মাধবী-১৫৭
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৭ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ০৮:১৬ পিএম, ৮ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
মাধবী,
শঙ্খ ঘোষের ঐ কবিতা মনে আছে? ঐ যে, শূণ্যতা নিয়ে একবার তোমাকে আবৃত্তি করে শুনিয়েছিলাম, কবিতা পাঠের সময় তুমি অপলক চেয়েছিলে আমার মুখের দিকে, বদ্ধ মাতালের মতো আমাকে গোগ্রাসে গিলে খেয়েছিলে, পরে বলেছিলে কিছুই শুনোনি, তাই আবার শুনিয়েছিলাম, তুমি বলেছিলে কবিতার চেয়েও আমার পাঠের রং ঢং তোমার পছন্দ, আমি হেসেছিলাম, বলেছিলাম এ সবই ভালোবাসার অন্ধত্ব,
যাকে ইংরেজীতে বলে Chauvinism. সোনাঝরা দিনে যখন তোমার শূন্যতাই পুড়ি, তখন শঙ্খ ঘোষের ঐ কবিতার মত তোমাকে শুধোয়, ‘শুন্যতাই জানো শুধু? শুন্যের ভিতরে এত ঢেউ আছে, সেকথা জানো না?’
মাধবী,
তুমি তো বিশ্বাস করতে প্রেম শ্বাসতঃ, প্রেম সুন্দর, প্রেম আরাধ্য! তবে ইদানিং দূর্মুখেরা বলছে প্রেম নিকোটিনের মত, গন্ধ বিধুর, বারুদহীন জ্বালানী, ক্যান্সারের মত মরনঘাতি, প্রতিদিন মৃত্যুর দূয়ারে দাঁড় করায়, সিগারেটের সুখটানের মত সব পুড়িয়ে একরাশ ভালোলাগা রেখে যাওয়া অনুভব, ইত্যাদি ইত্যাদি। গোঁড়ারা, যারা প্রাচীন Orthodox theory তে বিশ্বাস করে, তাদের মতে, প্রেম মানুষের জীবনে একবারই আসে, সে কথা তুমিও ধারন করো। তাই, তোমার প্রেম সেই একই বৃত্তে আটকানো, সেখান থেকে বের হতে পারো না, সেই উপেক্ষিত হওয়ার যন্ত্রনায় কল্পনায় এসে আমার হৃদয় খুঁড়ে রক্ত পিপাসা মেটাও। তোমার এ পথ ভুল, এই ধারনা মিসকনসিভড, এই ধারনা মৌলবাদী। এর আগে কোন এক সংখ্যায় তোমাকে লিখেছিলাম এ তল্লাটের এক নামকরা রাজনীতিবিদের প্রেমের কথা।আজ আবারও সেই গল্প তোমাকে শোনাতে চাই, তোমার পাঠকরাও জানুক তোমার Orthodox কিংবা Chauvinist চিন্তা চেতনার মিসকনসিভড আইডিয়া সম্পর্কে। সেই ভদ্র মহিলা তোমার মত অত বড় না হলেও, তিনি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, তাঁর বাবা ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, সন্তানও তাই ছিলেন, তিনিও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারত শাসন করেছেন। তিনি আর কেউ নন, তিনি ভারতের এ যাবতকালের একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, তিনি আজ বেঁচে থাকলে হয়তো তোমার এই বিশ্বাসের বিরোধিতা করে তাঁর জীবনী পড়তে বলতেন।
মাধবী,
