avertisements 2

নিপাহ ভাইরাস আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্ত, ঝুঁকিপূর্ণ ৩৩ জেলা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৫ ফেব্রুয়ারী,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ০১:২১ এএম, ২৫ ডিসেম্বর, বুধবার,২০২৪

Text

দেশে চলতি বছরের প্রথম মাসেই ছয় জেলায় ১০ জনের শরীরে প্রাণঘাতী নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন পাঁচজন। গেল জানুয়ারিতে নিপাহ আক্রান্ত রোগী শনাক্তের এ সংখ্যা আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এবার সংক্রমণ বেশি রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে গত ২২ বছরে ৩৩ জেলায় এ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এসব জেলাকে এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে। তাই হাসপাতালে জ্বর নিয়ে আসা রোগীদের সেবা দেওয়ার সময় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে চিকিৎসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পরিসংখ্যান বলছে, নিপাহ ভাইরাসে ২০০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ৩৩৫ ব্যক্তি সংক্রমিত হয়েছেন। মারা গেছেন ২৩৫ জন। চলতি বছরের প্রথম মাসেই শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ। অথচ ২০২২ সালে সারাবছরে তিনজন শনাক্ত হন, তাঁদের মধ্যে দু'জন মারা যান। ২০২১ সালে দু'জন শনাক্ত হলেও কেউ মারা যাননি। ২০২০ সালে সাতজন শনাক্ত হন, তাঁদের মধ্যে মারা যান পাঁচজন। ২০১৯ সালে আটজন শনাক্ত হন, তাদের মধ্যে মারা যান সাতজন। ২০১৮ সালে চারজন শনাক্ত হন, তাঁদের মধ্যে দু'জন মারা যান। ২০১৭ সালে তিনজন শনাক্ত হন, তাঁদের মধ্যে দু'জন মারা যান। ২০১৬ সালে শনাক্ত পাওয়া যায়নি। ২০১৫ সালে ১৫ জন শনাক্ত হন, তাঁদের মধ্যে ১১ জন মারা যান। এর আগে দেশে সর্বোচ্চ নিপাহ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ২০১১ সালে। ওই বছরে ৪৩ জন শনাক্ত হন, তাঁদের মধ্যে ৩৭ জন মারা যান।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, কোনো জায়গায় একবার নিপাহ আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে ওই স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। কারণ, যেখানে নিপাহ ভাইরাসের রোগী পাওয়া যায়, সেখানে বাদুড়ও থেকে যায়, খেজুরের রসও থাকে। দেশের প্রায় সব এলাকাই নিপাহ ভাইরাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু যেসব জেলায় রোগী পাওয়া গেছে, সেখানে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

এদিকে নিপাহ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ঢাকার মহাখালীর ডিএনসিসি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ২০টি শয্যা প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত রোববার নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এতে নানা পরামর্শ দেন। বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, নিপাহ ভাইরাসে এবার শনাক্ত ও মৃত্যুর হার বেশি। এখনই সর্তক হতে হবে। এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সতর্কতামূলক বার্তা দেওয়া হয় ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে।

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক, জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এবং সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের সংগঠনের কাছে বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বৃহস্পতিবার অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনানের সই করা চিঠিতে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, রোগী দেখার সময় অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। রোগী দেখার আগে ও পরে হাত ধুয়ে নিতে হবে সাবান দিয়ে। জ্বরের উপসর্গ দেখা গেলে রোগীকে অবশ্যই রাখতে হবে আইসোলেশন ওয়ার্ডে। জ্বরের পাশাপাশি রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তাঁকে আইসিইউতে রাখতে হবে। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীর পরিচর্যাকারীরা শুধু গ্লাভস, মাস্ক পরলেই হবে। কারণ, নিপাহ ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় না।

ডিএনসিসি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শফিকুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা পেয়ে নারী ও পুরুষ পৃথক করে ১৬টি সাধারণ শয্যা ও ১৭টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের হাসপাতালে ৩৩টি শয্যা প্রস্তুত। এর মধ্যে নিপাহ আক্রান্ত দু'জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। তাঁরা সুস্থ আছেন। 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2