avertisements 2

আন্দোলনের ছক সাজাচ্ছে বিএনপি

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৫ আগস্ট,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ০৭:৪৯ এএম, ১১ মে,শনিবার,২০২৪

Text

সরকার পতনের চলমান আন্দোলন যতই তীব্র হচ্ছে ততই বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর গ্রেফতার, মামলা-হামলার ঘটনা বাড়ছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, অস্ত্র দিয়ে গ্রেফতার দেখিয়ে ভীতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। মামলা-হামলা করে সরকার চলমান আন্দোলনে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয় করে রাখার কৌশল নিয়েছে বলে মনে করেছেন অনেকে।

যুগপৎ আন্দোলনরত কয়েকটি রাজনৈতিক দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে ডিবি পুলিশ বা সাদা পোশাকধারী পুলিশের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক স্থানে সন্দেহ ভাজন হিসেবে মনে করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। তাদেরকে আবার অস্ত্রসহ গ্রেফতার দেখাচ্ছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর হাসান রবিনকে নয়া পল্টন থেকে ধাওয়া করে আটক করে ডিবি পুলিশ। এছাড়াও ছাত্রদলের ছয় নেতাকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর হাসপাতালে রোগী দেখা শেষে বের হবার পথে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আবুল হাসান চৌধুরীকেও তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশের সদস্যরা। জিসানকে খুঁজতে তার বাসায় গেলে সহ-সাধারণ কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি হাসানুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আর রিয়াদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবর ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আরিফ বিল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়।

ছাত্রদলের অভিযোগ, বেআইনিভাবে দীর্ঘ সময় আটক রাখার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো সরব হয়ে উঠলে একপর্যায়ে অস্ত্রসহ গ্রেফতারের নাটক সাজিয়ে তাদেরকে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করা হয়। হেফাজতে থাকার সময়ে ছাত্রনেতাদের ওপর নির্যাতন করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছাত্রনেতা জিসানের শরীরের জমাট বাঁধা কালচে রক্তের ছাপগুলোই যেন আজকের বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।

অনেকের ভাবনা, সরকার গ্রেফতার করে ভয় ভীতি তৈরির পায়তারা করলেও এতে নেতাকর্মীদের মনে কোন কিঞ্চিৎ পরিমাণ ভয় ঢুকাতে পারেনি প্রশাসন। এমনকি পার্টি অফিস থেকে আটক করে এলাকা নেতাকর্মী শূন্য করতে চাইলে পারেনি পুলিশ। এতে পার্টি অফিসে নেতাকরমীদের আনাগোনা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি তাদের।

২৬ দিনে ৩২৪ মামলা, গ্রেফতার দেড় হাজার

বিএনপির দফতর সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ও ২৯ জুলাই বিএনপি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন থাকায় ৩২৪টি মামলা দেয়া হয়েছে। এতে বিএনপির ১৩ হাজার ১১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১ হাজার ৫২১ জনকে। একই সময়ে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের হামলায় দলের এক হাজার ২০০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

অস্ত্রসহ গ্রেফতার বিএনপি চলমান আন্দোলনকে নৎসৎ করতে সরকার এসব করাচ্ছে এবং নেতাকর্মীদের অস্ত্রসহ আটকের ঘটনাকে পুলিশের সাজানো নাটক বলে অবহিত করেছে দলটি।

বিএনপির শীর্ষ নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি
তিনি বলেছেন, সরকারের সকল অস্ত্র আছে, পুলিশ আছে, রাষ্ট্রীয় সকল শক্তি আছে- তারা চাইলে যেকোনো নাটক সাজাতে পারে। বর্তমানের দলের নেতাকর্মীরা গুম খুন গ্রেফতার বেড়ে যাওয়া হলো আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশল। আওয়ামী লীগের একমাত্র লক্ষ্য বিরোধীদের মাঠ থেকে সরিয়ে দিয়ে নির্বাচনী মাঠ খালি করা বলেও মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব।

থেমে নেই কর্মসূচি: আজ বিএনপির গণ কালো পতাকা মিছিল

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সরকার পতনে অক্টোবর হিসেবে নিয়েছে বিএনপি। এমন টার্গেট করে প্রতি সপ্তাহে অন্তত এক-দুইটি মাঠের বড় কর্মসূচি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আন্দোলনের ছক সাজাচ্ছে বিএনপি। তবে সেপ্টেম্বরে আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে সেপ্টম্বরই হতে পারে সরকার পতনের মাস। সবমিলিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফশিলের আগেই রাজপথে এর সমাধান করতে চায় দলটি।

বিএনপি সিনিয়র নেতারা মনে করেন, ইসির পক্ষ থেকে নভেম্বরের কথা বলা হলেও বিএনপির কাছে তথ্য আছে যে তাদের অপ্রস্তুত রেখে অক্টোবরের যেকোনো সময় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হতে পারে। তাই তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনী তফশিল ঘোষণা পর্যন্ত চলমান আন্দোলনকে টেনে নিয়ে যেতে চায় না।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে গিয়ে আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেবে। ওই সময় সবগুলো রাজনৈতিক এক প্লাটফর্মে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কর্মসূচি হতে পারে ঢাকাকে কেন্দ্র করে মহাসমাবেশ, গণসমাবেশ ইত্যাদি। আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে বিচারালয়ের সামনে অবস্থান, নির্বাচন কমিশন, সচিবালয়,গণভবন, ঘেরাওসহ টানা অবস্থানের কর্মসূচি আসবে বিএনপি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজজামান দুদু নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমানে ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের সমস্যা, আন্তর্জাতিক সমস্যা। এ সরকার সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এজন্য তারা জুলুম নির্যাতনের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। অত্যাচার, নির্যাতনকে বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা কোনো বাধা বা চাপ মনে করছেন না। এটা আন্দোলনের জন্যে ভালো দিক, যেকোনো মুহূর্তে আন্দোলনের নামতে পারে রাস্তায়। এটাই তার পূর্ব লক্ষণ বা পূর্বাভাস : কোনো কিছু পরোয়া না করা, কোনো কিছু না মানা। এটা একটা গণঅভ্যুত্থানের পূর্ব ক্ষণ।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকারের বাহিনী রাজধানীসহ সারাদেশের মহানগর, জেলা, উপজেলায় নেতাকর্মীদের খুন-জখম-আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। যাকে তাকে সাদা পোশাকে তুলে নিচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সমানে থেকে সাদা পোশাকে নেতাকর্মীদের আটক করছে। সরকার এসব আটক নির্যাতন অব্যাহত রেখে, জনমতে ভীতি সৃষ্টি করে তাদের পতন ঠেকানোর চেষ্টা করছে। এসব কিছু করেও এ সরকারের শেষ রক্ষা হবে না।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2