সুদের কারবার করেই ১৫ কোটি টাকার সম্পদের মালিক নাজমা বেগম!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:৩৯ এএম, ১১ অক্টোবর,রবিবার,২০২০ | আপডেট: ০৮:৫৯ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবৈধ সুদের কারবারি নাজমা খাতুন (৪৫) আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন। সুদে টাকা লগ্নি করে এই নারী একাধিক বাড়ি, জমি, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ- সব মিলে প্রায় ১৫ কোটি টাকার মালিক। আট বছর আগে যে নারী অভাবের তাড়নায় স্কুলে চকোলেট ফেরি করে বিক্রি করতেন, সেই নারী কোন যাদুবলে, আলাদীনের চেরাগ পেয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন, সে প্রশ্ন এখানকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের। তবে তার কাছে যাঁরা ঋণ নিয়ে জমি-বাড়ি হারিয়েছেন, ঋণের ৭-৮ গুণ টাকা পরিশোধ করেও তার হাত থেকে নিস্তার পাননি, সেসব ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন,সোনালী ব্যাংক হুগলীপাড়া শাখায় সেই যাদু, সেই আলাদীনের চেরাগ রয়েছে। তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে সব কিছু। তবে তার উত্থানের পেছনে অনৈতিক কাজ, অবৈধ মাদক ব্যবসাও রয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার ২নং মন্মথপুর ইউনিয়নে অবস্থিত রাজাবাসর হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন মো. জয়নাল আবেদিন। অবসরে গিয়ে এখন তিনি তাজনগর গ্রামে বসবাস করছেন। শিক্ষক জয়নাল আবেদীন কালের কণ্ঠকে মোবাইল ফোনে বলেন, তাঁর বড় মেয়ে নাজমাকে বিয়ে দিয়েছিলেন উপজেলার ৬নং মোমিনপুর ইউনিয়নের যশাই সৈয়দপুর গ্রামে। তার স্বামীর নাম নুর ইসলাম। দুই পুত্রসন্তান জন্ম হয় এই ঘরে। অভাব ও স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তার সংসার টেকেনি। নাজমা খাতুন দুই পুত্র নিয়ে বাবার বাড়ি তাজনগরে চলে আসে। অভাবের তাড়নায় রাজাবাসর হাই স্কুলে চকোলেট বিক্রি করে কিছুদিন। পরে ব্র্যাক পরিচালিত স্কুল পাঠাগারে চাকরি করেছে। কোটি কোটি টাকার জমি, বাড়ি এবং ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে লগ্নি করা অর্থের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসব ব্যাপারে কিছুই জানি না ।
নাজমা খাতুনের সাবেক স্বামী নুর ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, 'আমার দুটি সন্তান আছে। তাদের কথা ভেবে আমি ওর ব্যাপারে কখনো মুখ খুলি নাই । তবে তার বেপরোয়া চলাফেরায় বাধা দেওয়ায় সংসার টিকে নাই। শুনেছি সোনালী ব্যাংক হুগলীপাড়া শাখা থেকে সে সব ধরনের সাহায্য, সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছে। কিন্তু কী ধরনের সাহায্য, সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে তা জানতে চাইলে বলেন, তা তো জানি না । কোটি কোটি টাকার জমি, বাড়ি এবং সুদে লগ্নি করা অর্থের সম্পর্কে বলেন, শুনেছি পার্বতীপুর পৌরসভা, মনমথপুর , চণ্ডীপুর , হাবড়া, হামিদপুর, বেলাইচণ্ডীসহ সব ইউনয়িনে তার নামে-বেনামে জমি নেওয়া আছে । পার্বতীপুর ছাড়া বাইরেও বিভিন্ন উপজেলায় তার টাকা সুদের ওপর লগ্নি করা আছে বলে শুনতে পাই।'
