avertisements 2

নিজ হাতে সন্তানের মাথা ফাটিয়ে কোলে নিয়ে ভিক্ষা!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:৪৯ এএম, ১ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২০ | আপডেট: ০৫:১৭ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪

Text

ফেনীতে নিজ হাতে সন্তানের মাথা ফাটিয়ে কোলে নিয়ে ভিক্ষা করছেন এক নারী। শহরের মসজিদ, হাসপাতাল,  রেলওয়ে স্টেশন ও বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকায় এ নারীকে ভিক্ষা করতে দেখা যায়।

রোববার (২৯ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়, যেখানে লেখা 'শহরের একাডেমি এলাকায় দুটি শিশুকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা'। এমন খবরে শহরে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। এরপরেই বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

রাত সাড়ে ৮টার দিকে শহরের মিজান রোড়স্থ তমিজিয়া মসজিদের সামনে ভিক্ষা করতে দেখা যায় ওই নারীকে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় বাচ্চা দুটিসহ মহিলাটি মানুষের কাছে টাকা ভিক্ষা চাইছে।

তখন ওই নারীর অভিনব কায়দায় ভিক্ষাবৃত্তির ব্যাপারে তথ্য দেয় স্থানীয়রা।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়-এর সহ-সভাপতি জুলহাস তালুকদার বলেন, প্রথম ঘটনাটি ঘটে গত ২০১৮ সালের শবে বরাতের রাতে। শহরে অজ্ঞাত মহিলার খবরে ছুটে যায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়-এর সদস্যরা।

সেখান থেকে তাকে ও বাচ্চাদের হাসপাতালে ভর্তি করায় সংগঠনটির সদস্যরা। সেসময় তারা বাচ্চার জামা-কাপড় পরিবর্তন করার চেষ্টা করলে, ওই নারীর চিৎকার চেঁচামেচি করে তার স্বামীর কাছে যেতে চান। এরপর বাচ্চাদের নিয়ে ওই নারী হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান।

এর দশ দিন পর আবার ফেনী শহর থেকে বাচ্চা দুটিসহ ওই নারীকে এনে আবার  হাসপাতালে ভর্তি হলে এক ঘন্টা পর তিনি চলে যান।

তখন ফেনী সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক বাচ্চাদের দেখে জানান, কোনো মাদকদ্রব্য অথবা ঔষধের মাধ্যমে ঘুমিয়ে রাখা হয় শিশু দুটিকে এবং সেই সুযোগ নিয়ে মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করা হয়।

এর কিছুদিন পর ৯৯৯ থেকে  পুলিশের কাছে কল আসে এই শিশুদের নিয়ে, পুলিশের কাজে সহায়তা করতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায় শহরের মুক্ত বাজার এলাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে আনলে বাচ্চাদের মাথার ব্যান্ডেজ খুলে দেখা যায় মাথায় কোনো ক্ষত ছাড়া ব্যান্ডেজ লাগিয়ে রাখা হয়, মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য।

গেল মাসের ৩১ তারিখ রাত ২টায় মহিপাল ফ্লাইওভার এর নিচে এক মহিলা ইট দিয়ে বাচ্চা এবং নিজের মাথায় আঘাত করছেন বলে খবর পেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ও পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়-এর সভাপতি মঞ্জিলা মিমিকে অবগত করলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, এই নারী প্রতারনার আশ্রয় নিয়েছেন । তখন  বাচ্চাদের হাসপাতালে নেওয়া হলে সকালে হাসপাতালের কাউকে না জানিয়ে তিনি গোপনে পালিয়ে যান।

সহায়-এর সাধারণ সম্পাদক দুলাল তালুকদার বলেন, ‘তাকে যখনই বলা হয় তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে এবং তার স্বামীর কাছে নিয়ে যাওয়া হবে, তখনই কৌশলে তিনি সটকে পড়েন। ’

জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী জানান তার নাম রুমি। স্বামীর নাম সুজন, বাড়ী রংপুরে । আবার কখনো বলেন, তার বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনায়। তিনি আরো জানান, সঙ্গে থাকা শিশু সাকিবের বয়স ৩ বছর, সুমাইয়ার বয়স ৯ মাস। তিনি সন্তানদের নিয়ে বর্তমানে শহরের সহদেবপুরের একটি বস্তিতে থাকেন।

২৫০ শয্যার বিশিষ্ট ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ইকবাল হোসেন বলেন, মহিলাটির বাচ্চাদের বেশ কয়েকবার চিকিৎসার জন্য আনা হয়।

জরুরি বিভাগে কর্মরত মামুন মিয়াজী জানান, একবার ব্যান্ডেজ খুলে বাচ্চাদের মাধায় আঘাত দেখা যায়নি। অন্য সময় মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যাওয়ায় চিকিৎসা দেয়া হলেও ওই নারী চিকিৎসা না নিয়ে পালিয়ে যান।

যদিও প্রতারণার বিষয়টি ওই নারী অস্বীকার করেছেন। তার দাবি,  দূর্ঘটনায় তার সন্তানদের মাথা ফেটেছে। চিকিৎসা না করিয়ে হাসপাতাল থেকে সটকে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তার কাছে কোনো সদোত্তর পাওয়া যায়নি।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2