avertisements 2

মাধবী -৯

মাধবী

মো: আসাদুজ্জামান
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৭ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৫৯ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

সারাদিন বাংলার চারণ কবি জীবনানন্দ দাশ, ফার্সি কবি জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি  এবং উর্দু কবি মির্জা গালিবকে কিছুটা পড়লাম , নেড়েচেড়ে দেখলাম । তুমি কি জানতে মাধবী সুফি কবি জালালউদ্দিন মুহাম্মদ রুমি ত্রয়োদশ শতকে একজন নামকরা আইনজ্ঞও ছিলেন  ? আমি জানতাম না ! উর্দু কবি মির্জা আসাদুল্লা  ওরফে গালিব ভারতের আগ্রায় জন্ম নিয়ে দিল্লিতে মোঘল সম্রাটের প্রধান সভা কবি ছিলেন। এতদিন আমার ধারনা ছিলো গালিব শুধুই একজন  ফার্সি কবি ছিলেন ! ওঁদেরকে যতই পড়ছি ততই মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে আমার বিরহী মনে , আমার কল্পনার মাধবী আরও বেশী বাস্তবের সীমারেখায় পৌঁছচ্ছে ! তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় মির্জা গালিব অহংবোধের কবি ছিলেন, তাঁর প্রেমের কবিতাও ছিলো শ্রেণী বৈষম্যের পরিব্রাজকের মত, ক্ষুধা-দারিদ্রের প্রতিচ্ছবি তাঁর কবিতায় তেমন ফোটেনি !  তিনি ছিলেন ধনীক শ্রেনীর কবি ! তাঁর কবিতা ছিলো উচ্চবিত্তের প্রেম বিরহের গল্প গাঁথা । এই যেমন ধরো গালিবের একটি পংতি ছিলো  - 
     “ হ্যায় মুঝে আবরে বাহারি কা বরস কর খুলনা 
রোতে রোতে গমে ফুরকত মে ফানা হো জানা
  যার বাংলা অর্থ করলে দাড়ায় —
 “ বসন্ত মেঘের বর্ষণ শেষে উন্মুক্ত আকাশ   আমার কাছে- যেন বিরহ বেদনার অশ্রুতে নিজেই ভেসে যাওয়া । “  এখানে আর্ত মানবতার আর্তি নেই, শুধুই প্রেম-বিরহের পংতিমালা । 
   জালালউদ্দিন রুমির কবিতা আর উক্তি  অবশ্য সুফি সাধনা  আর প্রেমের বার্তায় ভরপুর ছিলো । রুমির অমর উক্তি -       
   “ আমি আমার জন্য মরে গেছি এবং বেঁচে আছি তোমার কারণে”  - আমার ভালো লাগার অনবদ্য উপকরণ !
মাধবী,
 সফেদ শুভ্র ভরা জোস্নায় তোমাকে কল্পনার মাধুরী দিয়ে আঁকতে, দেখতে , ছুঁতে মন চাইছে আজ , এখন এই বেলে জোস্না-উজলা আলোর বিকিরণে ! নিশ্চয়ই তুমি আজ রুপোলী রাতে জেগে আছো , হয়তো কোন ডাক্তার কিংবা অন্য কারও দোসর কিংবা স্বপ্নের সারথী হয়ে । কিন্ত, তবুও , তুমি আমার কল্পনায় বাঁজা রিণিঝিণি কাঁকনের মিহিন শব্দ , আমার কল্পলোকে তোমার উপস্থিতি নৈবেদ্য নিবেদনের মত জানান দাও, স্পর্শের অধরা হয়ে !! তবুও তোমাকে অনুভব করি, করা যায় তাই করি, করতে হয়, না করলে হতাশার গভীর গহ্বরে বিলীন হতে হয় , নিজেকে রিক্ত, নি:স্ব , সর্বহারা মনে হয় !! 
     মাধবী, বড় দু:সময়ের মুখামুখি মানব জাতি ! করোনায় বাংলাদেশে মৃত্যু ইতিমধ্যেই সহস্র ছাঁড়িয়েছে । এখানে এর মধ্যেই রাজনৈতিক নিপীড়ন চলমান । এই পরিস্থিতিতে  গ্রীক মাইথোলজীর    টাইটানগোত্রভূক্ত টাইটান দেবতা ইয়াপেতুস ও ওশেনিড ক্লাইমেনের সন্তান গ্রীক দেবতা প্রমিথিউসের কথা মনে পড়ছে । গ্রীক পুরান অনুসারে প্রমিথিউস একজন টাইটান যাকে বলা হত মানুষের সবচেয়ে উপকারি বন্ধু।সে তাঁর ভাই এপিমিথিউসকে সাথে নিয়ে দেবতাদের মুখামুখি দাঁড়িয়ে মানবজাতির পরম বন্ধু হয়েছিলেন ! আজ এই অতিমারির ক্রান্তিকালে , রাজনৈতিক নিপীড়নের আগ্রাসী অপশাসনের সময় আমরা প্রমিথিউস-এপিমিথিউসকে চাই !! বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য, অগণিত, অসংখ্য মানুষের  জীবন জীবিকার জন্য চাই , তাঁদের বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার জন্য , মনখুলে ঝাঁঝালো মিছিলে শ্লোগান ধরার জন্য চাই ! যারা ফিনিক্স পাখির মত ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে এসে সব কিছু ঠিক করে দিবে !!!  
