আদালতে হত্যা মামলায় পুলিশ কর্মকর্তাকে কিল-ঘুষি, আওয়ামী লীগ নেতাকে মারধর
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪ | আপডেট: ১২:৩৯ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সিলেটে সাংবাদিক এ টি এম তুরাব হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া মহানগর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. সাদেক কাওসার দস্তগীরকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে তোলা হয়। এ সময় তার ওপর চড়াও হন উত্তেজিত জনতা। এ সময় তারা ‘দস্তগীরের ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ মুরসালিন সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা সাদেক কাওসারের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আবদুল মোমেন ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের পুলিশ সুপার খালেদ-উজ-জামান। তিনি জানান, সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলার এজহারনামীয় আসামি মহানগর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার সাদেক কাওসার দস্তগীরকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ প্রসঙ্গে বাদীপক্ষের আইনজীবী আবদুর রব বলেন, ‘ওই দিনের ভিডিওতে দেখা গেছে পুলিশ কর্মকর্তা দস্তগীর কনস্টেবলেরর কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গুলি করছেন। তার ছোড়া গুলিতে তুরাব নিহত হয়েছেন। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে আমরা আদালতকে জানানোর পাশাপাশি এই হত্যাকাণ্ডে আর কারা জড়িত জানতে পুলিশ কর্মকর্তা সাদেক কাওসার দস্তগীরের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তা আমলে নেন।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাদেক কাউসারকে আদালতে তৃতীয় তলায় সিঁড়ি দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় কিল-ঘুষি মারেন অনেকে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। পরে আদালতে শুনানি শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তৃতীয় তলা থেকে নিয়ে যাওয়ার সময়ও কিল-ঘুষির শিকার হন সাদেক কাউসার। পরে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে নিরাপত্তার সঙ্গে তাকে পিবিআই সিলেট কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনার দিনের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই দুপুর ২টার দিকে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে বিএনপির মিছিলে পেছন থেকে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ সময় সাদা পোশাকে থাকা সিলেট মহানগর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার সাদেক কাওসার দস্তগীর একজন কনস্টেবলের হাত থেকে শটগান নিয়ে একের পর এক নিয়ে গুলি ছুড়তে থাকেন। পুলিশের ছোড়া গুলিতে গুরুতর আহত সাংবাদিক এ টি এম তুরাব ওই দিন সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তার দেহে ৯৮টি স্প্লিন্টার পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ প্রথমে মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। ওই সময়ে নিহত তুরাবের ভাই থানায় গেলে তার মামলা নেয়নি পুলিশ।
জানা যায়, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ১৯ আগস্ট সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আব্দুল মোমেনের আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই আবুল হাসান মো. আজরফ (জাবুর)। মামলাটি কোতোয়ালি থানাকে রেকর্ড করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (ক্রাইম, উত্তর) মো. সাদেক কাওসার দস্তগীর, উপকমিশনার (উত্তর) অতিরিক্ত ডিআইজি আজবাহার আলী শেখসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
ঘটনার পর অতিরিক্ত উপকমিশনার (ক্রাইম, উত্তর) মো. সাদেক কাওসার দস্তগীর, উপকমিশনার (উত্তর) অতিরিক্ত ডিআইজি আজবাহার আলী শেখকে সিলেট থেকে বদলি করা হয়।
গত ৮ অক্টোবর আদালতের নির্দেশে চাঞ্চল্যকর এই মামলার নথিপত্র কোতোয়ালি থানা পুলিশ পিবিআইকে বুঝিয়ে দেয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ মুরসালিন গত ১৭ নভেম্বর রাতে তুরাব হত্যা মামলার আরেক আসামি কনস্টেবল উজ্জ্বল সিংহকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে। পরদিন আদালতে তার ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে শুনানি শেষে বিচারক ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে, বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর শেরপুরে কর্মস্থল থেকে সাদেক কাওসার দস্তগীরকে গ্রেফতার করে পিবিআইয়ের একটি দল।