ক্যাথেরিন ফ্রাঙ্ক এর ‘দ্য লাইফ অব ইন্দিরা নেহেরু গান্ধী’ বই থেকে জানা যায়, ইন্দিরা গান্ধী একাধিকবার প্রেমে পড়েছিলেন। তাঁর প্রেম-বিরহের সুনিপুন সত্য তুলে ধরেছেন ক্যাথেরিন ফ্রাঙ্ক। যুক্তরাজ্যে পড়াশুনা করতে যেয়ে ইন্দিরা প্রেমে পড়েন পারস্য যুবক, সাংবাদিক ফিরোজ গান্ধীর, তাঁদের পরিনয় হয় ১৯৪২ এ। তাঁদের প্রেম বিয়েতে লীন হয়, ক্ষয়ে যায়, বিয়ে বিচ্ছেদ না হলেও দু’জনে দু’জনাতে তিক্ত হয়, দু’জনেই বেছে নেয় একাধিক প্রেমের পথ। ফিরোজ একজন মুসলিম মেয়ের প্রেমে বুঁদ হয়ে যায়, অন্যদিকে ইন্দিরা প্রেমের সাগরে ঝাঁপ দেন শান্তিনিকেতনে কর্মরত এক জার্মান শিক্ষকের।গত বছর শান্তি নিকেতন ভ্রমনের সময় ইন্দিরা গান্ধীর ছাত্রাবস্থায় শান্তিনিকেতনের যে রুমটায় থাকতেন সেই রুমের জানালার কার্নিশ ছুঁতোয় এসেছি আমি। ১৯৫০ সালে ফিরোজ গান্ধীর সাথে বিচ্ছেদের পর ইন্দিরা তাঁর বাবার সচিব এম ও মাথাইয়ের প্রেমে পড়েন, সেই প্রেম প্রায় বারো বছর দীর্ঘায়িত হয়েছিল, কথিত আছে এ সময় একবার গর্ভপাতও করিয়েছিলেন ইন্দিরা। মাথাই পর্ব শেষ করে ইন্দিরা প্রেমে পড়েন তাঁর যোগ শিক্ষক বিহারী যুবক ধীরেন্দ্র ব্রহ্মচারীর। এসব ঘটনা ইতিহাসবিদ এস. গোপালের বইতেও পাওয়া যায়। এরপর ইন্দিরার জীবনে আসে দিনেশ সিং, যিনি জওহর লাল নেহেরুর মন্ত্রিসভার বিদেশমন্ত্রী ছিলেন। ইতিহাসবিদরা বলছেন, ফিরোজ গান্ধীর সাথে সম্পর্ক থাকাকালেই মোহাম্মদ ইউনুস নামে এক মুসলিম যুবকের প্রেমে পড়েন ইন্দিরা। ‘নেহেরু ডায়নাস্টি’ বইতে কে এন রাও লিখেছেন, ইন্দিরার ছোট ছেলে সঞ্জয় গান্ধী মূলত ইন্দিরা-ইউনুসের ছেলে, সঞ্জয় মানেকাকে বিয়ে করায় ইউনুস ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। মোহাম্মদ ইউনুস তাঁর ‘পারসন, প্যাশন এন্ড পলিটিক্স’ বইয়ে লিখেছেন, শিখ মেয়ের সাথে নিজের ছেলে সন্জয়ের বিয়ে মেনে নিতে পারেনি সে। এত কিছু জানার পরও কি তুমি বলবে মানুষের জীবনে একবারই প্রেম আসে?
মাধবী,
মাধবী আর তোমাকে লিখতে ইচ্ছে করে না, আর হয়তো লিখার ইচ্ছে হবে না কিংবা সুযোগ পাবো না! দু’চোখে ঘুম নেই, ক্লান্তি আমাকে জেঁকে বসেছে, আর পারছি না, ক্ষমা করে দিও মাধবী! আমার সব জনমের নিত্য সাথী হয়ে থাকবে তুমি! রুদ্রের মত করে শেষ বারের মত করে বলছি,
কিছু দীর্ঘশ্বাস জমা হয়ে থাকবে বুকে
কিছু অশ্রু থেমে থাকবে চোখের নিকটে
ঝরাবে না শিশির।
শুভ রাত্রি
মোঃ আসাদুজ্জামান
আইনজীবি এবং রাজনৈতিক কর্মী
১৮ নভেম্বর, ২০২৪।