একজন রণ, একজন মনিকা ও আমি
রতন কুণ্ডু
প্রকাশ: ১০:০৯ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারী,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৪২ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
প্রিন্স অফ ওয়েলসের নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগের রোগীতৈরীকরন কক্ষে একটি রিক্লাইনার সোফায় আরাম করে বসেআছি | প্রফেসর ম্যান্ডিন সাথে এক জুনিয়র, নাম রডনি |
- কেমন আছো আজ ?
- ভালো প্রিয়ো | তুমি কেমন আছো প্রোফ-?
- আমিও ভালো | আজ তোমার জন্য এক সুদর্শনা যুবতী নার্সকে নিয়োগ করেছি | নার্সিং কাউন্টারে অঙ্গুলি নির্দেশ করে একজনকে দেখালো | ও হলো মনিকা |
মনিকা আমার চেয়ারের কাছে চলে এলো | হাই ! আমি মনিকাবলে হাতটা বাড়িয়ে দিলো | আমি যথারীতি আলতো করে মর্দনকরলাম |
- তোমার সাথে মিলে ভালো লাগলো |
- আমারো | তুমি কি ইন্দোনেশিয়া থেকে এসেছো ?
আমি বলি না, কেনো বলোতো ?
- তোমাকে দেখতে অনেকটা ওখানকার মতো !
- হ্যা লন্ডনে একটি পার্টিতেও দুটো ইন্দোনেশিয়ান মেয়ে আমাকেএকই প্রশ্ন করেছিলো !
- তুমি নিশ্চই ইন্দোনেশিয়ান ?
তিনি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালেন | মেয়েটি যুবতী, ফর্সা, মাঝারিগড়ন যেমন এশিয়ানরা হয়ে থাকে কিন্তু ব্যতিক্রম হলো; তাঁরবুকগুলো অনেক বড়ো আর উন্নত, পেছনটা অনেক ভারী আরচোখগুলো অতটা কুলকুতে নয় তবে টানা টানা | তাঁর কথায়সম্বিৎ ফিরে পেলাম |
- তোমার অপারেশন রিপোর্ট দেখলাম | দুটো অপারেশনই নিখুঁত হয়েছে | যেহেতু খারাপ কোষগুলো আশেপাশে ছড়িয়ে গেছে ডাক্তার কেমো দেবে | আমি তোমাকে নার্সিং করবো | আর তোমাকেফাইনাল করার জন্য তৈরী করবো |
আমার হাসি পেলো | কি বলছে মেয়েটি ; আমাকে ফাইনাল করেদেবে ! আমি মজা করলামঃ
- তোমার মতো মেয়ের হাতে ফাইনাল হতে পারা সৌভ্যাগ্যের |
মেয়েটি লজ্জিত হলো | আমার ভাষা হয়তো ঠিক হয়নি | আমিবলতে চেয়েছিলাম - আমি তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললাম
আমি বুঝতে পেরেছি | তুমি অনেক সুন্দর করে কথা বলো | মেয়েটিলজ্জিত হলো |
- আর কিছু ? আমি উৎসাহিত হলাম বললাম তুমি দেখতেও অনেক সুন্দর ! তোমার ব্যবহারও অনেক সুন্দর | মেয়েটি কাছে এসে আমার বাহুতে রক্তচাপ মাপার গাস্কেটটি মোড়াতে মোড়াতে বললো আমার আর কি কি সুন্দর ? আমার হাতটা র্যাপ করার সময় দুর্ঘটনাবশতই হবে তাঁর নরম বুকে গিয়ে লাগলো | আমি নির্লজ্জের মতো বলে ফেললাম
- তোমার বুক আর নিতম্ব অদ্ভুত সুন্দর ! মেয়েটি লজ্জিত হয়ে আমার হাতের স্পর্শ থেকে নিজেকে একটু সরিয়ে নিয়ে বললো
- গ্লেনও ঠিক একই কথাই বলতো !
- গ্লেন কে ?