চক্রবৃদ্ধি সুদের কারবারি নাজমা খাতুনের নিজ নামে সোনালী ব্যাংক হুগলীপাড়া শাখায় একাউন্ট রয়েছে । তার বড় ছেলে নাদির শাহ নয়ন এই ব্যাংকে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োজিত নাইটগার্ড কাম দপ্তরী। তারও একাউন্ট আছে এই ব্যাংকে। নাজমা খাতুনের দাদন ব্যবসার পার্টনার বিশ্বস্ত ও অত্যান্ত আপনজন সাখাওয়াত হোসেন সাজু । তারও এই ব্যাংকের শাখায় একাউন্ট রয়েছে বলে ঋণ গ্রহীতারা জানিয়েছেন ।
নাজমা খাতুনের কাছে ঋণ নিয়ে সুদাসলে ৭/৮ গুণ বেশি টাকা পরিশোধ করেও নিস্তার পাননি এরকম শতাধিক মানুষের মধ্যে ২০ জন শিক্ষক গত ২৪ জুন পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ শাহানাজ মিথুন মুন্নির কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ওই সুদের কারবারির বিরুদ্ধে। কোনও রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি উপজেলা প্রশাসনের এই প্রধান কর্মকর্তা। এ অভিযোগ আবেদনকারী ২০ শিক্ষকের । এদের মধ্যে মোফাজ্জল হোসেন নামের এক শিক্ষক নাজমা খাতুনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ৪২০/৪০৬ ও ৫০৬ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন দিনাজপুর আমলি আদালত -৫ এ । শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন ও আনিসুর রহমান নাজমা খাতুনের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করেছেন বলে তাদের আইনজীবি বেলাল হোসেন নিশ্চিত করেছেন।
নাজমা খাতুনের কাছে শিক্ষক ছাড়া অন্যপেশার শতাধিক মানুষ ৫০ হাজার , ১ লাখ, ২ লাখও ৩ লাখ টাকা করে ঋণ নিয়েছেন মাসিক ১০ ,১৫,২০ পার্সেন্ট সুদে । চক্রবৃদ্ধি সুদসহ ৭/৮ গুণ টাকা পরিশোধ করার পরও নানা ভাবে নাজেহাল করা হয়েছে ও হচ্ছে তাদের। স্বাক্ষর করা ব্যাংকের খালি চেকের পাতা, চেক বই,ফাঁকা ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, জমির মূল দলিল ফেরত না দিয়ে ঋণ গ্রহীতাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জমি, বাড়ি লিখে নেওয়া হয়েছে। ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকেএ রকম ১৮ জনের একটি তালিকা এ প্রতিনিধির হাতে এসেছে । ভ’ক্তভোগিরা বলছেন,এ তালিকা ৫০ ছাড়িয়ে যাবে।
প্রাপ্ত তালিকায় দেখা যায় ,২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সুদের কারবারি নাজমা খাতুনের নামে ৯ শতক জমির রেজিস্ট্রি হয়েছে। জমির দাতার নাম সাখাওয়াত হোসেন,পিতা মৃত আব্দুস সামাদ। এই সাকাওয়াত হোসেন নাজমা খাতুনের কাছে টাকা ঋণ নিয়ে শোধ করতে না পেরে তার জমি লিখে দেন। সাখাওয়াত হোসেন মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলেও পরবর্তীতে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেন। বর্তমানে এই সাখাওয়াত হোসেন নাজমা খাতুনের অতিআপনজন ,ব্যবসার পার্টনার বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। সাখাওয়াত হেসেনের দেওয়া ৯ শতক জমির মূল্য ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রতি শতক ৬০ হাজার টাকা। জমির দলিল নং ৬৩৪১। দলিলে নাজমা খাতুনকে তালাকপ্রাপ্ত হিসেবে বলা হয়েছে।
