ছেচল্লিশের সোলেনামায় একুশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৩৪ পিএম, ২৪ এপ্রিল,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:০১ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
আমার পথ চলা শুরু
সেই ছেচল্লিশের কোলকাতার রাজপথে।
আগষ্টের সেই বিভৎসতায়
হ্যেস্যা রামদা বল্লমে আমি ছিন্নভিন্ন হয়েছি।
মেটিয়া বুর্জের সেই বস্তি তুল্য
কাঁচাপাকা বাড়িগুলো জ্বালিয়ে ওরা উল্লাস করেছে।
চোখের সামনে মা বাবা ভাইদের
বলি দিয়ে ওরা জয় মহাদেব বলে হুংকার দিয়েছে।
উলু দিয়ে কাসর ঘন্টা বাজিয়ে
ধুতি পৈতার পাষন্ডরা আমার মসজিদ পুড়িয়েছে।
ওদিকে আগষ্টের কোলকাতার ছায়া নোয়াখালীতেও
দাঁত খিঁচিয়ে অক্টোবরের হেডলাইনে।
নারায়ে তাকবীরের ঝান্ডায়
তছনছ সনাতনী জনপদ।
সেখানেও তান্ডব, নরহত্যা ও দখল,
ধর্মান্তর ধর্ষনের পৈশাচিক আয়োজন।
ছেচল্লিশের সেই আগুনে ঝলসানো আমি
পগার পেরিয়ে শেকড়ের সন্ধানে প্রান্ত বদলেছি।
কিন্তু একি! এখানেও পান খৈনির
ভিন ভাষীয় মহা এন্তেজাম।
ধর্মভেদের কচকচানির বিচ্ছিন্নতায়
বাঙালীয়ানার হেসেলেও যে ভিনজাতীয় উলোট করা গন্ধ।
বাঙালীর কাদামাটির উঠানে-
এ কোন্ শংকরায়নের সমীকরন!
ধাতস্ত হতে সময় লেগেছে আমার।
লম্বা দাঁড়ি ও কাল জোব্বার ভিনভাষীয় বয়ানে
আমি পুলকিত হয়েছি, মুগ্ধ হয়ে বুঝার চেষ্টা করেছি।
সারবস্তু পাইনি কিছু –
শুধু জেহাদ জং আর মুরতাদ মালোয়ান ছাড়া।
বাঙালী সম্বিত ফিরে পেয়েছে,
বাহান্ন করে তারা মুখের ভাষাকে উচ্চকিত করেছে।
চুয়ান্নতে দেখিয়েছে তাদের পারঙ্গমতার প্রকাশ।
ঊনসত্তরে মুষ্টিবদ্ধ যুথবদ্ধতার সিটি বাজিয়েছে তারা।
সত্তুরে একবাক্যে আঙুলে কালি লাগিয়ে বাঙালী
জানান দিয়েছে – তারা সেয়ানা হয়ে গেছে।
অবশেষে একাত্তরের মহা সংগ্রামে
বাঙালী তার লাল সবুজের পতাকা সমুন্নত করেছে।
হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃষ্টান পাহাড়ি উপজাতি
বাঙালীয়ানার উঠানে সুউচ্চকন্ঠে সমস্বরে গেয়ে উঠেছে-
আজ তারা শুধুই বাঙালী।
ধন্য নেতার পিতৃস্নেহে বাঙালী উন্নত শিরে
আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে গেয়েছে-
জয় বাংলা!
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।
একবিংশের একুশে আজ একি শুনি?
যে কবিতা পাঠ করে বাঙালী ভাইয়ে ভাইয়ে ভিনু হলো,
জাতপাত ধর্ম দিয়ে বাংলার জমিন
চিরে দু' ফাঁক করে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা
সেই তারাই আজ–
মেটিয়া বুর্জের ওই মাটির কেল্লায়
গায়ে গেরুয়া জড়িয়ে
ভিন ভাষীয় হুংকারে
জয় শ্রীরাম হরে হরে ক'রে
ছেচল্লিশকে আহ্ববান করছে।
আমরা ছেচল্লিশের কোলকাতা দেখেছি
দেখেছি পাঞ্জাব বিহার এবং নোয়াখালীর তান্ডব।
একবিংশের শুরুতেই পেলাম গোধরা আর অযোধ্যা।
ভারত ভাগের পৌনে এক'শ বছরে আজ এ কোন্ অশনি
বাংলার অপর প্রান্তে!!
আটপৌঢ়ে হাওয়াই চটির ষাটোর্ধ
এক বাঙালী রমনীকে পরাস্ত করার
এ কোন্ মরন খায়েশ!
আত্মাহুতির সার্বজনীন আয়োজন।
তাইতো বলতে ইচ্ছে করে-
আপন অস্মিতার জৌলুসে বাঙালী-
“জাগো বাহে কুন্ঠে সবাই”।
০ -