ভবন সমাচার-২
অজল জালাল
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২১ অক্টোবর,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ০৮:০৬ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
আমি হাওয়া ভবন দেখিনি
সুধা ভবন-সেটাও দেখা হয়নি
তবে গনভবন! ওটা দেখেছি।
দেখেছি ওর লৌহ প্রাচীর-
আট ফুট উঁচু শক্ত দেয়ালে
ত্রিশুলের মত উর্ধমুখী লৌহদন্ড গাঁথা
এক মজবুত আয়োজনের নিরাপত্তা।
পঞ্চাশ ফুট গ্যাপে নিরাপত্তা খোঁপে -
অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত অতন্দ্র
প্রহরীর বাজখাঁই দৃষ্টিবদ্ধ চোখ।
দক্ষিণ-পশ্চিম ফটকে নিরাপত্তার বহর
প্রাচীরের বহি:ফুটপাতে দশফুট অন্তর
বিড়াল চোখা সজ্জিত প্রহরীর দল
সাইজটাও বেশ! এভারেজে পাঁচ ফুট।
শুনেছি শতবর্ষীয় বিশেষ বাহিনী
ওরা বিশ্বাসের মুর্ত প্রতীক।
চর্ম চক্ষে দেখা ঐ সুরক্ষার বহিবারন-
কিন্তু অন্দর! বাহাত্তর একর জমির ঘেরে
কি আছে? কে থাকে? কোন আয়োজনে!
যেন তেন নয় পাকা বাহাত্তর একর জমি
বিশাল এক রাজকীয় আয়োজন।
দাতা হরিশ্চন্দ্র হাজি মহসিনের অধ:স্তন-
বাঙালী আমরা, বড় দয়ার শরীর
আইন করে লিখে দেয়া পিতৃ ঋনের দায়
ঔরষজাত প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ওটি-
পরম্পরা উত্তরসুরীর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত।
বাহ্, বেশ তো! কি চমৎকার শান্তির নীড়।
হবেই বা না কেন, ভাষা দিল দেশ দিল
পতাকা মানচিত্র সবই তো পেলাম-
ওই মহা মানব খ্যাত নেতার হাত ধরে।
অকস্মাৎ দাবানলের দমকা হাওয়া
জিঘাংসার গরলে নির্বংশ পিতৃ পরম্পরা!
বাঙালী এতিম হয়, বেঁচে যায় পরম্পরার
টিমটিমে বাতি-পিতৃ রক্তের সুতি দুইজন।
ঘরের মেয়ে তারা, ঘটপুজো দিয়ে
বরন করা হয়-পিতৃঋণ বলে কথা!
বাঙালী উজাড় করে দিয়েছে তাদের সব
একছত্র আধিপত্যের ইতিহাস ঐতিহ্যে পিতা-পুত্র-কন্যা-স্বজন, শেকড় বাকড়-
মন্ত্রী এমপি চুম্বকীয় বড়সড় পদ শ'খানেক
তারাই সব, দন্ডকারন্যের ছত্রপতি যেন।
পিতার কন্যা বলে কথা! ভীম বাহুবলে
ক্ষমতার উলঙ্গপনা - বাকশালীয় রূপ।
জামানার স্বৈরশাসক-একমেবাদ্বিতীয়ম।
নেই কোন রাজনীতি ক্ষমতার দাপাদাপি
কোটা বাতিলের মেধাবী আবেদন
তরুন যুবাদের মেধার স্বীকৃতি
সেটাই কাল্ হোল গণভবন বাসীর।
ক্ষমতার জোশ - তুড়ি মেরে দমাতে চায়
পনের বছরে গড়া শৃংখলার নলে!
জগদ্দল পাথর হয়ে পনেরটি বছর
ঘৃণার দু:স্বপ্নে আজ স্বৈরশাসক বটে।
আজ নেই কিছু - শুধুই খোলস
হাড়জিরে জীর্ণ বাঙালীর মত।
কালের সাক্ষী যেন পতিত আবাস ভূমি
জনতার জমে থাকা জিঘাংসার রেশ
বিষাক্ত গরলে তা চূর্ণ হয় এক লহমায়
ছাত্র-জনতার রোষ, একি সেই গণভবন!
পিতৃভক্ত শিরোমনির দেশভক্তি! রাজনীতি!
পলাতক তিনি, বন্ধুবেশী প্রতিবেশীর ঘরে।
বাঙালী অস্মিতার দ্যুতি ছড়ানো
অন্তিম ঠিকানা এই গণভবন
বড় আশা করে নাম দেয়া হয়
গন মানুষের নাম জুড়ে দিয়ে।
ছিল তা অতিথিশালা করতোয়া নামে
ভালবেসে অবশেষে গণভবন হয়।
পিতৃকন্যার স্বৈরাচারী চন্ডালিনী রূপ
গণভবন বিদ্ধস্ত হয় গণ সংহারে।
(ইদানীং রচিত,২০২৪)