মারা গেলেন ৩০২ কেজি ওজনের মাখন মিয়া
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:২৬ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৫০ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার দক্ষিণ মৌড়াইলের বাসিন্দা ৩০২ কেজি ওজনের মাখন মিয়া। অস্বাভাবিক ওজন নিয়ে অবশেষে জীবনযুদ্ধে হেরে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল (৪০) বছর। সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তার বাবার নাম মিলন মিয়া।
পারিবারিক সূত্র জানায়, মাখন মিয়ার ওজন প্রথমে স্বাভাবিক থাকলেও পরে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। মৃত্যুকালে তার ওজন ছিল ৩০২ কেজি। অস্বাভাবিক এই ওজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটিয়ে ছিল মাখন। অবশেষে ওজনের কারণে জীবন-যুদ্ধে হেরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
মাখনের পিতা মিলন মিয়া জানান, গত কয়েকদিন যাবত মাখন শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগ ভুগছিলেন। গত ২০ বছর বয়স পর্যন্ত স্বাভাবিকই ছিল মাখন। তারপর হঠাৎ তার শারীরিক গঠন বাড়তে থাকে। সে সাথে তার শরীরের ওজনও অস্বাভাবিক বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত তার ওজন ৩০২ কেজিতে গিয়ে দাঁড়ায়। ছেলেকে সুস্থ করার জন্যে চিকিৎসাও করেছেন একাধিকবার, কিন্তু অস্বাভাবিক ওজনের কারণে ব্যাহত হচ্ছিল চিকিৎসা। তার চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে এখন নি:স্ব তার পরিবার। দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে আর্থিক কষ্টে বেঁচে থাকাই ছিল কষ্ট কর।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগ কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন মৃত্যু নিশ্চিত করে জানান, সোমবার রাতে মাখন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। তার ওজনের কারণে হাসপাতালের ভেতরে জরুরী বিভাগে ঢুকানো সম্ভব হয়নি। হাসপাতালের গেইটেই তাকে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, মাখনের শ্বাসকষ্ট সমস্যা ছিল। তার বুকে ব্যথা ছিল। হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
২০১৭ সালে কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাখন মিয়া তার দুঃসহ জীবনের দুঃখগাঁথা তুলে ধরে বলেছিলেন, ‘যহন প্রেসারটা একটু লো অইয়া যায় তখন খালি খিদা লাগে। সামনে যা পাই তাই খাইতাম ইচ্ছা করে। খাওয়ন শেষ অয় কিন্তু আমার পেডে খিদা থাহে। অত খাওয়ন আমি পামু কই। পেডে খিদা থাকলে আবার শরীর খারাপ লাগে।’
কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছিলেন মাখন মিয়া। চোখ মুছতে মুছতে বাঁচার আকুতি জানালেন বারবার। নিজের চিকিৎসা ও খাবার খরচ জোগানোর জন্য সকলের সহযোগিতাও কামনা করছিলেন। অবশেষে সবকিছুর ঊর্ধ্বে চলে গেলেন মাখন মিয়া।