স্কুল খুললে যে সমস্যাগুলো হতে পারে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:১১ পিএম, ২৯ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৪০ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
প্রতি ক্লাসে সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে স্কুল কলেজ খোলার প্রস্তুতির নির্দেশনার বাস্তাবয়ন নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয় ও অনিশ্চয়তা। বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেশি সেখানে শিফটিং করেও সব শিক্ষার্থীকে ক্লাসে ফেরানো সম্ভব নয়। কেননা প্রতি ক্লাসে তিন ফুট দূরত্বে বেঞ্চ, পাঁচ ফুট দূরত্বে শিক্ষার্থী এবং প্রতি কক্ষে সর্বোচ্চ ১৫ জন শিক্ষার্থী বসানোর যে নির্দেশনা তা প্রতিপালনে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশনার বাস্তায়ন নিয়ে সংশয় ও অনিশ্চয়তা কাটছে না।
এ দিকে মাউশির নির্দেশনা পেয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্কুল কলেজে শুরু হয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। বন্ধ থাকা ক্লাসরুম, ধুলায় মলিন বেঞ্চ ব্ল্যাকবোর্ড আর প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় চলছে ধোয়া-মোছার কাজ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রস্তুতির খবরে ঘরবন্দী শিক্ষার্থীরাদের মধ্যে ফিরেছে আনন্দের ধারা।
তবে সব কিছুর মধ্যেও প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বলছেন, যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি সেখানে শিক্ষার্থী সীমিত করা সহজ হবে না। কারণ অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ হাজারেরও উপরে। তাই শিক্ষার্থী সীমিত করা এবং স্বাস্থ্যবিধি ও মাউশির নির্দেশনা শতভাগ বাস্তবায়ন কঠিন হবে।
মাউশির দেয়া ৩৯ পৃষ্ঠার নির্দেশনায় যেসব শর্ত ও বিধি-বিধান পালনের কথা বলা হয়েছে, সেখানে অনেকগুলো শর্তও জুড়ে দেয়া হয়েছে। এসব শর্ত ও বিধিবিধান পালনের বিষয়ে অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো: গোলাম ফারুক জানিয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের। আর আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই এটি নিশ্চিত করতে হবে। এরপর সরকারের সিদ্ধান্ত পেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। অবশ্য স্কুল-কলেজ খোলার আগে সরকারের পরিকল্পনায় ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি বলেছেন, আমরা শুধু শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে একটি গাইড লাইন দিয়েছি। সেখানে বেশ কিছু শর্ত প্রতিপালনের জন্য প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি হ্রাস ও নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত হলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত আসবে। তবে আমরা স্কুল-কলেজ খোলার আগে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শ নেবো। এই বিশেষজ্ঞ কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদন ও পরামর্শেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। এর আগে কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না।
মাউসি সূত্র জানায়, আগামী ৪ ফেব্রয়ারি পর্যন্ত মূলত সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতির বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে। বিশেষ করে সেখানে নিয়মিত পানি, স্যানিটেশন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুবিধা রাখা এবং পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার পদ্ধতি অনুসরণ করছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকাকালীন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারীর মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা গেলে তাদের আলাদা কক্ষে রাখতে হবে। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত এটি নিশ্চিত করতে হবে। সমস্যা দেখা দিলে তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের তালিকা করে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
অন্য দিকে মাউশি থেকে দেয়া নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পড়েছে দুশ্চিন্তা। স্কুল খুলে দেয়া হলে তাহলে রাজধানীর বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি বজায় রাখা যাবে না। কারণ কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ২৮ থেকে ৩০ হাজার ছাত্রছাত্রী। স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হলেও এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না তারা। আশঙ্কা ভর করেছে অভিভাবকদের মনেও।