avertisements 2

লকডাউনের ৫ দিনে দিলিপের আয় ১৫ টাকা!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৫ জুলাই,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:১১ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪

Text

প্রতিদিনের মতো আজও বের হয়েছি লকডাউনের খবর সংগ্রহ করতে। আমার অভ্যাস, পথে-ঘাটে অসহায় বা ভিন্ন পেশার কাউকে দেখলেই তার সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করি। আজ বগুড়ার সোনাতলা রেলস্টেশনে বসে দেখলাম দিলিপ দাদাকে। শ্রী দিলিপ কুমার রবি দাস (৫২)। তাকে আগে থেকেই চিনি।

দিলিপ কুমার সোনাতলা রেলস্টেশনে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন। মাঝেমধ্যেই আড্ডা দিতাম স্টেশন চত্বরে। আমি প্রায় দশ বছর ধরে তাকে দেখছি। বয়স পঞ্চাশের ওপর। সব সময় হাসি-খুশি থাকেন। সবার সঙ্গে হেসেই কথা বলেন সব সময়। আজকের মতো এমন মলিন মুখ আগে কখনো দেখিনি।

দিলিপ কুমারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কী খবর দিলিপ দা? দিনকাল কেমন চলছে?’ দিলিপ কুমার হতাশার সুরে উত্তর দিলেন, ‘আর দিনকাল! কামাই-রোজগার নাই, কেমনে চলি?’ দিলিপ কুমারের কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলাম। তিনিও নিসংকোচে সব বললেন।

আগে তার দিনে ৩০০-৪০০ টাকা রোজগার হতো। তখন স্টেশনে গাড়ি চলতো। গাড়ি চললে তার সমস্যা হয় না। কাজ পেয়ে যান। জুতা সেলাই করেন, রং করে দেন। কিন্তু লকডাউনের ৫ দিনে তার মোট উপার্জন হয়েছে মাত্র ১৫ টাকা। বলেই কেমন যেন মলিন হয়ে গেল তার মুখ। ঘরে খাবার নেই। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কিভাবে চলবেন, সে কথা ভাবছেন।

কথা প্রসঙ্গে জানতে পারি, দিলিপের জমি-জমা নেই। অন্যের ১ বিঘা জমিতে ফসল ফলান। তা থেকে যা আসে; তা দিয়ে ৪ মাসের মতো খাবার হয়। জুতা সেলাইয়ের ওপরই নির্ভর করতে হয়। কন্যাসন্তান ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। কোনোমতে দিন এনে দিন খান। কন্যাসন্তানকে পড়াশোনা করান। মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। নাম দিপা রানী। তার স্বপ্ন, মেয়ে পড়াশোনা করে ভালো চাকরি করবে।

দিলিপ কুমারের বাড়ি সোনাতলা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আগুনিয়াতাইড় গ্রামে। ৫ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। ৫ ভাইয়ের মধ্যে ৩ জনই মারা গেছেন। বর্তমানে দিলিপ ও তার বড় ভাই আছেন। বড় ভাই গ্রামপুলিশে চাকরি করেন। বোনের বিয়ে হয়েছে। তিনি শ্বশুড়বাড়িতে। অভাবের সংসারে দিলিপ বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারেননি। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ হয়েছে।

দিলিপ কুমার বলেন, ‘ক্লাস ফাইভের পর থেকে আমি জুতা সেলাইয়ের কাজ করি। জীবনের ৪২টা বছর কাটায়ে দিলাম জুতা সেলাই করে। ঈশ্বরের কৃপায় ভালোই চলছিল। গত লকডাউনেও ১০০ টাকার মতো আসতো দিনে। এবার ৫ দিনে আয় মাত্র ১৫ টাকা। এই আয়ে কিভাবে সংসার চালাবো? বউ-বাচ্চা নিয়ে কিভাবে খাবো?’

দিলিপ কুমারের এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারিনি। চেয়ে থাকি তার দিকে। কিছু না বলে চলে যাই গন্তব্যে। ভাবতে থাকি, এমন হাজারও দিলিপ আছেন আশেপাশে। করোনার এ দুঃসময়ে বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত এসব মানুষদের পাশে। কারণ সমাজ সব শ্রেণিপেশার মানুষের সমন্বয়েই গড়ে ওঠে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2