বিএনপির শক্তি পরীক্ষার জন্যই কি জামায়াতের একলা নীতি?
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৪ আগস্ট,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:০৯ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ফের রাজপথে ফিরছে রাজনীতি। সমাবেশ-পদযাত্রায় মুখর ঢাকা। সরকারের কঠোর নীতি কিছুটা শিথিল হতেই মাঠে নামছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। দেশজুড়ে কর্মসূচি দিচ্ছে সরকার বিরোধীরা।
বিশেষ করে বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নয়া ভিসানীতি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধিদের সফরের পর থেকেই বিরোধী শিবিরে চাঙা হতে শুরু করেছে রাজনীতি। সমাবেশের পর সমাবেশ, মিছিল-বিক্ষোভ মিছিল, পদযাত্রার মতো কর্মসূচিতে পুরোনো রূপে ফিরছে রাজনীতির আঙিনা।
রাজনীতির এমন মাঠে পিছিয়ে নেই যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দল জামায়াতও। দীর্ঘ এক যুগ পর গত ১ জুন সমাবেশ করে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিয়েছে দলটি। জামায়াতের ঘরোয়া কর্মসূচিই যেখানে নিষিদ্ধ ছিল, সেখানে পুলিশের অনুমতি নিয়ে রাজধানীর বুকে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশ রীতিমতো তোলপাড় সৃষ্টি করে।
জামায়াতের এ সমাবেশ নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন খোদ বিএনপির নেতাকর্মীরাও। তাদের কেউ কেউ উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘জামায়াতকে নিয়ে সরকার নতুন খেলা খেলতে চাইছে। সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে মাঠে নেমেছে জামায়াত।’
যদিও জামায়াত নেতারা বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। সম্প্রতি বিএনপি-জামায়াতের মধ্যকার দৃশ্যমান দূরত্ব থেকে নানা হিসাব কষছেন বিশ্লেষকরা। জোট অটুট থাকা অথবা ভাঙন নিয়ে দু’দলের কেউই স্পষ্ট বার্তা দেয়নি। জামায়াত থেকে বিএনপি মুখ ফেরালো, নাকি জামায়াত নিজে থেকেই একলা চলা নীতি অবলম্বন করলো, তা এখন রাজনীতির রহস্য ইস্যু।
তবে বিএনপির অবস্থানে জামায়াত যে বিরক্ত তা প্রকাশ করলেন দলটির ঢাকা দক্ষিণের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করেন তিনি। এই নেতা জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।
তার ভাষ্য, ‘বিএনপির সঙ্গে জোট করার পর থেকে সবচেয়ে বেশি মূল্য দিয়েছে জামায়াত-শিবির। হত্যা, গুম, মামলা বেশি মোকাবিলা করতে হয়েছে আমাদের। অথচ সুবিধা বেশি নিয়েছে বিএনপি। সরকারে থাকলেও সুবিধায় বিএনপি, বিরোধীদলে থাকলেও সুবিধায় বিএনপি। যে সময় মাঠে থাকার কথা, সে সময় হাত গুটিয়ে বসে থেকেছে। আমরা রক্ত দিয়েছি আর বিএনপির নেতারা টকশোতে গিয়ে ঝড় তুলেছেন।’
‘জোটের বৃহৎ দল বিএনপির এমন আচরণে আমরা অবাক হয়েছি। এভাবে তো দীর্ঘদিন চলতে পারে না। আর একটি জোট তো আজীবনের জন্য নয়। বিশেষ সময়, বিশেষ ইস্যু কেন্দ্র করে জোট গঠন হয়।’
তাহলে জোটের সেই সময় কি ফুরিয়ে আসছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘জামায়াত যে উদ্দেশ্যে জোট গঠন করেছিল, তার প্রয়োজনীয়তা এখন ফুরিয়েছে বলে আমরা মনে করি না। আদর্শের ভিত্তিতে লড়াইটা আরও দীর্ঘপথের। আরও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এখন। একটি জনবিচ্ছিন্ন এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের জন্য আমরা আন্দোলন করছি। আন্দোলন যুগপৎও হতে পারে, এককভাবেও হতে পারে। যে যেখান থেকেই আন্দোলন করি, উদ্দেশ্য কিন্তু একই। আমরা মানুষের মুক্তি চাই। মানুষের স্বাধীনতা চাই।’
আন্দোলন প্রসঙ্গে এই নেতা আরও বলেন, ‘জামায়াতের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা জামায়াতের দেওয়া। এই দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। আমরা এককভাবেই আন্দোলন করতে পারি এখন। কিন্তু আন্দোলনের ফলাফল কার ঘরে উঠবে সেটাও দেখা জরুরি। বারবার ফসল ফলাবো আমরা, আর ঘরে তুলবে অন্যরা, তা তো হতে পারে না। আমাদের হারাবার কিছু নেই। সুতরাং, ক্ষমতার মোহে জামায়াত সংগ্রাম করে না।’
সরকারের সঙ্গে আঁতাত প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, ‘জামায়াতের জনপ্রিয়তা দেখে কেউ কেউ এই মিথ্যা অভিযোগ করছেন, যার কোনো ভিত্তি নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে আঁতাত হতে পারে না, তা আমাদের তৃণমূল পর্যায়ের একজন কর্মীও বিশ্বাস করেন। এই সরকারের পতন না ঘটলে জাতির জন্য বিপদ অনিবার্য। মানুষের এই বিশ্বাসের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার কোনো সুযোগ নেই।’