- ও আমার এক্স বয়ফ্রেন্ড, ব্যাক প্যাকার, লন্ডন থেকে এসেছিলো| কয়েকটা মাস ভালোই ছিলাম | তারপর থেকেই খিটিমিটি শুরু করে দিলো | আমার অনেক দোষ; আমি কাপড় চোপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখি, বাসন পত্র সিংকে ফেলে রাখি, প্লাষ্টিক ব্যাগ, কার্টুন ডাম্প করে রাখি, টয়লেটে বদনা ব্যবহার করি, বিড়ালের মতোগুটি মেরে ঘুমাই ! আমি বললাম: তুমি এক দেশের আমি অন্য দেশের | আমি আস্তে অস্তে শিখে যাবো | সে আমার কথার কোনো উত্তর দিলোনা | ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো | রাতে আলাদা ভাবে শোয়া শুরু করলো | বাইরে থেকে খেয়ে আসতো | বুঝতাম আমাকে আর সে ভালো বাসেনা ! আমার রান্না সে খেতে পারেনা ! আমার সব কিছুই তার অপছন্দ ! একদিন বললাম - গ্লেন আমি বুঝতে পারছি তুমি আমাকে নিয়ে হ্যাপি না ! তুমি ইচ্ছে হলে লিয়ানার কাছে চলে যেতে পারো | সে চমকে উঠলো !
এর মধ্যে রেজিস্টারার চলে এলো |
- সিস্টার ক্যানুলা লাগিয়েছো ?
প্রথম ইনফিউসন দেবো | মনে রাখবে একটি ইঞ্জেকশনের দাম ৩৭৮৬ ডলার | ড্রিপ এ দিতে হবে | একঘন্টা রুগীর পাশে বসে তাঁর বিপি, হার্টরেট, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া, অক্সিজেন লেভেল মনিটর করতে হবে | কোনো সমস্যা হলে আমাকে কল করবে | মনিকা তাঁর অগোচরে মুখ ঝামটা দিলো | তার মুখ ঝামটায় আমি একজাতীয়বিজাতীয় ঘৃণা আর কষ্ট দেখতে পেলাম | রেজিস্ট্রারার চলে যেতেইইনফিউসন রেডি করে আমার পশে এসে বসলো | আমার হাতটাতার হাতে তুলে নিয়ে পালস দেখতে লাগলো | আমি সেখানে অন্তরঙ্গতার ছোয়া অনুভব করলাম | হয়তো এমন হতে পারে আমিতাঁর জীবনের গল্প শুনতে শুনতে অনেকটাই বিমোহিত হয়েছিলাম| আমি বললাম - হ্যা তারপর বলো | সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়েবললো
- না ওকথা থাক | আমি তোমাকে তোমার ইনফেউসনের ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলি | তোমাকে গত পরশু আর গতকাল দুটো ইনজেকশন দেয়া হয়েছেনা ! আমি বলি হ্যা | সে বললো এই ইনজেকশন দেয়াটা আমাদের দেশে বিয়ের কনে প্রস্তুত করার মতো | আমি বললাম
-ভেরি ইন্টারেষ্টিং তো ! আচ্ছা তুমি ইন্দোনেশিয়ার কোন প্রদেশ থেকে এসেছো ?
- বালি থেকে |
- তুমি কি হিন্দু? শুনেছি বালিতে অনেক হিন্দু আছে ! সে ইতিবাচক উত্তর দিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো | তুমি ?
- হ্যা আমিও | জন্মসূত্রে |
- জন্মসূত্রে বলছো কেনো ?
- না হয়কি এই প্রবাসে ধর্মীয় আচার আচরণতো সঠিকভাবেপালন করা হয়না ! এই আর কি ! আচ্ছা তোমার মজার ব্যাখ্যাটাশুনি ? মনিকা মুচকি হাসলো
- আমাদের বালিতে একটা মেয়ে যুবতী হলে তাকে যৌবনে তাকেএক বসনে প্রামবানান মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয় | তখন মন্দিরের পুরোহিত ধুপ মোমবাতি জ্বালিয়ে কামদেবীর পূজা করেন | মেয়েটিকে ডিম আর নারকেলের জল দিয়ে স্নান করানো হয় | তারপর সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে মেয়েটি শিব নামের একটি পাথরের উপর গাভীর দুধ আর জল ঢেলে প্রার্থনা করে | খুব মজার না ? আমি হ্যা সূচক উত্তর দিতে সে আরো উৎসাহিত হয় | হ্যা তারপর কি হয়জানো ! মেয়েটির সম্বন্ধ ঠিক করে সমাজ | বিয়ের কয়েকদিন আগেহয় অভিষেক | বেনসাইতিয়েন মন্দিরে নেয়ার আগে তাকে মহিলা নর সুন্দর দিয়ে তার বগল ও গোপন অঙ্গ পরিষ্কার করা হয় | হাউ ফানি ! আমি হেসে উঠতেই সে বলে এটা সামাজিক রীতি | অনেকদিন ধরেই চলে আসছে | বিয়ের একদিন আগে হয় অধিবাস | ওই সময় তাকে দুধ হলুদ দিয়ে স্নান করানো হয়, মেহেন্দি লাগানো হয়, আরো কত কি ! আমি বললাম -এগুলো করা হয় কেন ? সে বললো তাকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সঙ্গমের জন্য তৈরী করা হয় | আমি বললাম -এবার বুঝতে পেরেছি| তোমরা আমার ফাইনাল করার আগে এই নানা প্রকার ইনজেকশন দিয়ে তৈরী করছো | মনিকা এবার হেসে ফেললো - এক্সাক্টলি !
