যত বড় অপরাধ, ছাত্রলীগে তত বড় পদ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৩৫ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কেউ হত্যা মামলার মতো বড় অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত, কেউবা ডাকাতি মামলায়, আবার কেউ মন্দির ভাঙচুরের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় সংগঠন থেকে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কার হয়েছিলেন। তবে এসব কোনো কারণই তাদের জন্য ছাত্রলীগের বড় পদ পেতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে ফৌজদারি আইনে অভিযুক্ত এসব 'অপরাধী'দেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখার বড় বড় পদে পদায়ন করে 'পুরস্কৃত' করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ ২ নেতা। গত ৩১ জুলাই রাতে ঘোষিত কয়েকটি কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অন্তত ৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, এ দিন একইসঙ্গে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আংশিক কমিটি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি।
এসব কমিটির শীর্ষ পদের জন্য মূলত নানা অপরাধে অভিযুক্ত নেতাদেরকেই বেছে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সালের কথা। ফয়সাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাইমুল ইসলাম রিয়াদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই রিয়াদকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় মামলার পরিপ্রেক্ষিতে, ২০১৫ সালে পুলিশ যাদেরকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে, সেই তালিকায় রয়েছে ফয়সালের নাম। এই ঘটনাসহ যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ তাকে ২ বার শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'সাময়িক' বরখাস্ত করে।
সেই ফয়সালকে সাধারণ সম্পাদকের মতো বড় পদে রেখে 'পুরস্কৃত' করেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। ঘোষণা করেছেন যবিপ্রবি শাখার ১১ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি। শুধু হত্যা মামলা নয়, ফয়সালকে ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর যশোরের কোতোয়ালি থানার একটি ডাকাতি মামলায়ও আসামি করা হয়েছিল।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মশিউর রহমান হল থেকে প্রায় ৩০০টি মোবাইল ফোন সেট, ১০০টি ল্যাপটপ এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র ডাকাতি হয় সেই সময়। এ ঘটনায় ২৫ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়৷ ফয়সাল তাদেরই একজন বলে জানিয়েছেন, যবিপ্রবি ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সূত্র।
ফয়সালের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ ও মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি প্রথমে মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরবর্তীতে তিনি বলেন, তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে তিনি অতিরিক্ত কোনো প্রকার মন্তব্য করতে চান না। এ ছাড়া, 'আমি জামিনে আছি', বলে তিনি বাকি সব প্রশ্ন এড়িয়ে যান। শুধু সাধারণ সম্পাদক ফয়সালই নন, এই নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতি পদ পাওয়া আল মামুন সিমনও ওই ডাকাতি মামলার আসামি ছিলেন।
একই কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম একরামুল কবিরের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে। তিনি ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন।
যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরিফ হোসেন রিফাত বলেন, 'যদিও আমি দায়িত্বে ছিলাম, তবে কমিটি দেওয়ার আগে কোনো ধরনের বর্ধিত সভা ডাকা হয়নি। এ ছাড়া তানভীর ফয়সালকে যে ওই শাখার শীর্ষ নেতা করা হচ্ছে, কিংবা একটা কমিটি দেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়েও আমাকে কিছু জানানো হয়নি। তবে হ্যাঁ, আমাদের হাতেও তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে তথ্য ছিল।'
ছাত্রলীগের এসব পদ নির্ধারণের বিষয়ে মূলত 'আমাদের ২ শীর্ষ নেতাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন', বলে তিনি মন্তব্য করেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখার নতুন কমিটির নেতার বিরুদ্ধেও ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। ইবিতে ২৪ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটির সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিক আরাফাত হত্যাচেষ্টা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি।
