মাধবী-১৫১
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১০ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২৪ | আপডেট: ১০:০১ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
মাধবী,
সোস্যাল মিডিয়ায় দেখলাম উর্মি নামে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া রংপুরের আবু সাঈদকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে মাননীয় প্রধান উপদেস্টাকে, তাঁর সরকারকে, সরকারী কার্যাবলীকে অনেক সমালোচনাও করেছেন, যা ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। ঐ স্ট্যাটাসের উপর পক্ষের চেয়ে বিপক্ষেই বেশী মন্তব্য এসেছে। স্ট্যাটাসটি কয়েকবার দেখলাম, শুনলাম, পড়লাম, বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে এটা আমি দেখছি, শুনেছি বা পড়ছি! মনে হচ্ছিলো এটা মনে হয় দুঃস্বপ্নর মধ্যে দেখলাম, শুনলাম, পড়লাম। শরীরে চিমটি কাটলাম, পরক্ষণেই অনুভব করলাম আমি জেগেই আছি। বন্ধু সালেহ উদ্দিনের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে দেখলাম উর্মির মা নাসরিন জাহান দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন, উর্মি এই স্ট্যাটাস দিয়ে সরকারী চাকুরী বিধি লংঘন করেছে। উর্মির মায়ের এই নির্মোহ মতামত নিঃসন্দেহে সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে, উর্মির ঐ অনাকাংখিত স্ট্যাটাস পড়ার ঘোর কাটতে না কাটতেই একজন বিশিস্ট আইনজীবীর সাক্ষাৎকার দেখলাম, তিনি তাঁর মত প্রকাশের স্বাধীনতা চর্চা করে উক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর বক্তব্যকে এমনভাবে সমর্থন করেছেন, স্যালুট জানিয়েছেন যে, যেটা দেখে আরও বেশী হতবিহবল হয়ে পড়লাম। আবু সাঈদ গোটা মিডিয়ার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বকে দেখিয়েছে কিভাবে অধিকার আদায়ের জন্য বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দিয়ে জীবন দিতে হয়! এই চিত্রের মধ্যে কোন রং ঢং ছিলো না, কোন এডিটিং ছিলো না, কোন চাতুরতা ছিলো না, শুধু একবুক সাহস আর দেশপ্রেম ছিলো। সেই অবদানকে এতটা ছোট করে উর্মি নামের ম্যাজিস্ট্রেট স্ট্যাটাস দেওয়া যতটা না আমাকে বেদনার্ত করেছে, তার চেয়েও অনেক বেশী আহত হয়েছি ঐ জৌষ্ঠ আইনজীবীর টেলিভিশনে দেওয়া স্বাক্ষাতকার দেখে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার আইনী ব্যাখ্যায় এটা কোনভাবেই আসেনা, সংবিধানের মৌলিক অধিকার অধ্যায়ের ৩৯ অনুচ্ছেদে এটা কোনভাবেই কাভার করেনা। উপরন্তু সরকারী চাকুরীজীবী একজনের জন্য তো নয়ই! আমি কিছুতেই মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে শহীদ আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী বানানো এই মত প্রকাশকে সমর্থন করতে পারি না, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়, হচ্ছে! ভাঙাচেরা হৃদয় আমার, নিত্যদিন তোমার অত্যাচারে ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত, তারপর মতপ্রকাশের নামে এই বেদনার্ত স্ট্যাটাস আমাকে ঘুমোতে দিচ্ছে না। আমি ব্যথিত, মর্মাহত, বাকরুদ্ধ, যারপরনাই ক্রোধান্বিত। তুমি সামনে থাকলে এক লহমায় হয়তো গিলে খেতাম, কারন, আমার সব সুখ দুঃখ, রাগ, মান অভিমানের প্রকাশতো তোমাকে ঘিরেই মাধবী, অহল্যা আমার, তাই হয়তো তোমাকেই চিঠিতে খেতাম!
