avertisements 2

মাধবী-১৫৩

মো: আসাদুজ্জামান
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৮ অক্টোবর,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ০৬:১৬ এএম, ৩০ অক্টোবর, বুধবার,২০২৪

Text

মাধবী,

কাক ডাকা ভোরে নিত্যদিন আমি কাজে যাই, পরিযায়ী শ্রমিকের মত, তবে তাঁদের সাথে পার্থক্যের সীমারেখা আছে, তাঁরা কাজ শেষে গোধূলী বেলায় সূর্যাস্তের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে  বাসায় ফিরে সাঁঝের বাতি জ্বালতে পারে, আর আমি পারি সেই মাঝ রাতে নিয়ন বাতির আলো কিংবা মাঝ আকাশে চাঁদ-তারা দেখতে দেখতে বাসায় ফিরে নিথর-নিস্তেজ দেহ নিয়ে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়তে! দিনে দিনে এই জীবনের রুপরেখা চারপাশের মানুষ থেকে আমাকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে! আমার আজন্মের সাধনায় তুমি ছিলে, কাজের ফাঁকের সবটুকু সময় তোমার সাথে কথা বলে, খুঁনসুঁটি করে কাটাতাম, আমার রক্তের প্রবাহ বাড়তো,  সতেজ হতাম! সেই তুমিও স্মৃতির এ্যালবাম থেকে হারাচ্ছো, কল্পনায় তোমার সাথে কথা বলা শেষে কথার সারমর্ম করে রেখে দিতে হয়! এই তো জীবন, আহারে জীবন, এভাবেই তুমিহীন পটভূমিকায় শেষ হবে, হয়তো রবি ঠাকুরের লিরিক্সের মত  কখনো মনে হবে, ‘তুমি কি কেবলই ছবি’ ! 
মাধবী,
সেই কবে, কোন এক প্রাগৈতিহাসিত যুগে তোমাকে  লিখেছিলাম, নজরুল থেকে ধার করে লিখেছিলাম, 
 ‘ তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন,
  সে জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন ‘
আজ, জীবনের এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে সত্যিই উপলব্ধি করছি তোমাকে ভোলা সত্যিই কঠিন। তুমি আমার কল্পনায় অতীত হতে চেয়েছো, আমাকে বিদায় বলতে চেয়েছো,  কিন্ত তুমি কি জানো মাধবী, ইতিহাস কখনো বিদায় বলেনা, বলে পরে দেখা হবে! তাই, ‘তুমি কি কেবলই ছবি’ উপমা হয়তো তোমার জন্য কখনো প্রযোজ্য হবে না, তুমি ইতিহাস হলেও হতে পারো, ইতিহাসের অমোঘ নিয়মেই ইতিহাসের উপমার মতই দেখা হলেও হতে পারে! 
মাধবী,
তুমি আমার জীবনে নিযুত ওযাটস এর নিয়ন বাতির আলো, আমি সেই আলোর চারপাশে ঘুরে বেড়ানো পতঙ্গ। আমি তোমার আলোয় পতঙ্গ হয়ে ঝাঁপ দেই, নিজেকে শেষ করে দেই, ফিনিক্স পাখির মত আবার জেগে উঠি, আবার ঘুরি, আবার পুড়ি! এইতো জীবন, পতঙ্গের মত তোমার আলোর চারিদিকে বেঁচে থাকা জীবন আমার, আহারে জীবন আমার! এই জীবনের মাঝেও মাঝে মধ্যে মনে হয় জনম জনমের বিষন্নতা আর তোমার শূণ্যতাই আমার প্রাপ্য, এই জীবনের সবটাই তো  তোমার উপেক্ষা আর তোমার দেওয়া একাকিত্বের থেকে উৎসারিত। ইদানিং কল্পনায় এই একাকিত্ব, এই উপেক্ষা থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখি, কল্পনায় তোমাকে কাছে পাই, চোখ বুঁজলেই অনুভব করি আমার আজন্মের কাংখিত তোমার  ঠোঁটের উষ্ণ আলিঙ্গন! তখন আর নিজেকে পতঙ্গ মনে হয় না। 
মাধবী,
দেখতে দেখতে উত্তরা, কুড়িল, কাকলী, মহাখালী, মগবাজার হয়ে কোর্টে পৌঁছে গেলাম, তোমাকে লেখার  জন্য বরাদ্দকৃত সময় ফুরিয়ে এলো। আজ মনটা কোন অজানা কারনে এলোমেলো, বিষন্নতার চাঁদরে ঢাকা চারিপাশ! এখানে কেউ নেই, কল্পনায় তুমি ছিলে, সেই তুমিও শীতের কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা, তুমিও লীন হয়ে গ্যাছো। তারপরও তোমাকে ফিরাতে চাই জীবনানন্দের মত করে অনুরোধে, উপরোধে! তোমাকে যদি জীবনানন্দের সুরন্জনা বলে ডাকি, যদি ডাক দিয়ে বলি, ফিরে এসো সুরঞ্জনা, নক্ষত্রের আগুন ঝরা রাতে, আসবে তুমি? 


মোঃ আসাদুজ্জামান
আইনজীবি এবং রাজনৈতিক কর্মী

                

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2