বিগত কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক আরাফাতকে ২০১৬ সালের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মন্দির ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত থাকায় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এর প্রায় ২ বছর পর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে, মাদক নেওয়ার অভিযোগে আটককৃত তার কয়েক অনুসারীকে পুলিশ ভ্যান থেকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ ঘটনার মাসখানেক পরেই আরাফাতের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার ওপর আরোপিত বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এরপর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইবি শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রকিবুল ইসলামকে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি করা হয় আরাফাতকে। যোগাযোগ করা হলে আরাফাত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় কমিটি মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় আমার সম্পৃক্ততা না পেয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূজা উদযাপন পরিষদও লিখিতভাবে জানিয়েছে, আমি উক্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি যে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় যুক্ত ছিলাম না, ইবি থানা পুলিশ এই মর্মে লিখিত প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে।' ইবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তন্ময় সাহা টনি বলেন, 'আরাফাত ছাড়াও অযোগ্য অনেকেই যেমন পদ পেয়েছেন, আবার যোগ্য অনেককে বঞ্চিত করার উদাহরণ রয়েছে।'
তিনি বলেন, 'নতুন কমিটিতেও যাকে সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়েছে, আগের কোনো কমিটিতে তিনি কোনো পদে ছিলেন না।' তন্ময় আরও বলেন, 'কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বড় অংকের টাকা লেনদেনের বিনিময়েই এ ধরণের পদ মেলে।'
ইবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক স্বাধীন শাহেদ বলেন, 'কেন্দ্রীয় কমিটি আরাফাতের বিরুদ্ধে মন্দির ভাঙচুরের অভিযোগের সত্যতা পায়নি বিধায়, তার ওপর আরোপিত বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছিল। এ কারণে আমরা অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে তার নামও তালিকার শেষে রেখেছিলাম।'
তিনি আরও বলেন, 'সম্ভাব্য নেতাদের তালিকা করার সময় আমরা তাদের জনপ্রিয়তার বিষয়টিও বিবেচনা করি। আরাফাতের ক্ষেত্রে দেখেছি, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তিনি বেশ জনপ্রিয়। এ কারণে তার নাম রাখতে হয়েছে।'
'বিতর্কিত কাউকে কোনো কমিটির শীর্ষ পদের দায়িত্ব দেওয়া হোক, তা আমরাও প্রত্যাশা করি না। তবে আমরা যাদের নামই কমিটিতে রাখার জন্য প্রস্তাব করি না কেন, আমাদের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারাই শেষ পর্যন্ত এই ২টি পদ (সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক) কারা পাবেন, তা বেছে নেন', যোগ করেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রেও নানা অভিযোগ উঠে এসেছে।
চবি শাখা ছাত্রলীগের জন্য ঘোষিত ৩৭৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির মধ্যে অন্তত ১০ জন হত্যা ও অন্যান্য মামলার আসামি রয়েছেন বলে চবি ছাত্রলীগ নেতারা জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে ২০১৪ সালে ছাত্রলীগ নেতা তাপস সরকার হত্যা মামলার আসামি প্রদীপ চক্রবর্তী ও জাহেদুল আউয়াল নতুন কমিটির সহ-সভাপতি পদ পেয়েছেন।
অপরদিকে যুগ্ম সম্পাদক পদ পাওয়া রাজু মুন্সিও হত্যা মামলার আসামি। তিনি ২০১৩ সালে চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় ঘটে যাওয়া জোড়া খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন। অন্যদিকে মোফাজ্জল হায়দার ইবনে হোসেন ও মিজানুর রহমান খানকে ২০১৫ সালের সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র হাতে দেখা গেছে। তাদেরকে এই কমিটিতে সহ-সভাপতি করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে।
চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের ছাত্রত্ব নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। রেজাউল ২০০৬-০৭ সালে এবং টিপু ২০১০-১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ফলে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র হিসেবে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মতোই নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া অন্তত ২ ডজন নেতা নিয়মিত ছাত্র নন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে। রেজাউল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা বেশিরভাগ মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।' তিনি বলেন, 'এসব মামলার বাইরে আমাদের কোনো নেতা যদি অন্য কোনো সামাজিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকেন, তবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।'