মাধবী,
এই রাত জানে কতটা শূন্যতার বাসরে শুয়ে আছি, ঘুম আসছে না, ইদানিং কেউ আসে না, না স্বপ্ন, না ঘুম, কেউ নয়। পাশে ইউটিউবে গান বাঁজছে, হঠাৎ মান্নাদের কন্ঠে বেঁজে উঠলো,
গভীর হয়েছে রাত পৃথিবী ঘুমায়
হয়তো তুমিও গেছ ঘুমিয়ে
শুধু আমার দু\’চোখে ঘুম আসেনা
কেন ঘুম আসেনা
বুঝি ঘুমের সে রাত গেছে ফুরিয়ে
গানটির মাঝামাঝি এসে যখন মান্নাদে গেয়ে উঠলেন,
এ রাতে আমি একা কেউ সাথী নেই
তাই বুঝি ঘুম গেছে হারিয়ে-
শোনার পর দু’চোখে বৈশাখী নদীর স্রোত বয়ে গেলো, তবুও আজ তুমি এলে না, ঝাপসা চোখে তোমাকে খুঁজে ফিরলাম,এদিক সেদিক খুঁজলাম, তবুও পেলাম না আমার প্রিয়তমা মাধবীকে, মনে হলো মান্না দে’ই সত্য, আর সব কিছু মিথ্যা, জীবনের ভ্রান্তি, ইল্যুওশন! লেখা থামিয়ে গানটি শুনলাম, দু’বার শুনলাম, আগে অনেকবার শুনেছি, কিন্ত এতটা শূন্যতা নিয়ে, এতটা হৃদয় দিয়ে হয়তো কখনো শুনিনি, তাই হয়তো মনের গভীরে গেঁথে গেলো এর প্রতিটি শব্দ! তখনই মনে হলো রুদ্রের কথা, কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র কথা, যার কাছে আমি ফিরে ফিরে যাই তোমার দহন উপভোগের জন্য। এমনই কোন এক বিরহের রাতে হয়তো রুদ্র লিখেছিলো-
আমার বসন্ত আছে
আমার কোকিল আছে
শুধু কৃষ্ণচূড়া নেই।
মাধবী,
এতটা বিরহ বাসরেও তোমাকে ঘৃনা করতে পারি না, তোমার পতন চাই না, লোভে, বিদ্বেষে-অপচয়েও তোমার গোপন মৃত্যু চাই না, এত কিছুর পরও আমার প্রিয়তম বুকের নিবিড়ে তোমাকেই চাই প্রিয়, তোমাকেই অনুভবে রাখি! মনে মনে ভাবি, ব্যথার প্রবাল দ্বীপে পুনরায় দ্যাখা হবে আমাদের! তবে মিথ্যা বলবো না, আমিও তো মানুষ, মাঝে মাঝে রুদ্রের মতই বিদ্রোহ করে বলে ফেলতে মন চায়, মনে হয় বলে ফেলি-
কিছুটা হিংস্র বিদ্রোহ চাই কিছুটা আঘাত
রক্তে কিছুটা উত্তাপ চাই , উষ্নতা চাই
চাই কিছু লাল তীব্র আগুন ।
তবে তোমাতে প্রণত এই হৃদয় ইদানিং বিদ্রোহ করতে ভুলে গেছে, তুমিই তাঁর সব সীমাবদ্ধতা, বিষুব রেখা। তাইতো ১৯৮১ সালের এই অক্টোবর মাসেই ‘লাবণ্যের লতা ‘ কবিতায় কবি হেলাল হাফিজ যা লিখেছিলেন সেটাই বিড়বিড় করে বলে চলি-
ভালোবাসাবাসিহীন এই দিন সব নয়– শেষ নয়
আরো দিন আছে,
ততো বেশি দূরে নয়
বারান্দার মতো ঠিক দরোজার কাছে।
শুভ রাত্রি
মোঃ আসাদুজ্জামান
আইনজীবি এবং রাজনৈতিক কর্মী
৯ অক্টোবর, ২০২৪।