শিগগির যুক্তরাষ্ট্রের চাপ কমবে, আশা আ’লীগের
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৪ আগস্ট,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৪:৫১ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের বার্তায় বেশ স্বস্তি এসেছে আওয়ামী লীগে। সেই সঙ্গে বিরাজমান নেতিবাচক পরিস্থিতির অনেক কিছুই আগামী সেপ্টেম্বর থেকে দূরীভূত হওয়ার আশাও দেখা যাচ্ছে সরকারি দলে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতাদের দৃষ্টিতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেপ্টেম্বরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। ওই সময়ে তাঁর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। ওই বৈঠকের পর আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর চাপ আরও কমে আসবে। সব ধোঁয়াশাও কেটে যাবে। এর পর থেকে পুরোদমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড শুরু করা হবে বলে সরকারি দলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসসহ (উড়াল সেতু) মেগা প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে শুরু করা হবে, যা জনমত তৈরিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন আভাসই মিলেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দেয় যুক্তরাষ্ট্র; যাতে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে দেশটির নেতিবাচক অবস্থানই স্পষ্ট হয়। তারা শেখ হাসিনার সরকারকে অস্থির করতে ভিসা নীতি, স্যাংশনসহ নানা ধরনের পদক্ষেপও নিচ্ছে। এতে সরকারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর মধ্যেও তৈরি হয়েছে বড় ধরনের অস্বস্তি।
অবশ্য বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে একমত হয়নি প্রভাবশালী প্রতিবেশী ভারত। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে পাঠানো কূটনৈতিক বার্তায় তাদের অভিমত জানিয়ে বলেছে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে ভূরাজনৈতিক দিক হতে তা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সুখকর হবে না। এটা প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার জন্যও ইতিবাচক নয়। ভারতের এই কূটনৈতিক বার্তার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসার পাশাপাশি চাঙ্গা ভাব তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের বেশ কয়েকজন নেতা। তাদের দৃষ্টিতে, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব নিয়ে সেখানকার সরকারি দল বিজেপিসহ ভারতীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছে। এর পর নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে নয়াদিল্লি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তবে তিনি সমকালকে জানিয়েছেন, আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় নিঃসন্দেহে বেশ গুরুত্ব বহন করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন। শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। তা ছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও শেখ হাসিনার বৈঠকের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে শেখ হাসিনা পঞ্চদশ ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অবস্থান করছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীও ওই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক জানিয়েছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নেওয়ার জন্য আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন। নানক মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর অনেক কিছুই বদলে যাবে; যা হবে আওয়ামী লীগের জন্য খুবই ইতিবাচক।
জানা গেছে, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণেই সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সফরকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে আওয়ামী লীগ। দলের নেতারা বলেছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে কেউ কেউ সুযোগ পেলেই আওয়ামী লীগ সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই ভারত সহায়ক ভূমিকা নিয়েছে। ভারতের সহায়তা না পেলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হয়তো আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিত যুক্তরাষ্ট্র।
অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সঙ্গে বিরাজমান বাংলাদেশের সম্পর্ককে খুব একটা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে না ভারত। এ জন্য আগামীতে চীনের সহায়তায় নতুন প্রকল্প না নেওয়ারও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি পর্যালোচনা করা আওয়ামী লীগের একজন নেতা। দলের সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য বলেছেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সবকিছুই এখন ভালোর দিকে। এই পরিস্থিতির আরও উন্নতির উদ্যোগ রয়েছে তাদের।
অন্যদিকে, সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থন দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আগামী ২ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত উড়াল সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম জানিয়েছেন, ওই দিন উড়াল সেতু উদ্বোধনের পর সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী।
সেতু বিভাগের আয়োজনে সুধী সমাবেশ হলেও সেখানে আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন মির্জা আজম। তিনি বলেছেন, কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে সমাবেশকে জনসমুদ্রে রূপ দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। কমপক্ষে পাঁচ লাখ মানুষ সেখানে সমবেত হবেন। এ জন্য ইতোমধ্যে সাংগঠনিকভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এর আগে আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে ছাত্রলীগ। ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর সাভারের হেমায়েতপুর থেকে রাজধানীর ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেলের ভিত্তিপ্রস্তর (এমআরটি লাইন ৫ নর্থ) স্থাপন করবেন। পরে সাভারে জনসভায় ভাষণ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০ অক্টোবর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন। ওই দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতি রয়েছে। ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ উপলক্ষেও জনসভা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই মেগা প্রকল্পগুলোর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে আরও বড় ধরনের ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা মনে করছেন।