রাতে ওয়ার্ড বয়, দিনে এমবিবিএস ডাক্তার জাহিদুল!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:১০ পিএম, ১৫ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২০ | আপডেট: ০৩:০৫ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
নওগাঁর বদলগাছীর পাহাড়পুর একিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকের বিরুদ্ধে অভিনব কায়দায় দিনে ডাক্তার ও রাতে ওয়ার্ড বয় পরিচয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, ওই ওয়ার্ড বয় কাম ডাক্তারের নাম জাহিদুল ইসলাম। পাহাড়পুর একিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক তিনি। তিনি মানবিক বিভাগে ১৯৯৮ সালে মাধ্যমিক ও ২০০০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। নিজের পরিচয় দেন ডাক্তার হিসেবে। তাইতো নিয়মিত সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোগী দেখছেন। তাঁর ওখানে রোগীদের অনেক ভিড়। রোগী দেখার পাশাপাশি নিজেই করছেন আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি ও এক্স-রে। তাঁর একই স্বাক্ষর রয়েছে ব্যবস্থাপত্রের পাশাপাশি প্রতিটি রিপোর্টে।
জাহিদুল ইসলাম নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার উত্তর রামপুর গ্রামের সুবিদ আলীর ছেলে। তিনি জয়পুরহাট জেলা সদরের রওশন ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ওটি বয় (অপারেশন থিয়েটারে সাহায্যকারী) হিসেবে কর্মরত। এখানে তিনি রাতের বেলা ডিউটি করেন এবং দিনের বেলা নিজের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তার সেজে রোগী দেখেন। প্রায় পাঁচ বছর ধরে অবৈধভাবে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি চালিয়ে আসছে তিনি।
পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই একিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অবস্থান। জাহিদুল ইসলাম জানান, রাতে তিনি জয়পুরহাটের একটি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ওটি বয় হিসেবে কাজ করেন। তাঁর নামের আগে ‘ডাক্তার’ শব্দটি ব্যবহার করেন না বলে তিনি দাবি করেন। তবে উপস্থিত রোগীদের কাছে নিজেকে ‘ডাক্তার’ হিসেবে পরিচয় দেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি চুপ থাকেন।
এ ছাড়া এইচএসসিতে কোন কোন বিষয় পাঠ্য ছিল-এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলা এবং ইংরেজি ছাড়া অন্যগুলো তিনি মনে করতে পারেননি। ভারতের শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব অল্টারনেটিভ মেডিসিন কলকাতা থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়েছেন বলে দাবি করেন। তবে বলতে পারেননি এমবিবিএস এর অর্থ কী। মানবিক বিভাগের ছাত্র হয়ে ডাক্তারি পড়া যায় কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ওটা আমার ভুল হয়েছে।’
বিধি মোতাবেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরীক্ষাগার হতে হবে ৫৭৬ বর্গফুটের। কালেকশন রুম, স্টোর রুম এবং প্যাথলজিস্ট রুম হতে হবে কমপক্ষে ১৫০ বর্গফুটের হতে হবে যা সেখানে নেই। এ বিষয়ে জাহিদুল ইসলাম অকপটে স্বীকার করেন, তার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো ডাক্তার বা প্যাথলজিস্ট কিংবা সনোলজিস্ট নেই। সবাই অনকলে আসেন অথবা অনলাইনে রিপোর্ট দেখে দেন।
অনলাইনে রিপোর্ট দেখা সম্ভব হলেও তাদের স্বাক্ষর কিভাবে নেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তারা আগেই স্বাক্ষর করে রাখেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের রিপোর্ট দেখা এবং স্বাক্ষরের কথা বললেও এখানকার ইসিজি, এক্সরে এবং আলট্রাসনোগ্রামের প্রত্যেকটিতে তিনি নিজেই স্বাক্ষর করেন। নিয়ম অনুযায়ী টেকনোলজিস্ট এবং ডাক্তার না থাকাসহ অন্যান্য বিষয় স্বীকার করে তিনি বলেন, আশপাশের জেলা ও উপজেলার সকল ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো এভাবেই চলে।
তিনি জানান, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রেজিস্ট্রেশন নবায়নের সময় তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আবেদন করেন। মিথ্যা তথ্য দিয়ে কিভাবে কাজটি করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা আছে।
নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. এ বি এম আবু হানিফ বলেন, একিয়া ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কানিজ ফারহানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিধিগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত রবিবার সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ হলরুমে আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি আলোচনা করা হয়। উক্ত সভায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কানিজ ফারহানা বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর ত্রুটি রয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানোর পর নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।