২০১৬ সালের ২৪ মে উপজেলার বেলাইচন্ডি ইউনিয়নের বেলাইচন্ডি মৌজার দাগ নং ৪২৯৯ ও ৪৩০০ এর ২৯.৫ ও ২৩ শতক জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে পার্বতীপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে। জমির মুল্য ধরা হয়েছে ৮ লাখ টাকা। দলিল নং ৩২৫৩। জমির দাতা নরেশ চন্দ্র রায় ন। গ্রহীতা মোছা. নাজমা খাতুন। জানা যায়,নাজমা খাতুনের কাছে চক্রবৃদ্ধি সুদে ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েন নরেশ চন্দ্র রায়। সুদাসলে আট গুণ টাকা পরিশোধ করেও উদ্ধার পাননি তিনি। নাজমা খাতুন কার কাছে জামানত হিসাবে রাখা ব্যাংকের চেক বই ( স্বাক্ষরযুক্ত ,স্বাক্ষরকরা খালি চেকের পাতা , ফাঁকা নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ও জমির মুল দলিল থাকায় নরেশ চন্দ্র রায় জিম্বি হয়ে পড়েন। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জমির প্রকৃত মুল্যের অর্ধেক দাম ধরে দলিল কওে দিতে বাধ্য করেন নাজমা খাতুন । নাম প্রকাশ না করার শর্তে নরেশের একজন প্রতিবেশি বলেছেন, দলিল করার সময় ওই জমির দাম ছিল ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
২০১৬ সালের ৮ আগস্ট ছোটহরিপুর মৌজার খতিয়ান নং ২৯ , দাগ নং ৫১ এর ২৩ শতক জমি মোশারফ হোসেন মুন্সির ইচ্ছার বিরুদ্ধে দলিল করে নেন সুদি নাজমা খাতুন । দলিল নং ৫২০৮ । জমির মুল্য ধরা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে ১৯ মার্চ ২৫৯০ দলিল মূলে ফারুক বিন জামান নামে এক ব্যবসায়ীর একটি ফ্ল্যাটবাড়ি রেজিস্ট্রি করে নেন সুদের কারবারি মোছা. নাজমা খাতুন। জমির দাগ নম্বর ৮৩০, খতিয়ান ৩৭৬। জমি ও বাড়ির দাম ধরা হয়েছে মাত্র ১০ লাখ টাকা। ফারুক বিন জামান বলেছেন তার সাথে প্রতারণা করে এ জমিটি নেয়া হয়েছে। কি ধরনের প্রতারণা করা হয়েছে তা অবশ্য তিনি বলেননি। এ বছরের ১১ জুলাই রাজাবাসর মৌজার খতিয়ান নম্বর ৩৭৬, দাগ নম্বর ৮৩০ এর ৪২ শতক জমি নাজমা খাতুনকে রেজিস্ট্রি করে দিতে বাধ্য করা হয়। দলিল নম্বর ৫৩১৮। এই জমির মূল্য ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। জমির দাতা মোঃ মোশারফ হোসেন মুন্সি।
২০১৮ সালের ১ অক্টোবর পার্বতীপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে মনমথপুর মৌজার ২৪৫ খতিয়ান, দাগ নম্বর ৪৩৭৬ ও দলিল নম্বর ৭১৯৫, জমির পরিমাণ ৬৪ শতক। দাতা আশরাফুর রহমান। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওই জমি মাত্র ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা দাম ধরে রেজিষ্ট্রী করে নেয় নাজমা। একই বছরে ২৪ নভেম্বর তাজনগর মৌজার ৪২৪১ দাগের ৩০ শথক জমি দাতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মাত্র ৪লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্য ধরে নাজমা খাতুন রেজিস্ট্রি করে নেয়। জমির দলিল নম্বর ৯১৬২। এই জমিটি স্বাভাবিক পরিবেশে বিক্রি করতে পারলে বিক্রেতা কমপক্ষে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে পারতেন। কিন্তু জমির মূল দলিলসহ অন্যান্য কাগজপত্র গ্রহিতা নাজমা খাতুনের কাছে গচ্ছিত থাকায় বিক্রেতা জিম্মি হয়ে পড়েন।
