মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানাতে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ঘুস নিলেন যুবমহিলা লীগ নেত্রী
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ০৬:৩৩ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
মানিকগঞ্জ জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহবায়কের বিরুদ্ধে সিংগাইরের এক ব্যক্তিকে এক মাসের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানানোর তদবিরের জন্য ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ঢাকায় কর্মরত একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক সাংবাদিকের আত্মীয়ের কাছ থেকে এই টাকা নেওয়ার ঘটনাটি ঘটে। ওই সাংবাদিকের সঙ্গে জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহবায়ক সালেহা জাহানের ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এ ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গেছে।
সালেহা জাহান একাধারে সিংগাইর উপজেলা যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদকও। এছাড়া তিনি মানিকগঞ্জ-২ আসনের এমপি মমতাজ বেগমের খুব আস্থাভাজন হওয়ায় ভুক্তভোগী পরিবারকে টাকা ফেরত দিতে নানা টালবাহানা করছেন।
সম্প্রতি (গত বৃহস্পতিবার) সালেহা ও তার স্বামী শ্রমিক লীগের উপজেলার সভাপতিসহ ৩-৪ জন অজ্ঞাত পরিচয়ের যুবক নিয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখান। সাংবাদিকদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো কথা না বলতেও হুমকি ধমকি দেন।
ফাঁস হওয়া ফোনালাপের কথোপকথনের অডিও ক্লিপ যুগান্তরের এই প্রতিবেদকের কাছে আসার পর যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহবায়ক সালেহা জাহান টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি দাবি করেন, মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানানো সম্ভব না হওয়ায় টাকা ফেরতও দিয়েছেন। কিন্তু ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি এখনো ৭০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে।
ভুক্তভোগী সিংগাইর উপজেলার বায়রা গ্রামের কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী গীতা সরকার। ২০২১ সালে উপজেলার ধল্লা এলাকার বাসিন্দা জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহবায়ক ও উপজেলা যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সালেহা জাহানের প্রলোভনে তার বাবাকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর জন্য ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেন।
সোমবার সকালে গীতা সরকারের সঙ্গে কথা হলে আরও জানান, স্কুল ও কলেজে অধ্যয়নের ফাঁকে তিনি টিউশনির জমানো টাকা, বড় বোনের কাছ থেকে ধার করা দেড় লাখ টাকা এবং স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে সালেহা জাহানকে টাকা দেন।
গীতা সরকার জানালেন, তার ব্যক্তিগত স্থানীয় ব্যাংকের হিসাব নম্বর থেকে সালেহা জাহানের ব্যাংক হিসাব নম্বরে আরটিজিএসের মাধ্যমে ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সাড়ে তিন লাখ টাকা দেন। আর নগদে দেন ২০ হাজার টাকা।
মোট পাঁচ লাখ টাকা চুক্তিতে মাত্র এক মাসের মধ্যে সালেহা তার বেহালা বাদক বাবা গুরু চন্দ্র সরকারকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানিয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা নেন। ২ বছর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানানো তো দূরের কথা উল্টো চাপের মুখে রেখেছেন সালেহা জাহান।
ওই ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া গীতা জানালেন, তার ৭০ বছর বয়সি বাবা এখনো বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বেহালা বাজান। সালেহা জাহানের ফাঁদে পড়ে এমন কাজটি করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় পরিবারের মান ইজ্জতের হানি হয়েছে বলেও জানান।
মানিকগঞ্জ জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহবায়ক সালেহা জাহানের এমন অপকর্মের দায় নিতে নারাজ খোদ দলটির জেলা আহবায়ক রোমেজা আক্তার খান মাহিন। তিনি বলেন, বিষয়টি কেন্দ্রীয় সভানেত্রীকে অবহিত করেছি। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানালেন।
মুক্তিযোদ্ধার সনদ বানানোর কথা বলে টাকা নেওয়া একটি জঘন্যতম ও নিন্দনীয় কাজ বলে মনে করেন সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. সায়েদুল ইসলাম। তিনি যুগান্তরকে জানান, সালেহা জাহানের এ ধরনের কর্মকাণ্ড দলের সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছে।