avertisements 2

তবু ভোটে যায় বিএনপি

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:০২ পিএম, ২০ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২০ | আপডেট: ১১:১৮ এএম, ৭ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

নিকট অতীত থেকে বর্তমান অব্দি জাতীয় সংসদ, ঢাকা সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ কোনো ভোটই বিএনপির জন্য সুখকর নয়। সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন কিংবা স্থানীয় সরকারের ভোটের প্রতিটিতে তাদের প্রার্থীরা পরাজিত হচ্ছেন। ভোটগ্রহণ দিবসের দ্বিতীয় প্রহরে অথবা বিকালেই দলটি ভোট বর্জন, অনাস্থা জ্ঞাপন ও ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছে। কেন্দ্র দখল করে ভোট কারচুপি, জালিয়াতি, এজেন্টদের বের করে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ করে আসছে।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর দলটি ঘোষণা দিয়েছিল, এই সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না তারা। কিন্তু তারপর গত দুই বছরে সংসদের প্রায় সবগুলো উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের প্রার্থীরা। আগামী ১২ নভেম্বর ঢাকা-১৮ এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনেও প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও করা হয়েছে।

সবশেষ গত ১৭ অক্টোবর ঢাকা-৫ এবং নওগা-৬ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিলেও ভোটের দিন ‘পরিস্থিতি’ দেখে দুপুরে বর্জনের ঘোষণা দেন ধানের শীষের প্রার্থীরা। অতঃপর পুনঃনির্বাচনের দাবিতে সারা দেশে বিএনপির দুই দিনের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি চলছে। দৃশ্যত ফলাফল কী হবে তা জেনেও সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। এত কিছুর পরেও এই দলটি কেন বারবার নির্বাচনে যায়—এ প্রশ্ন আলোচিত হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মুখোশ তারা বারবার উন্মোচন করতে চান বলেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে মাঠের রাজনীতিতে গতিশীলতা ফিরে আসতে পারে বলে ধারণা করেন নেতারা। দলের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, গণতন্ত্র ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, দলের নেতাকর্মীরা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রয়েছেন। নির্বাচনে গেলে আর যাই হোক, সক্রিয় কর্মকাণ্ড করা যায়। নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমে স্বাচ্ছন্দ্য পান। স্থানীয় নির্বাচনে না গেলে দলের কোনো না কোনো নেতা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়ে যান। তখন দলের এক পক্ষ নিষ্ক্রিয় থাকে, অপর পক্ষ সক্রিয় হয়। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যেটা হয়েছে গত বছরের উপজেলা নির্বাচনের সময়। বিএনপি প্রথম তিন ধাপের নির্বাচনে অংশ নেয়নি।

যারা বিদ্রোহ করে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের দুই শতাধিককে বহিষ্কার করা হয় বিএনপি থেকে। পরে বাধ্য হয়ে দল শেষ দুই ধাপের নির্বাচনে প্রার্থী দেয়। যদিও এ নিয়ে দলের ভেতরে কিছু মতভিন্নতাও আছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অনেকে প্রশ্ন করেন, এমন নির্বাচন হয়, তবুও আপনারা নির্বাচনে যান কেন? আমরা নির্বাচনে যাই এই কারণে যে, আমরা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, আমরা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে নির্বাচনে গিয়ে বারবার প্রমাণ করতে চাই, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, হয় না। নির্বাচনের নামে যে তামাশা হচ্ছে তা দেশের জনগণ দেখছে। বিদেশিরাও দেখছে।

আমরা সরকারের মুখোশ বারবার উন্মোচন করে দিচ্ছি। আদতে দেশে নির্বাচন বলতে কিছু নেই, নির্বাচন ব্যবস্থাটাই নেই বলা চলে, দেশ থেকে গণতন্ত্র চিরতরে বিলীন হয়ে গেছে। ভোটাররা ভোট দিতে পারে না, রাতের আঁধারেই ভোট হয়ে যায়। ভোট থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনগুলো এখন তামাশায় পরিণত হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটের আগের রাতে সমস্ত ভোট ডাকাতি করে ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। সেজন্য এসব দেখে আজকে সমস্ত পৃথিবীর মানুষ বলছে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের যে অধিকার সে অধিকার নেই। দেশে এখন আর কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। যে নির্বাচন কমিশন আছে এদের লজ্জাশরম বলতে কিচ্ছু নেই। এটা একটা ঠুঁটো জগন্নাথ।

তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলছেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বিএনপি। বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং বর্জনের নামে তামাশা করছে। তারা জেতার জন্য নয়, অভিযোগ করার জন্যই নির্বাচনে অংশ নেয়। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট শেষ হওয়ার আগেই বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সরে পড়ে। ওবায়দুল কাদের বলেন, সাম্প্রতিক উপনির্বাচন নিয়ে বিএনপি অন্ধকারে ঢিল ছুড়েই যাচ্ছে। স্পষ্ট কোনো অভিযোগ নয়, বরাবরের মতো ঢালাও অভিযোগ করেই যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপির ভোটাররা ভোট দিতে যায় না। বিএনপি জয়ের জন্য নয়, মনোনয়ন বাণিজ্য করার জন্য নির্বাচন করে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের প্রধান কাজ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া সমান কথা। কারণ তারা গণতন্ত্র এবং দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। তা ছাড়া বর্তমান আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনও শুধু আওয়ামী লীগের সেবা করে টিকে আছে। ফলে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশন বাতিল এখন সময়ের দাবি। অবশ্যই যথাসময়ে বিএনপি বিষয়টি জনগণের সামনে নিয়ে আসবে।

এদিকে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে যদি ভোট কারচুপি, জালিয়াতি ও এজেন্ট বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে, তবে বর্তমান সরকার ও বিদ্যমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। বরং আগাম নির্বাচনের দাবিতে দলটি আন্দোলনে নামার চিন্তা করছে। আর ঐ দাবির সঙ্গে যুক্ত হবে নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবি। তবে আপাতত স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচন বর্জন করবে না দলটি।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2