avertisements 2

রাজপথের উত্তাপ গড়িয়েছে আদালতে

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৯ আগস্ট, বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:০৯ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪

Text

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরেই রাজনীতির ময়দানে উত্তেজনা ছিল। কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে দুই দলের মধ্যে সংঘাতও হয়েছে। ভোটের আগ পর্যন্ত এমন অবস্থা থাকবে বলে আশঙ্কা করা হলেও আপাতত রাজপথের উত্তেজনা কিছুটা কমেছে। তবে রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে আদালতপাড়া। উচ্চ আদালতে হামলা-ভাঙচুরের মতো ঘটনাও ঘটেছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বেশ কিছু দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলো। সবশেষে তাদের দাবি এক দফায় রূপ নেয়। সেটি হলো সরকারের পদত্যাগ। এই দাবিতে ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে।

রাজনীতির এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে দুদকের করা মামলায় সাজা হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রীর ডা. জুবাইদা রহমানের। যা নিয়ে কয়েকদিন ধরেই উচ্চ আদালতে উত্তেজনা চলছিল। এর মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান দম্পতিকে। এছাড়া সদ্য সমাপ্ত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের আদালতে আনা-নেয়া ও আগের মামলাগুলোর সাক্ষ্যগ্রহণ চলায় আদালতে উত্তাপ বাড়ছে। এসব কারণে আপাতত হার্ডলাইনের কর্মসূচি থেকে সরে এসেছে বিএনপি।

তবে বিএনপি নেতাদের দাবি, আদালতকে ব্যবহার করে সরকার তাদের হয়রানি করলেও মাঠের কর্মসূচিতে তারা আছেন, থাকবেন। উদাহরণ হিসেবে— কেউ কেউ সম্প্রতি ঢাকায় চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও প্রতিবাদ সমাবেশ করার প্রসঙ্গ টানছেন।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ‘আসলে আমাদের রেস্ট নেয়ার সুযোগ নেই। মামলা তো চলছেই। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিপুল মানুষের উপস্থিতি দেখে সরকার অসহায় হয়ে পড়ছে। অবশ্যই কর্মসূচি আসবে। আমরা তো সময় দেখে চলছি না। যদিও নির্বাচনের বছরে সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই যতই প্রতিকূল অবস্থা থাকুক মাঠে থাকতেই হবে। সহসাই নতুন কর্মসূচি আসবে আশা করি।’

একই ধরনের কথা বললেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলামও। তিনি বলেন, ‘কোর্টের ব্যস্ততা আর উত্তাপ নতুন কিছু নয়। কখনো কখনো আমাদের অর্ধেক মাস কোর্টের বারান্দায় ছুটতে হয়েছে। এখনও যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। আইনজীবীরা সবসময় সক্রিয় ছিলেন, এখনো আছেন। সেক্ষেত্রে মাঠে কর্মসূচি শিথিল বলার সুযোগ নেই। কারণ আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি কখনো একইভাবে চলে না। কখনো উত্তাপ, কখনো ঠান্ডা মনে হতে পারে। আমার মনে হয় দল সঠিক পথে আছে। শীর্ষ নেতারা হয়তো আবারও চিন্তাভাবনা করে কর্মসূচি দেবেন। আমরা প্রস্তুত আছি।’

বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, গত ২৮ জুলাইয়ের মহাসমাবেশ ও ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতাকর্মীদের হামলায় ৮২০ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় ৫০০ জনকে। এছাড়া একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে নির্বাচনের আগে শক্তিক্ষয় করতে চায় না বিএনপি। নতুন করে ধরপাকড় শুরু হওয়ায় গ্রেপ্তার এড়ানোর পরামর্শও দেয়া হয়েছে নেতাকর্মীদের।

যেভাবে সরগরম হয়ে ওঠে রাজপথ: সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দেয়াকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় উত্তেজনা। এর আগে ঢাকায় পদযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি পালন করলেও খুব একটা উত্তাপ ছড়ায়নি।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপির মহাসমাবেশের দিনে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করায় সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দেয়। অবশেষে পুলিশের দেয়া শর্ত মেনে দুই দল গত ২৮ জুলাই কর্মসূচি পালন করে। বিএনপির সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগম হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই নেতাকর্মীরা বেশ চাঙা হয়ে ওঠেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের কণ্ঠেও ছড়িয়ে পড়ে উচ্ছ্বাস।

নয়াপল্টনের সমাবেশ মঞ্চ থেকে পরদিন ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। পরের দিন পুলিশ ও সরকারি দলের নেতাকর্মীদের কঠোর অবস্থানের মধ্যেও মাঠে নামে দলটির নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। যদিও ওই কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ড ও মহানগর নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার আলোচনা আছে দলের ভেতরে।

এরইমধ্যে গত বুধবার দুর্নীতি মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৯ ও তার স্ত্রী ডা. জুবায়দা রহমানের ৩ বছরের কারাদণ্ডের রায় দেয়া হয়। এই রায়ের কারণে তারেক রহমানের পর জুবাইদাও নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে গেলেন। যে কারণে একদফার জায়গায় রায় নিয়ে কর্মসূচিতে ঝুঁকে পড়ে বিএনপি রায়ের প্রতিবাদে গত শুক্রবার দেশজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি।

 এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে আপাতত কোনো কর্মসূচি না থাকলেও সহসাই দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে হার্ডলাইনের কর্মসূচির দিকে সেপ্টেম্বর নাগাদ যাওয়ার ভাবনা আছে বিএনপিতে।

রাজপথ রেখে যে কারণে চোখ আদালতপাড়ায়: তারেক রহমান দম্পতির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার দিন ঢাকার নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তাদের বিক্ষোভের জবাবে মাঠে নামেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থক আইনজীবীরাও। রায় ঘোষণার এক দিন পর ৩ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টে ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

আইনজীবী সমিতির সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুরের অভিযোগে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও সুপ্রিম কোর্ট বার ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজলসহ ১৮ আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এদের মধ্যে সোমবার ১৪ জনকে ৮ সপ্তাহের জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। আর চার আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে গত ৩০ মে দুদকের মামলায় হাইকোর্টে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও আমানউল্লাহ আমান দম্পতির সাজা বহাল রেখে দেয়া রায়ের ২৮১ পাতার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। সোমবার রায় প্রকাশ হওয়ার দিন ১৫ দিনের মধ্যে আমান উল্লাহ আমান ও তার স্ত্রীকে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর তাকেও কারাগারে যেতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিএনপি। অন্যদিকে বিএনপির অন্য শীর্ষ নেতাদের মামলাও দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে।

জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় ৩৫ নেতার বিরুদ্ধে এক হাজারেরও বেশি মামলা বিচারাধীন। বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের অভিযোগ, আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থী ও শীর্ষ নেতাদের অযোগ্য করার জন্য দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ দুই বছর সাজা হলে নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার বিধান রয়েছে। অবশ্য সরকারের আইনমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বরাবরই এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তাদের ভাষ্য, মামলা তার নিজস্ব গতিতে চলছে।

বিএনপি নেতাদের মামলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে দলটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘সরকার আবারও বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে চায়। অন্যদিকে সরকার নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হলে যাতে নেতাদের কারাগারে থাকতে হয় সেজন্য মামলাগুলো দ্রুত শেষ করতে চাচ্ছে। পুলিশ খুঁজে খুঁজে সাক্ষী হাজির করছেন। এমনকি রাতেও সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে। এসব কোনো শুভলক্ষণ নয়। তাই আইনী লড়াইয়ের সঙ্গে রাজপথেও লড়াই চলবে।’

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2