যৌতুক টাকা না পেয়ে স্বামী দিলেন স্ত্রীর মুখে সিগারেটের ছ্যাকা ও চুল কেটে
যৌতুক টাকা না পেয়ে স্বামী দিলেন স্ত্রীর মুখে সিগারেটের ছ্যাকা ও চুল কেটে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৮ জুলাই,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৩৭ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীর চুল কেটে গায়ে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিলেন স্বামী। বর্বর এই নির্যাতনের ঘটনা নেত্রকোনা জেলার সীমান্ত উপজেলা দুর্গাপুরের। গত মঙ্গলবার (৬ জুলাই) স্বামী খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে নেত্রকোনা আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন নির্যাতনের শিকার স্ত্রী মমতা আক্তার।
অভিযুক্ত খলিলুর উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের ভাদুয়া গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে। মামলার বাদী ভুক্তভোগী মমতা পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার গামারীতলা ইউনিয়নের রনসিংহপুর (কল্যাণপুর) গ্রামের খোরশেদ আলীর মেয়ে।
মামলায় স্বামী খলিলুর রহমানসহ তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগীর আইনজীবী আবুল হাসেম।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় আট বছর আগে খলিলুর রহমানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মমতা। বিয়ের ৪-৫ বছর পর থেকেই খলিলুর রহমান ব্যবসা শুরু করার নামে স্ত্রীর পরিবারের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে এক লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা পেয়েও ব্যবসা শুরু না করে, বিভিন্ন জায়গায় অহেতুক খরচ করে তা শেষ করে ফেলতেন। পরে পুনরায় টাকা আনার জন্য স্ত্রীর ওপর চাপ সৃষ্টি করতেন। স্ত্রী টাকা দিতে না পারায় একপর্যায়ে সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান স্বামী। সন্তানের প্রতি মায়ায় স্বামীর নির্দেশে সন্তান নিয়ে ভিক্ষা করতে ঢাকায় মোহাম্মদপুরে রাস্তায় নামেন মমতা। ভিক্ষার টাকা অল্প হওয়ায় সন্তুষ্ট হতে পারতেন না খলিলুর। শেষ পর্যন্ত স্ত্রীকে অসামাজিক কাজের সাথে লিপ্ত করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।
স্বামীর এমন কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মমতার ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতনের খড়গ। কদিন পরপর চাইতে থাকেন টাকা। না দিলে শুরু হয় মারপিট। এদিকে করোনায় কামাই রোজগার নেই বাড়িতে চলে আসেন সবাই।
আর ও্ই নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে বাড়তে একপর্যায়ে গত ২৬ জুন শনিবার রাতে নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। বেধড়ক মারধরের একপর্যায়ে মমতার শরীরের বিভিন্ন স্থানে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেন স্বামী।
তখন মমতা আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে খলিলুর কাঁচি দিয়ে মাথার লম্বা চুল কেটে দেন। মার খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মমতা। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
খবর পেয়ে মমতার পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।
মমতা খাতুনের বাবা খোরশেদ আলী বলেন, মেয়ে সুখে ঘর করবে বলে বিয়ে দিলাম। কিন্তু সুখ হলো না। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর নির্যাতন সইতে হচ্ছে তাকে। মেয়েকে স্বামীর নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে এ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রায় এক লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখনও আরও পঞ্চাশ হাজার টাকা চাচ্ছে। আমি কীভাবে দেব এত টাকা? এত টাকা আমার নেই। টাকার জন্য আমার মেয়েটাকে মেরে ফেলার অবস্থায় নিয়ে গেছে।
ভুক্তভোগী মমতা জানান, আমি স্বামীর নির্যাতন সইতে সইতে এখন প্রায় মৃত্যুর পথযাত্রী। এতদিন আমার সন্তানদের দিকে চেয়ে তাকে কিছুই বলিনি। তিনি যেভাবে বলেছিলেন আমি সেভাবে চলার চেষ্টা করেছি। তারপরও প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছি।
গত কিছুদিন আগে আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে সিগারেটের আগুন দিয়েছে পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার চুলগুলো কেটে দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই ।
গাঁওকান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মোতালেব জানান, ইতিঃপূর্বে বেশ কয়েকবার খলিলুরের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন দেনদরবার হয়েছে। আমরা তাকে বেশ কয়েকবার সতর্ক করেছি। কিন্তু সে সারাক্ষণ ঝামেলার মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখে। স্ত্রীকে নির্যাতনের বিষয়টি সামনে এসেছে, এটি পুরোপুরি সত্য। কতটুকু অমানুষ ও নির্দয় হলে সিগারেটের আগুনে একজন আরেকজনকে ছ্যাঁকা দিতে পারে। তার এই কর্মকাণ্ডে ইউনিয়নবাসী অতিষ্ট। আমরা চাই, তার সঠিক বিচার হোক ।
এ ব্যাপারে দুর্গাপুর থানার ওসি শাহ নুর এ আলম জানান, এখন পর্যন্ত আমরা কোনো অভিযোগের কপি হাতে পাইনি। অভিযোগের কপি হাতে পাওয়া মাত্রই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।