২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর ৭৯১১ নম্বর দলিলে ১২ ও ৪৪ শতক জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। হামিদপুর ইউনিয়নের চৌহাটি মৌজার ৪৪৯ নম্বর খতিয়ান ও ৪৫৯ এবং ৩৬৪ নম্বর দাগের ওই জমি দলিল করে দেন মোছা. ফতেমা খাতুন। কেচ্ছা একই। নাজমা খাতুনের কাছে ঋণ নিয়ে সুদাসুলে দাড়ায় ১০ লাখ টাকা। এই টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ৫৬ শতক জমি লিখে দেন নাজমা খাতুনকে। চৌহাটি মৌজাটি বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির মধ্যে পড়ে। দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা শতকের জমি ফতেমা খাতুনের পরিবারকে জিম্মি করে পানির দামে দিতে বাধ্য করা হয়। ২০২০ সালের ৪ মার্চ তাজনগর মৌজার ১০৭১ নম্বর খতিয়ান, ৫৮০০ নম্বর দাগের ১৫ শতক জমি নাজমা খাতুনকে তার বাবা জয়নাল আবেদীন দলিল করে দেন। দলিল নম্বর ২২১৮। জমির মূল্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই টাকা নগদে পরিশোধ করেন নাজমা খাতুন।
২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর নাজমা খাতুনকে ৯ শতক জমি সাখাওয়াত হোসেন সাজু দলিল মূলে রেজিস্ট্রি করে দেন। এই সাজু পরবর্তীতে নাজমা খাতুনের সাথে সখ্যতা ও ব্যবসার পার্টনার হিসেবে গড়ে তোলেন নিজেকে। আর এ কারণে নাজমার কাছে যারা সুদে ঋণ নিয়েছেন তাদের জমিও এ সাজুর নামে রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়েছে।
২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি সুদের কারবারি নাজমা খাতুনের কাছে নেয়া ঋণের টাকা সুদাসলে পরিশোধ করার পরেও আফজালুর রহমান মুন্সি তার খপ্পর থেকে রেহাই পাননি। তিনি রাজাবাসর মৌজার ১৯ শতক জমি নাজমার পার্টনার সাখাওয়াত হোসেন সাজুর নামে রেজিস্ট্রি করে দেন তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। জমির মূল্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ টাকা। স্বাভাবিকভাবে বিক্রি করতে পারলে এ জমির মূল্য দাঁড়াতো ১৯ লাখ টাকা। জমির দলিল নম্বর ১২২১, খতিয়ান নম্বর ৩৭৬, দাগ নম্বর ৮৩০। এবছরের ১০ ডিসেম্বর সাজুর নামে পার্বতীপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে হামিদপুর মৌজার তিন শতক জমির ওপর নির্মিত বাড়ি রেজিস্ট্রি মূলে বিক্রি করা হয়। বাড়ির দাম ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। জমির দাতা মোছাঃ ইচকিয়া বেগম। স্বামী মোঃ গিয়াস উদ্দীন। জামির দলিল নম্বর ৮৭৮৩, খতিয়ান নম্বর ৭৮৫, দাগ নম্বর ৫৪৮।
জানা যায়, প্রামানিক পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মোঃ গিয়াস উদ্দীন নাজমার কাছে ঋণ নিয়ে সুদাসুলে সমুদয় টাকা পরিশোধের পরে গচ্ছিত রাখা কাগজপত্র ফেরত না পেয়ে বাধ্য হয়ে স্ত্রী ইচকিয়া বেগমের নামীয় জমি সাখাওয়াত হোসেন সাজুকে লিখে দিতে বাধ্য হন।
২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী আরেকটি জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে পার্বতীপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। মনমথপুর মৌজার ৭৮ নম্বর খতিয়ান ১২৭ নম্বর দাগের ৬ শতক জমির মালিক মঞ্জুআরা বেগম। রেজিস্ট্রি করে দেন সাখাওয়াত হোসেন সাজুকে। তিনি ঋণ নিয়ে ছিলেন নাজমা খাতুনের কাছে। আর জমির দলিল করে দেন সাখাওয়াতকে। দলিল নম্বর ১৩০৭। মূল্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।