এর মাঝে টেলিফোন বেজে উঠতেই সে মাফ করো বলে টেলিফোন রিসিভ করতে উঠে গেলো | ফোন সেরে মুখটা বিরক্তিতে মেখে পাশের চেয়ারে এসে বসলো | আমার সেই লম্পট বুড়োটা আসছে! ৯৭ বছর বয়স ! এখনো আলুর দোষ যায়না !
- কেনো কি হয়েছে ?
- কাছে গেলেই হাত ধরে টেনে নিয়ে সুড়সুড়ি দেয় | মাথাতো জাগাতে পারেনা তাই ঠোঁট সরু করে দূর থেকে চুমু খায় |
আমি তার কথার ভঙ্গিতে না হেসে থাকতে পারিনা !
- এতে দোষের কিছু নেই আমার মনে হয় ! যে দেশের যা ! আমার ডিপার্টমেন্টের অনেক মেয়ে সহকর্মী তো আমাকে জড়িয়ে ধরে চুকচুক করে চুমু খায় ! তার মধ্যে মধ্য প্রাচ্যের মেয়েরা বেশি খায় | তোমাকে খায়না কেউ ?
- খায়না আবার ! সুযোগ পেলেই খায় | তখন গা টা রি রি করেওঠে | তার কথা শেষ না হতেই এক বুড়োকে নিয়ে একটা জমকালোট্রলি আমার বেডের ঠিক পাশেই এনে পার্ক করলো | ওই বেডটাইএকটা আই সি ইউ | হার্ট, পালস, অক্সিজেন, স্নাযুক্রিয়া মনিটরিংসংযোগ দেয়া আছে | আছে ব্লাড প্রেসার, তাপমাত্রা মাপারঅত্যাধুনিক ডিভাইস | মনিকা বললো এই বেডগুলো এম্বুলেন্সব্যৱহৃত হয় | ট্রানজিট ইমার্জেন্সি কভার করার জন্য |
বুড়ো আসতেই মনিকা জিজ্ঞেস করলো
- কেমন আছো রণ ?
- ভালো আছি | থ্যাংকস লাভ বলেই যথারীতি ঠোঁট সুচালোকরে চুক করে শব্দ করলো | মনিকা একরাশ বিরক্তি নিয়ে তারদিকে পেছন ফিরে বসে অহেতুক আমার হাতটা টেনে নিয়ে পালসগুনতে লাগলো | এর মধ্যে বুড়োটা হাই হাই বলে আমার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করলো | তার দিকে ফিরলেই সে ফ্যাসফেসেগলায় বলে উঠলো
- হাই আমি রণ | তোমার নাম কি ? আমি বললাম
তোমার নামের মাঝে একটা ত বসিয়ে দাও | সে বললো দুর্ভাগ্যজকইংরেজিতে “ত” নামের কোনো বর্ণ নেই | আমরা “টি” দিয়েই সবচালিয়ে দেই | আমার বয়স এখন ৯৭ | আমি মরতে চাই কিন্তুরোজ এর জন্য মরতে পারিনা ! এইতো সে এসে গেলো ! হাইডার্লিং তুমি এসে গেছো ! আমি মনে মনে তোমাকেই খুজছিলাম |
রণকে আমার কাছে খুব অদ্ভুত মনে হলো | মনে হচ্ছিলো সেমানুষের মন পড়তে পারে এবং ভবিতব্য দেখতে পায় | রোজি যখন কাছে থাকেনা তখন সে কারুর কাছে না বলা কথা, তার জীবনসংগ্রাম, তাঁর তৃপ্তি, তাঁর অতৃপ্তি নিয়ে কথা বলতো | তাঁর কিছু আপ্ত বাক্য আমি আমার মনের খাতায় লিখে রেখেছি:
-তোমার ঘাঁ কারু সামনে উম্মোচন করবেনা কারণ পৃথিবীতে খুবকম লোকই আছে যাঁরা তোমার সেরে উঠা কামনা করে |
-কখনো ইতর প্রাণীর সাথে লড়াইয়ে যাবেনা | তুমি জিতলেও তোমার বদনাম হবে | লড়াই যদি করতেই হয় তাইলে সিংহের সাথে লড়াই করে জিতে আসো | সুনাম ছড়িয়ে পরবে |
-বিজ্ঞজনেরা যে গুহায় ঢোকার চিন্তাও করেনা ইতর প্রাণী সেখানে অবলীলায় ঢুকে যায় |
-একটা জিনিস মনে রাখবে তোমার চরিত্র তৈরী করবে তুমি , ভালো কাজ করবে তুমি তখনই অন্য সবাই সুনাম করবে |