নিয়মিত শিক্ষার্থী না হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে ছাত্রলীগের পদ পাওয়া সম্ভব, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'দীর্ঘদিন পরে চবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাই পদ পেতে গিয়ে অনেকেরই বর্তমানে ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে।' তার ছাত্রত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বলেন, 'উপাচার্যের বিশেষ ক্ষমতাবলে এটা সম্ভব (ছাত্রত্বের মেয়াদ বাড়ানো)।'
রেজাউলের এই দাবির বিষয়ে জানতে চবি উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে মেসেজ করা হলেও তাতে তিনি সাড়া দেননি।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল ইসলাম বলেন, 'বিশেষ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অসুস্থতা কিংবা মানবিক বিবেচনায় ছাত্রত্বের মেয়াদ বাড়ানো হয়ে থাকে। তবে এর পরিমাণ সংখ্যায় নগণ্য।'
চবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির ছাত্রত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে 'মানবিক' বিবেচনা করা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ বিষয়টি আমি জানি না।' তিনি আরও বলেন, 'ছাত্রত্ব বাড়ালেও, এত বছর তো বাড়ানো সম্ভব না বলেই আমার ধারণা।'
চবি শাখার সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হায়দার রহমান জিতু বলেন, 'চবি শাখা ছাত্রলীগ অনেকগুলো গ্রুপ ও উপগ্রুপে বিভক্ত। দীর্ঘদিন যাবৎ পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় সবাই শীর্ষ পদে যেতে মরিয়া। তাই কমিটিতে পদ দেওয়ার সময় আমাদেরকে অনেক কিছুই অ্যাডজাস্ট করতে হয়েছে।'
বিতর্কিত নেতাদের কেন পদ দেওয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'কেউ যদি সংগঠনের শৃঙ্খলা বিরোধী কাজে জড়িত হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ যদি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বরাবর তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
যারা অপরাধে অভিযুক্ত অথচ বড় পদ পেয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশ পুরনো। কমিটি ঘোষণার বহু আগে থেকেই গণমাধ্যমে তা প্রচারিতও হয়েছে। তদারকির সময়ে এসব তথ্য পেয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়নি।'
সার্বিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন বলেন, 'বর্তমান সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে এসব নতুন কোনো অভিযোগ না। তাদের বিরুদ্ধে এমন আরও অনেক অভিযোগ আছে যে তারা সংগঠনের সব শৃঙ্খলা ভেঙে, ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে এভাবে কমিটি দিচ্ছে।'
ডাকসুর সাবেক সদস্য, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, এই শাখাগুলোতে যাদেরকে পদ দেওয়া হয়েছে, তাদের চেয়েও যোগ্য প্রার্থী ছিলেন।'
তিনি বলেন, 'যোগ্যদেরকে পদ না দিয়ে, অপেক্ষাকৃত বিতর্কিত নেতাদেরকে পদায়ন করার মাধ্যমে মূলত ছাত্রলীগকেই বিতর্কের মুখে ঠেলে দিয়েছে বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদক। তাছাড়া, কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা সংগঠনের বাকি নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সভা কিংবা আলাপ-আলোচনাও করেন না।'
এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'যেহেতু যোগ্যদের বাদ দিয়ে অযোগ্যদেরকেই বেছে নেওয়া হয়েছে, সেহেতু এ কথা স্পষ্ট যে তারা ভিন্ন কোনো উপায়ে এসব নেতাদের সন্তুষ্টি অর্জন করেছেন।'
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেন, 'সাধারণত ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলো ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে থাকে। আর তাই শীর্ষ নেতারা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে এই ধরনের নেতাদেরকেই বেছে নেয় এই ভেবে যে, হয়তো এ ধরণের নেতারাই ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।'
তিনি বলেন, 'এটা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য নেতিবাচক লক্ষণ।' বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গে একাধিক দিনে, একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও, তারা কল রিসিভ করেননি। এ ছাড়া, কমিটি ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে তাদের মন্তব্য জানতে চেয়ে মেসেজ পাঠানো হলেও তাতে তারা কোনো সাড়া দেননি।