নাজমা খাতুনের বড় ছেলে নাদির শাহ নয়নের নামে ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোব রাজাবাসর মৌজার সাড়ে ৪ শতক জমি দাতা, ঋণ গ্রহিতা মাহাবুর রহমান মুন্সির ইচ্ছার বিরুদ্ধে রেজিষ্ট্রী করে নেয়া হয়। মাহবুবুর রহমান ঋণ নিয়ে ছিলেন নাজমার কাছে। জমি লিখে দিতে হয়েছে নাজমা খাতুনের বড় ছেলে নাদির শাহ নয়নের নামে। জমির খতিয়ান নম্বর ৩৭৬, দাগ নম্বর ৮৩০ আর দলিল নম্বর ৭০১৩। এই জমির দাম ধরা হয়েছে ২লাখ ২৫ হাজার টাকা।
২০১৭ সালের ২১ মার্চ মনমথপুর মৌজার খতিয়ান নং ৩৭৬, দাগ নং ৮৩০ এর ১৫ শতক জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। দলিল নং ২৭২১। মূল্য ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। দাতা মাহবুবার রহমান, গ্রহীতা নাদির শাহ নয়ন। ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী একই ব্যক্তির নামে মনমথপুর মৌজায় ৫১ শতক জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে। খতিয়ান নম্বর ২৪৫, দাগ নম্বর ৪৩৭৭, দলিল নম্বর ১২৪৩। জমির দাতা আশরাফুর রহমান। এখানেও একই কাহিনি। আশরাফুর রহমান ঋণ নিয়েছিলেন নাজমার কাছে। জমি দিতে হয়েছে তার বড় ছেলে নাদির শাহ নয়নের নামে। জমির মূল্য ধরা হয়েছে ৭লাখ ৬০ হাজার টাকা। জমির মূল দলিল, খালি চেকে স্বাক্ষর ও ফাকাঁ ননজুডিশিয়াল স্ট্যাপ্পে স্বাক্ষর থাকায় এবং এসব নাজমার হেফাজতে থাকার কারণে অন্যত্র বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। তাই ২৬ লাখ টাকার জমি পানির দরে দিতে হয়েছে।
নাজমার ছোট ছেলে নিশাত বাবু। তার নামে ২০১৭ সালের ৪ জুলাই মোশারফ হোসেন মুন্সি গং ৮৪ শতক জমি দলিল করে দেন। দলিল নম্বর ৪৬৬৩। খতিয়ান নম্বর ১৮, দাগ নম্বর ৪৩৫৮। জমির মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ১২ লাখ ৫১ হাজার টাকা।
সুদের কারবারি নাজমা খাতুনের কাছে ঋণ নিয়ে কেউ উপকৃত হতে পারেননি। প্রথম থেকে ভয়ভীতি, হতাশা, প্রতিমাসে ১০, ১৫ কিংবা ২০ পার্সেন্ট সুদ দিতে গিয়ে ঋণ গ্রহীতারা সর্বশ্বান্ত হয়ে পড়েন। এক সময় চক্রবৃদ্ধির সুদ পরিশোধ করতে না পেরে নিজের জমি তাকে দিতে বাধ্য হন। এসময় কাগজপত্র নাজমার কাছে গচ্ছিত থাকায় দাতারা জিম্মি অবস্থায় বাজার মূল্যের অর্ধেক দামে নাজমার কাছে দিতে বাধ্য হন। এসব কথা বলেছেন, মোশারফ হোসেন মুন্সি নামে এক ব্যক্তি। তিনি সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে দাবি করেন। তার বাড়ি রাজাবাসর মুন্সিপাড়ায়। তিনি বলেন, 'আমি চাই সোনালী ব্যাংক হুগলীপাড়া শাখায় নাজমা খাতুন ও ব্যবসার পার্টনার সাখাওয়াত হোসেন সাজুর একাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের রহস্য উদঘাটন করা হোক। সর্বোপরি, ভবিষ্যতে আর কেউ যেন নাজমা খাতুনের মতো চক্রবৃদ্ধি সুদের কারবার করতে না পারে। সহজ সরল মানুষদের প্রতারনা করে নিজের আখের গোছানোর সুযোগ না পায়।'