সবাইকে লাঠি তৈরি করতে বললেন ভিপি নূর
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮:৩১ পিএম, ৬ মার্চ,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৩১ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য দেশের সব রাজনৈতিক দলকে এক ব্যানারে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর। তিনি বলেছেন, আমি রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানাব- আর ভিন্ন ভিন্ন ব্যানারে নয়। সবাই এক ব্যানারে আসুন, বাংলাদেশকে রক্ষা করুন।
শুক্রবার (৫ মার্চ) বিকালে জাতীয় যাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার পরিষদ আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বাঁশের লাঠি তৈরি করার স্লোগান দেন ভিপি নূর।
শ্রমিক নেতা নুরুল আমিনসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার সবার নিঃশর্ত মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আপনারা শুনেছেন- স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রোগ্রামে আমাদের দেশে অতিথি হয়ে আসবেন নরেন্দ্র মোদি। যেই নরেন্দ্র মোদিকে ভারতেই গুজরাটের কসাই নামে আখ্যায়িত করা হয়। আমেরিকার মত রাষ্ট্র রেড লিস্টের অন্তর্ভুক্ত করেছিল, আমেরিকা সফর স্থগিত ছিল।
তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, উগ্র হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক মোদিকে বাংলাদেশে এনে দেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তামাশা করবেন না। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ছিনিমিনি করবেন না।
সাংবাদিকদের ওপর সরকার দমন-পীড়ন চালাচ্ছে অভিযোগ করে নুর বলেন, সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে সরকারি দলের নেতারা জড়িত। সাংবাদিক মুজাক্কির হত্যাকাণ্ডে সরকারি দলের নেতারা জড়িত। এই করোনাকালে প্রায় শতাধিক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। কয়েকজন সম্পাদক আগেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন- এই আইনের ফলে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এখন তারই প্রতিফলন ঘটছে।
তিনি আরো বলেন, এখন সাংবাদিকরা লেখালেখি করতে পারছেন না। সরকারের দুর্নীতি, গুম, খুন নিয়ে আলোচনা করা যায় না। ইতিহাসে যত সংকট হয়েছে, সাংবাদিক-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিবাদের ফলেই স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটেছে।
নুর বলেন, বাংলাদেশের জনগণকে বলব- যখন দেশে বালা-মুছিবত আসবে কেউ কিন্তু রেহাই পাবেন না। সময় থাকতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আপনারা পত্রিকায় দেখেছেন কার্টুনিস্ট কিশোরকে কীভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। কেন তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল? কারণ তিনি একটি কার্টুন একেঁছিলেন। জাতিসংঘসহ উন্নয়ন সহযোগী ১৩টি রাষ্ট্র, বিভিন্ন মানবধিকার সংগঠন নির্যাতন নিপীড়ন নিয়ে কিন্তু সরব হচ্ছে। এখন জনগণকে জাগতে হবে। প্রশাসন তখনই পাশে দাঁড়াবে যখন দেখবে জনতার ঢল নেমেছে।
সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, বিনা ভোটের সরকার বাংলাদেশকে ইরাক, সিরিয়া, মিয়ানমার বানাতে চায়। এই বিনা ভোটের সরকারের কাছে কি আমরা ১৮ কোটি লোক জিম্মি থাকব? আপনাদের সংগ্রাম করতে হবে। এই সংগ্রামে আমি মরি না আপনি মরেন, সেটা উপরওয়ালাই ঠিক করবে।
ভিপি নূর বলেন, মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদ করায় বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়েছে। শ্রমিক নেতা রুহুল আমিনকে একটি পোস্ট দেওয়ার কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা অবিলম্বে সবার মুক্তি চাই এবং ২৬ মার্চের মধ্যে কালো আইন বাতিল করতে হবে। যদি বাতিল করা না হয়, তাহলে ১৮ কোটি মানুষকে ভেতরে ভেতরে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে বলেন এই ছাত্রনেতা।
পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশ্য করে সাবেক ভিপি নুর বলেন, আপনারা এই অবৈধ সরকারকে না বলে জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে যান। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, সিভিল সোসাইটির নাগরিকসহ সকল সচেতন দেশপ্রেমিক নাগরিক। বাংলাদেশ যেন মিয়ানমার আফগানিস্তান সিরিয়া না হতে পারে, তার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম আমাদের গড়ে তুলতে হবে এবং প্রশাসনকে এই অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার একটা বিষয় আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কাজেই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, সেই চেতনাকে ভুলুণ্ঠিত হতে দিতে পারি না।
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন, যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হানিফ, শাকিলুজ্জামান, সোহরাব হোসেন, শ্রমিক অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আবদুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরান হোসেন, সদস্য সচিব আরিফ হোসেন প্রমুখ সমাবেশে বক্তব্য দেন।