 মাধবী, সম্প্রতি উগান্ডার একনায়ক রাষ্ট্রপতি ইওয়ারী মুসাভেনীর ( Yoweri Museveni )   একটি বক্তব্য যথেষ্ঠ রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহত হচ্ছে  এখানে । তাঁর বক্তব্যের সারমর্ম ছিলো এই যে, এখন ধরে নিন যুদ্ধের সময় বিরাজ করছে , যুদ্ধের সময় জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে ঘরে থাকুন, পালিয়ে থাকুন, সরে থাকুন, দূরে থাকুন , অফিস আদালত ভুলে যান, জীবন বাঁচান ! আমাদের দেশ , বিশেষ করে আমাদের আইনাঙ্গনে উগান্ডার রাষ্ট্রপতির অমর বাণী অনুসৃত হচ্ছে !! এখানে দোকানপাট চলবে, বাজার সদায় চলবে, ধরপাকড় চলবে, গুম নির্যাতন চলবে , লাঠি গুলি টিয়ারশেলের তান্ডব চলবে, রিমান্ড চলবে , শুধু আদালত সীমিত আকারে চলবে ! মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আজ অবধি  বিএনপি, সাধারন ছাত্র ফোরাম, হেফাজতে ইসলাম সহ অসংখ্য প্রতিবাদী মানুষকে রাজনৈতিক নিপীড়নমূলক মামলায় গ্রেফতার হতে হয়েছে ! নিপুন রায়দের মত গনতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মীদের দিনের পর দিন রিমান্ডে কাটাতে হয়েছে । আর আমরা উগান্ডার একনায়ক রাষ্ট্রপতির অমর বাণী  অনুসরন করছি !  
উগান্ডার ইতিহাস জানো মাধবী ? 
১৮৩০ এর দশকে আরব ব্যবসায়ীরা পূর্ব আফ্রিকার ভারত মহাসাগর উপকূল থেকে অভ্যন্তরীণ কিছুটা এলাকায় স্থানান্তরিত হয়ে একটি বসতি আবিষ্কার করেছিলো যা আজকের Republic of Uganda . পরবর্তীতে ১৮৬০ এর দশকে নীল নদের উৎস অনুসন্ধান করে উগান্ডায় আগমন ঘটে ব্রিটিশদের। এরপর উগান্ডা ১৯৬২ সালের ৯ই অক্টোবর যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। সেসময় যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রপ্রধান এবং উগান্ডার রানী ছিলেন কুইন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ১৯৬৩ সালের অক্টোবরে উগান্ডা একটি প্রজাতন্ত্র হয় । রাষ্ট্রপতি শাসিত উগান্ডার বর্তমান রাষ্ট্রপতি ইওয়ারি মুসাভেনি (Yoweri Museveni)। ১৯৮৬ সালের ২৯ শে জানুয়ারী থেকে একনায়কতান্ত্রিকভাবে দেশটি শাসন করে চলেছেন ! ইদি আমিনের পর দেশের দ্বিতীয় একনায়ক তিনি । 
মাধবী, তুমি আমার অনিমেষের মাধবী নও, তুমি ভিনসেন্ট ভ্যানগগের জেহান্না কিংবা লিওনার্দো দা ভিন্চির তুলির আঁচড়ে আঁকা মোনালিসা নও , তুমি আমার রবি ঠাকুরের জৌষ্ঠের খররৌদ্রের অশ্রুশূন্য রোদন । তোমার সাথে জীবনানন্দের সুরন্জনার মিল খুঁজে পাই । সুরন্জনা জীবনানন্দের জীবনের কষ্টের, বেদনার সারথী ছিলো । জীবনানন্দ দাশ নাটোরের বনলতায় মুগ্ধ হয়ে হয়তো কিছুটা স্বস্থি পেয়েছিল , আমার তো সে বিকল্প নাই । আমার কাছে তোমার উপমা তুমিই মাধবী । তথাপিও, জীবনানন্দ দাশ সুরন্জনাকে বলেছিলো  —, 
     “ সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি,
বোলো নাকো কথা ওই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা :
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;
ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;
দূর থেকে দূরে – আরও দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়ো নাকো আর। ”
       আমি তোমাকে কিছুই নিষেধ করবো না মাধু, প্রেয়সী আমার !! 
শুধু বলবো , 
“ শেষবার তার সাথে যখন হয়েছে দেখা মাঠের উপরে
বলিলাম: ‘একদিন এমন সময়
আবার আসিয়ো তুমি, আসিবার ইচ্ছা যদি হয়!–
পঁচিশ বছর পরে!”

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2