নিরাপত্তাকর্মী থেকে বিসিএস ক্যাডার, লড়াকু মোত্তালিবের গল্প
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৮ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৭:০১ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
ছবি: সংগৃহীত
শত বাধা সত্ত্বেও মন থেকে চাইলেই যেকোনো কিছুই অর্জন করা সম্ভব তার জলন্ত উদাহরণ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মোত্তালিব। টিউশনি, প্রুফ রিডার এমনকি সিকিউরিটি গার্ডের চাকরিও করেছেন এই শিক্ষার্থী। কোনো সীমাবদ্ধতাই যেন থামাতে পারেনি তাকে। সব বাধা পেরিয়ে সর্বশেষ ৪৩তম বিসিএসে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) তাকে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করেছে।
আর্থিক দুরবস্থার কারণে একসময় চাচার বাড়িতে থাকতে হয়েছে। পরিবার থেকে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়লে কিছুদিন পড়াশোনাও বন্ধ ছিল। অথচ থেমে যাননি তিনি।
বগুড়ার শিবগঞ্জের বর্গাচাষি মহাবুল ইসলাম ও জামিলা বিবির সন্তান এম এ মোত্তালিব মিহির। গ্রামে বর্গাচাষি বাবা আর গৃহিণী মায়ের একমাত্র স্বপ্ন ছিল তাদের সন্তান একদিন সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছাবে।
মোত্তালিবের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জীবনে দরিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করে আল্লাহর অশেষ রহমতে আজকে আমি ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত। আশা করি নিজের ওপর অর্পিত সব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে দেশের মানুষের সেবা দিতে পারব।
তবে এ পর্যন্ত আসার পথটা কখনোই মসৃণ ছিল না। গ্রামের স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে যখন কলেজে ভর্তি হই তখনই আর্থিক টানাপোড়নের মধ্যে পড়তে হয় পুরো পরিবারকে। ফলে কলেজের পড়াশোনাও কিছুদিন বন্ধ ছিল। তাই স্থানীয় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরিও নিতে হয়েছিল। একদিকে চাকরি অপর দিকে পড়াশোনা।
মোত্তালিব বলেন, এইচএসসি পড়াশোনা শেষে ২০১২ সালে ঢাকায় এসে আর্থিক অভাব-অনটনের জন্য আবারও পড়াশোনা ছেড়ে দিই। একটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি নেই। প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা ডিউটি করতাম। সারাদিন গেটে বসে থাকতে হতো। সময় কাটতো না তাই মাঝে মাঝে বই পড়তাম। একদিন ছুটি নিয়ে আমার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করি। সে ঢাকায় এসেছে কোচিং করে অ্যাডমিশন দেবে। তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সম্পর্কে জেনে পড়াশোনার সেই উদ্দীপনা আবারও জাগে। সিকিউরিটি চাকরির বেতন থেকে কিছু টাকা জমিয়ে ভর্তি হয়ে যাই একটি কোচিংয়ে।
এভাবে চাকরির পাশাপাশি কোচিং করে ২০১৩ সালে ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পান মোত্তালিভ। তিনি বলেন, সিকিউরিটি চাকরিটি ছেড়ে দিলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে এই ভয়ে ঢাকাতেই থেকে যাই এবং ভর্তি হই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপরই শুরু হলো নতুন এক সংগ্রাম। প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা ডিউটি করে কলাবাগান থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে ক্লাস করতে হতো। ভাড়া বাঁচানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসেই যাতায়াত করতাম। আমার মনে আছে একদিন ক্যাম্পাস থেকে ফেরার সময় স্টুডেন্ট ভাড়া ছয় টাকা না থাকার কারণে সদরঘাট থেকে কলাবাগান পর্যন্ত হেঁটে আসতে হয়। এভাবে কখনও সিকিউরিটি চাকরি কখনও বা টিউশনি করে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে হয়েছে।
তিনি আরও জানান, শত বাধা পেরিয়ে আমাকে এই পর্যন্ত আসতে হয়েছে। তবে কখনও হাল ছাড়িনি। আমি এমন একটা গ্রাম থেকে উঠে এসেছি যেখানে ছেলে-মেয়েদের নাম দস্তখত শেখার পরে স্বপ্নই থাকতো বিদেশ চলে যাবে। এরকম একটা পরিবেশে আমি স্বপ্ন দেখতাম আমি একদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করব। তবে কখনও ভাবিনি যে বিসিএসের মতো এতো তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ একটা পরীক্ষা দিয়ে দেশের প্রথম শ্রেণির একটা চাকরি করব।
ভবিষ্যতে যারা বিসিএস পরীক্ষা দেবে তাদের উদ্দেশে মোত্তালিব বলেন, বিসিএস ক্যাডার হওয়া যতটা না কষ্টের তার থেকে বেশি কষ্টসাধ্য কাজ হচ্ছে লেগে থাকা। তাই ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত লেগে থাকলে একদিন সফলতা আসবেই।