বেঁচে ফেরা শ্রমিকের আর্তনাত ‘আমি দুনিয়ায় কেয়ামত দেখে ফেলছি’
বেঁচে ফেরা শ্রমিকের আর্তনাত ‘আমি দুনিয়ায় কেয়ামত দেখে ফেলছি’
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ জুলাই,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৫৩ এএম, ২৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
‘আমি দুনিয়ায় কেয়ামত দেখে ফেলছি। আমি আগুনে পুড়তে দেখা মানুষের কান্না শুনেছি। আমার অনেক সহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আমি দরি দিয়ে নামতে পেরেছি। এরকম মৃত্যু আমি কখনো দেখিনি। চোখের সামনে কত মানুষ আগুনের তাপে চিল্লাইছে। আমি বাঁচাবো না বাঁচবো কিছু বুঝতে পারিনি। খুব কঠিন একটা সময়। মনে হয়েছিল কেয়ামতের মাঠ।’ শুক্রবার রাতে সহকর্মীদের মৃত্যু নিয়ে আবেগভরা কথাগুলো বলছিলেন সেজান জুস কারখানার শ্রমিক মোহাম্মদ আলী।
এর আগে মোহাম্মদ আলী তার ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। পোস্ট এ তিনি লিখেন ‘বোনরে তোর মুখে আর কোনো দিন ভাইয়া ডাক শুনতে পারবো না। এভাবে যে আমাদের ছেড়ে চলে যাবি, তোর মৃত্যুটা মেনে নিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে বোন। আল্লাহ তোকে জান্নাত নসিব করুক।’ সহকর্মীর মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকে এমনি স্টাটাস দিয়েছে আরেক সহকর্মী।
মোহাম্মদ আলী তার ফেজবুকে আরেক সহকর্মীর ছবি পোস্ট করে লিখেন, ‘এইতো ভাই দু’দিন আগে, আমার মোবাইল দিয়ে ছবিটা তুলছিলেন। কে জানতো আপনার জীবনের শেষ ছবি হবে এটা। আপনার মুখটা আর কোনো দিন দেখতে পারবো না। আপনাকে আল্লাহ জান্নাত নছিব দান করুক।’
তিনি তার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ছবি পোস্ট করে লিখেন, ‘স্যার আপনার অকাল মৃত্যু কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। এই তো এক দিন আগে আমার সাথে হাঁসি মুখে কথা বলেছিলেন। আপনার হাঁসি মাখা মুখটাকে ভুলতে পারছি না। আল্লাহ যেনো আপনাকে জান্নাত নছিব করেন।’
স্থানীয় বাসিন্দা মো: রাসেল বলেন, আমার অনেক পরিচিত লোক এই কারখানায় চাকরি করে। বেতন-ভাতা নিয়ে রোববার-সোমবার আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার আগুন লেগে এত শ্রমিক মারা গেলো। এটা রহস্যজনক। আমার মনে হয় মালিক পক্ষ আগুন লাগিয়েছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার পর রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ফুডস ফ্যাক্টরিতে (সেজান জুস কারখানা) আগুন লাগে।
শুক্রবার সন্ধায় ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মজিবুর রহমান বলেন, ১৮টি ইউনিটের ১১০জন ফায়ারসার্ভিসকর্মীর প্রচেষ্টায় শুক্রবার দুপুর ১২টা ৩৫মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।