-জীবনটা একটা বইয়ের মতো | এর অনেকগুলো চ্যাপ্টার আছে | সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা, সাফল্য, ব্যর্থতা | ওই বইয়ের পাতাতোমাকে উল্টিয়ে তার চ্যাপ্টার পড়ি পরিবর্তন করতে হবে |
-মানুষের চোখ সব দেখতে পায় কিন্তু তার ভেতরে কিছু প্রবেশকরলে চোখ তা দেখতে পায়না | সেরকম মানুষের ভেতরকার পশুপ্রবৃত্তি নিজে দেখতে পায়না | তাই তাঁকে অন্যের সমালোচনা গ্রহণকরে নিজেকে শোধরাতে হবে |
একজন পোর্টার এসে রণকে বললো তোমার টেস্টগুলোর রেজাল্ট ভালো না | তোমাকে আই সি ইউ তে যেতে হবে | রণ বললো আমিজানি | রণ ধরা গলায় স্ত্রীকে ডাকতে লাগলো
- রোজ কোথায় গেলে তুমি ? তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই | একবার কাছে এসো হানি | আমার হাতটা ধরো | আমাকে ওরা নিয়ে যাচ্ছে | আমার হাতটা ধরো | আই লাভ ইউ রোজ | আইলাভ ইউ |
রোজকে কোথাও পাওয়া না গেলে পোর্টার তাঁর বেডটি ঠেলে আইসি ইউতে নিয়ে যাচ্ছে আর রণ ডিমেনশিয়ার রোগীর মতো বলেই যাচ্ছে - কোথায় গেলে রোজ ! আই লাভ ইউ রোজ | আমি মন্ত্র মুগ্ধের মতো তাঁর আকুতি শুনতে লাগলাম |
ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিক্যাল সাইন্স এ আমার মস্তিষ্কের কার্যক্রম পরীক্ষার জন্য ই ই জি করা হলো | স্পেকট্রাম এ গিয়ে এমআর আই করিয়ে যখন ফিরে আসলাম তখনই দুঃসংবাদটাপেলাম | মনিকা বললো
- আই সি ইউতে নেয়ার আগেই রণ চলে গেছে | আমার গলা দিয়েএকটি শব্দই বেরুলো - ও মাই গড ! বলো কি !
আর বেশিক্ষন কথা হলোনা মনিকার সাথে | পোর্টার এসে আমাকে লেভেল ৮ এ আইসোলেশন রুমে নিয়ে আসলো | প্রফেসর ম্যান্ডিন, ড. রডনি সহ দুজন নার্স এসে কেমো ক্যাপসুল গিলিয়ে গেলো | নিশ্চিত হয়ে তাঁরা বের হয়ে দরজা লক করে দিলো| এখানে একা তিনদিন তিনরাত কাটাতে হবে |
তিন দিন পরে ছাড়া পেয়ে আমি নিচে গেলাম রেডিয়েশন চেক করতে | রোগী তৈরী করার রুমটির দরজা বন্ধ | কিন্তু তার মধ্য থেকে আমি রণের আর্তি শুনতে পেলাম
- ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে | আই লাভ ইউ হানি ! আই লাভ ইউ! আই লাভ ইউ ! সন্দেহ হলো মনিকা তাইলে আমাকে মিথ্যাবলেছে ! রণ তাহলে মারা যায়নি ! আমি সন্তর্পনে দরজা ঠেলেদেখি ভেতরে কেউ নেই ! সন্দেহ হলো এটা কি হেলুসিনেশন ! কাউন্টারে মনিকার সাথে দেখা হলো |
- হাই মনিকা, আজ আমি বাসায় চলে যাচ্ছি !
- আমি জানি | একটু দাড়াও রণ তোমার জন্য একটা বই রেখেগেছে | বইটা দিয়ে মনিকা আমাকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু খেলো | বাই হানি !
কয়েকটি স্টেপ পার হতেই অনুভব করলাম আমার চোখ ভিজেযাচ্ছে | কারণটা খোঁজার চেষ্টা করলাম | আমার চোখের জল কার জন্য ! মনিকা, রণ না সবার জন্য !