবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ চুরি করে ব্যবসা পরিচালনা করে, তার দায়ভার আমরা নেব না। এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমরা সুপারিশ করব। 

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুস্তাইম বিল্লাহ জনান, কয়েক বছরের ব্যবধানে একজন চুনা ব্যবসায়ী কিভাবে শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‍্যাব-১১-এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা কালের কণ্ঠকে জানান, সরকারি সম্পদ অপচয় করে কেউ যদি নিজের আখের গুছিয়ে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়, তাদের বিরুদ্ধে খুব শিগগিরই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2