মাধবী-১৪৯
মো: আসাদুজ্জামান
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৪ | আপডেট: ০৭:৫০ এএম, ১০ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
মাধবী,
মনে আছে, কোন এক বেলে জোস্না রাতে একাকীত্বের বেদনায় যখন যাপিত জীবনের কাছে ফিরতে মন চাইছিলো না, তখন কল্পনায় তোমার কাছে ফিরে ফিরে এসেছিলাম, তোমাকে মুখোমুখি বসিয়ে কবি মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র কাছ থেকে ধার করে শুনিয়েছিলাম,
‘কিছু সে চায়নি তবু,চেয়েছে সে সবচেয়ে বেশি-
একখানা গৃহ নয়,সারাটি পৃথিবী….’
তুমি তখন রুদ্রের কাছ থেকেই ধার করে বলেছিলে,
মুগ্ধ চোখে চেয়ে চেয়ে থেকেছে সে পৃথিবীর বয়সের দিকে,
আলো আর আঁধারের দিকে, বৃত্তাবদ্ধ জীবনের দিকে।
কিছু সে চায়নি তবু, চেয়েছে সে সবচেয়ে বেশি-
একখানা গৃহ নয় সারাটা পৃথিবী
তারপর দু’জনেই নীরব হয়েছিলাম, নীরবতার অসীম নীলিমায় তুমি চাঁদের আলোয় হারালে, আমি শূন্যতাকে সাথে নিয়ে ফিরে এলাম যাপিত জীবনের কাছে। আজ হঠাৎ সেই রাতের কথা মনে পড়লো, একই একাকীত্ব্রের নীল যাতনা, হৃদয়ে তোমার নিত্য আসা যাওয়া। আজ বিষাদের ভালো লাগায় একাকীত্বকে অনুভব করছি মাধবী, তুমি নেই, অথচ মনে হচ্ছে তোমার সাথেই আছি আমি। এক সময় ভাবতাম তুমি আমার সীমাবদ্ধতা, এখন প্রতিদিন উপলব্ধি করি তুমি সীমাবদ্ধতা নও, তুমি আমার সীমাহীন আকাশ, আমার দিগন্ত বিস্তৃত সমতল, মহাসাগরের মত দৃষ্টির সীমানা পেরোনো বিশালতা তুমি। প্রতিদিন তোমার অস্তিত্বের প্রগাঢ়তা অনুভব করি, কল্পনায় জাল বুনি, চোখ বন্ধ করে দেখি আমার সমস্ত ভূবন তুমিহীন শূন্যতার অস্তিত্বে ভরপূর, তোমার না থাকা জুড়ে রয়ে যাও আমার সমস্ত ভূবনে।
মাধবী,
গত কয়েকদিন ঘুম হচ্ছে না, বিশেষ করে ঢাকা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অসহায় দুইজন মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করার খবর দেখে ঘুমোতে পারছি না। এতটা দূর্বল চিত্ত আমার ছিলো না, তোমার বিরহেও নয়। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ের হত্যাকান্ডটির পটভূমি, ভাত খাওয়ানোর পর ঠান্ডা মাথায় খুন করার যে ঘৃণ্য দৃশ্য সোস্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা হয়েছে সেটা দেখার পর ঘুমাতে পারছি না। যারা এই নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত তারাও দেখতে অবিকল মানুষের মত, এরাও নাকি আমার প্রানের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ওই সমস্ত মানুষরুপি খুনিদের এ কেমন নৃশংসতা! এটা কি কোন মানুষ দেখতে পারে? সেখানে যারা উপস্থিত থেকে ঠান্ডা মাথায় এই হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে বাহবা দিয়েছে, উৎসাহ যুগিয়েছে, হত্যার পরিকল্পনায় অংশগ্রহন করেছে, ভিডিও ধারন করেছে তাদের সবাই দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত না হলেও একই আইনের ৩৪ ধারার ‘কমন ইন্টেনশন টু কিল’ এবং ১০৯ ধারার ‘ক্রিমিনাল কন্সপিরেসি’র অভিযোগে একই শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। খুন, সাধারন উদ্যেশ্য এবং ফৌজদারী ষড়যন্ত্রের যথেস্ট উপাদান এখানে দৃশ্যতঃ বিদ্যমান। অনেকেই এই খুনের ঘটনা দু’টিকে একই যোগসূত্রে গেঁথে রাস্ট্রীয় কোন ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজছেন। মামলার তদন্তে সেটার সত্য মিথ্যা বেরিয়ে আসবে, সেটা নিয়ে ভাবছি না, আমি ভাবছি মানবিকতার বিপর্যয় নিয়ে, আমি ভাবছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মাঝে লুকিয়ে থাকা এক শ্রেনীর বর্ণচোরা মানুষ রুপী অমানুষদের নিয়ে, তাদের বেড়ে উঠা, বড় হওয়া নিয়ে। এই সব ভাবনায় আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছে, দেখতে পাচ্ছি এই খুনীরা তোমার চেয়েও নিষ্ঠুর, তোমার চেয়েও প্রতারক!
মাধবী,
আজ রুদ্র জেঁকে বসেছে মস্তিস্কের নিউরনে, এলোমেলো চিন্তা মাথায় আসছে, তাঁর মাঝেও রুদ্রের ঐ কবিতাটা বারবার মনে পড়ছে, ঐ যে ঐ টা, বুঝলে না, আরে গাঁধা ঐ কবিতাটা, যেটা তুমি আমাকে শুনিয়ে বলেছিলে, একদিন ঠিক এভাবেই আমাকে খুঁজবে, আমার অস্তিত্ব অনুভব করবে! আজ সেই কবিতাটার নিচের কয়েক লাইন তোমাকে লিখে দিলাম, ভেবে দেখো কতটা শূন্যতায় তুমি আমাকে পোড়াও, কতটা বিরহের যাতনায়-
কুশল শুধালে মনে হয় তুমি আসোনি
পাশে বসলেও মনে হয় তুমি আসোনি।
করাঘাত শুনে মনে হয় তুমি এসেছো,
দুয়ার খুল্লেই মনে হয় তুমি আসোনি।
আসবে বললে মনে হয় অগ্রিম বিপদবার্তা,
আবহাওয়া সংকেত, আট, নয়, নিম্নচাপ, উত্তর, পশ্চিম-
এলে মনে হয় তুমি কোনদিন আসতে পারোনি।
চ’লে গেলে মনে হয় তুমি এসেছিলে,
চ’লে গেলে মনে হয় তুমি সমস্ত ভূবনে আছো।
ভালো থেকো মাধু, অপার আনন্দে ভালো থেকো, আমার হৃদয় খুঁড়ে রক্ত পিপাসা মিটিয়ে ভালো থেকো!
শু ভ স কা ল
মোঃ আসাদুজ্জামান
আইনজীবি এবং রাজনৈতিক কর্মী
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।