avertisements 2

ডিজাইনে ভুল, পাঠদান শুরুর আগেই স্কুলভবনে ফাটল

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৩ অক্টোবর,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০৭:০০ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার রানাহিজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে শিক্ষা-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সামনের অংশে এত বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে যে যেকোনো সময় তা ভেঙে পড়তে পারে। দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে। তাই নতুন ভবনে ক্লাস করানো যাবে না।

বৃহস্পতিবার (১৬৯ অক্টোবর) সরেজমিন দেখা যায়, বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ওই ভবনের সামনের বারান্দার অংশে বিশাল ফাটল। একপাশ থেকে অন্যপাশের মানুষ দেখা যায়। যেকোনো সময় মূল ভবন থেকে খুলে পড়ে যেতে পারে। রেলিংয়ের একপাশ খুলে পড়ে গেছে। ভবনের দেওয়ালের রং উঠে গেছে। এছাড়া দেওয়ালের আস্তরণও অমসৃণ। এক ফলক দেখেই বোঝা যায় এ যেন দায় সারা যেনতেন কাজ।

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মোহনগঞ্জ উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে এ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৭৯ লাখ ৩৯ হাজার ৭৬৭ টাকা চুক্তিমূল্যে কাজটি পায় কিশোরগঞ্জের মেসার্স রাজিব এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের মালিক শাহ আলম মাহবুব রাজিব। এক বছরের কাজ শেষ হয় পাঁচ বছরে। চলিত বছরের জুনে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। পরের মাসে তা হস্তান্তর করা হয়। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ে মোট ১৩১ জন শিক্ষার্থী আছে। তাদের পাঠদানে পাঁচজন শিক্ষক আছেন। প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় সহকারী শিক্ষক মেহেরুন্নেছা আক্তার ভারপ্রাপ্ত হিসেবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক জানান, কাজ শুরুর পর বিদ্যালয়ের জমিদাতা ও সাবেক সভাপতি মতিউর রহমানের মেয়েকে বিয়ে করেছেন ঠিকাদার রাজিব। ফলে নিম্নমানের কাজ করলেও ঠিকাদারের পক্ষে কাজ করেছেন তার শ্বশুর। শ্বশুরের প্রভাব খাটিয়ে বিনা পরিদর্শনে প্রত্যয়ন পেয়ে গেছেন ঠিকাদার। এতে আমরা সবাই ভুক্তভোগী হচ্ছি।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেছা আক্তার বলেন, নতুন ভবনের কাজ যেনতেন হয়েছে। সামনের অংশে দুই পিলারের মাঝে বিশাল ফাটল দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় ভেঙে পড়বে। তিন-চার মাস আগে কাজ শেষ হয়েছে। এখনো উদ্বোধন হয়নি এরই মধ্যে রেলিং ভেঙে গেছে। দেওয়ালের রং উঠে গেছে। খুবই বাজে অবস্থা ভবনের। এ অবস্থায় সেখানে পাঠদান সম্ভব নয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর কেউ ভয়ে সেখানে যাবে না।

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, নতুন ভবন হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা আনন্দ বিরাজ করছিল। কিন্তু সব আনন্দ মলিন হয়ে গেছে। তাই আমরা পুরাতন ভবনে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছি। ভবনের অনিয়মের বিষয়টি এলজিইডি প্রকৌশলীসহ শিক্ষা অফিসকে অবহিত জানানো হয়েছে।

ভবন নির্মাণে অনিয়ম থাকার পরও কীভাবে প্রত্যয়নে স্বাক্ষর করলেন এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, শিক্ষা অফিস প্রথমে ভবনের প্রত্যয়নে স্বাক্ষর করেছে। পরে আমি করেছি। তবে প্রত্যয়নে স্বাক্ষর করতে ঠিকাদারের শ্বশুর ও সাবেক সভাপতির চাপ ও অনুরোধ ছিল বলে তিনি স্বীকার করেন।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের জমিদাতা, সাবেক সভাপতি ও ঠিকাদারের শ্বশুর মো. মতিউর রহমান বলেন, এ কাজে ঠিকাদারের কোনো গাফিলতি ছিল না। ঠিকাদার সামনের পিলারগুলো রড দিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু এলজিইডি প্রকৌশলীই সেগুলো রডের পরিবর্তে ইট দিয়ে করতে বলেন। তাই এমনটা হয়েছে।

ঠিকাদার শাহ আলম মাহবুব রাজিব বলেন, ভবনের কাজ করতে গিয়ে আমার ১০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। বিদ্যালয়ের পাশে পানি থাকায় বছরে তিন মাসের বেশি কাজ করা যায় না। রাস্তা ভালো না থাকায় মালামাল পরিবহনেও সমস্যা। তাই কাজে দীর্ঘদিন লেগেছে। এদিকে আগের ইস্টিমিট হওয়ায় বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। এ ভবনের ডিজাইন পরিকল্পনায় ভুল ছিল। ডিজাইনের চেয়ে অনেক বেশি উঁচু করতে হয়েছে ভবনটি। নিচে পানি থাকার কারণে দেবে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি পালগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আম্বিয়া আক্তারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ভবন নির্মাণের বিষয়টি পুরোপুরি এলজিইডির হাতে। আমাদের এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয় না। নির্মাণ শেষে ভবন বুঝিয়ে দেওয়া হয় প্রধান শিক্ষকের কাছে। প্রত্যয়নও তিনিই দেন। আমরা কোন প্রত্যয়ন দেই না। তবে নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে এলজিইডিতে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অভিযোগ দিয়েছেন।

সদ্য যোগদান করা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. সোয়াইব ইমরান বলেন, ঠিকাদারের কাজে তেমন গাফিলতি নেই। ভবন নির্মাণের ডিজাইন পরিকল্পনায় ভুল ছিল। আগের প্রকৌশলীরা ওই ভুলটা করে গেছেন। নিচু জায়গায় অন্য ডিজাইনে এটি করা দরকার ছিল। সামনের যে অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে ওই পিলারগুলো রড আর কংক্রিট দিয়ে করলে এমনটা হতো না। তবে ডিজাইন ইস্টিমিটে ইট ধরা ছিল। স্কুলের বরাদ্দ থেকে মেরামত করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া ঠিকাদারের জামানতের টাকা আছে এখনো। দ্রুত ফাটলগুলো মেরামত করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2