avertisements 2

ঢাকায় কী ঘটতে যাচ্ছে কাল

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৬ জুলাই, বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:০৮ এএম, ৪ মে,শনিবার,২০২৪

Text

কী ঘটতে যাচ্ছে আগামীকাল! রাজধানী ঢাকায় এ দিন স্বল্প দূরত্বে আবারও সমাবেশ ডেকেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এর পাশাপাশি বিএনপির জোটসঙ্গী মিত্র দলগুলোও প্রেস ক্লাব, পল্টন, বিজয়নগরসহ কয়েকটি পয়েন্টে সমাবেশ করবে। এখানে শেষ নয়, এবারই প্রথমবারের মতো চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনও আগামীকাল বৃহস্পতিবার বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে জনসভার ডাক দিয়েছে। এ দিকে আওয়ামী লীগ সমাবেশ করবে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে। আর বিএনপি সমাবেশ করবে নয়াপল্টন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এক মাইল দূরত্বের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর লাখ লাখ লোকের সমাগম শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ রাখা যাবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, যেকোনো পক্ষ থেকে কোনো হঠকারী কিছু করা হলে দেশের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে যেতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর এই পাল্টাপাল্টি সমাবেশ সাধারণ মানুষের মধ্যেও ভীতি সঞ্চার করছে। এ ক্ষেত্রে তারা বলছে, পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সরকারের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখা দরকার। ক্ষমতাসীন দলের উচিত হচ্ছে না, বিরোধী দলের কর্মসূচির সাথে একই দিনে সমাবেশ আয়োজন করার। এ দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতোমধ্যে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশে এখন রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পাল্টাপাল্টি এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশে যেকোনো সময় বড় ধরনের সঙ্ঘাতে রূপ নিতে পারে- এমন আশঙ্কাও রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই সরকার বা সরকারি দল এই সঙ্ঘাতময় বা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে পারতো। বিরোধী দল যে দিন সমাবেশ ডেকেছে আওয়ামী লীগ একই দিনে না দিয়ে অন্য দিন পালন করতে পারতো। সরকারের স্বার্থেই সরকারের উচিত, দেশে সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতি এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিবদমান বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাজধানীতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবারও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছে। ওই দিন বিএনপির যুগপতের শরিক দল ও জোটগুলোও ঢাকায় পৃথকভাবে মহাসমাবেশ ডেকেছে। গত এক দশকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বড় দুই দলসহ সরকারবিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর একই দিনে এ ধরনের পাল্টাপাল্টি বড় সমাবেশ ঘোষণা নজিরবিহীন। পাল্টাপাল্টি এ সমাবেশ নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সচেতন মহলে একটা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা কাজ করছে। রাস্তার পাশে ফুটপাথের চায়ের টেবিলে এখন নতুন করে আলোচনার ঝড় বইছে- একই দিনে সরকার ও বিরোধীদলগুলোর লাখ লাখ লোকের জমায়েত হলে সে দিন কী ঘটতে পারে? রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ের মানুষের মধ্যেও একটা কৌতূহল কাজ করছে। ওই দিন কি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হবে নাকি রাজনীতি সঙ্ঘাতময় হয়ে উঠবে?

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর থেকেই বিএনপি ও তার মিত্ররা রাজপথে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। কিছুতেই তারা রাজপথে সরকারবিরোধী বড় ধরনের কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। সর্বশেষ গত ১০ ডিসেম্বরও রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশের ডাক দিয়েও সফল হয়নি। অবশ্য এ বছরের শুরু থেকে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের দৌড়ঝাঁপ চোখে পড়ার মতো। এ দেশে বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান হোক- তারা এটা চায়। এ জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ প্রতিনিধিদল দফায় দফায় সরকার ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাথে বৈঠক করে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছে। যেটা সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য বড় ধরনের চাপ হিসেবে দেখছে সরকারবিরোধীরা। এ দেশে এখনো সফররত রয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ইমন গিলমোর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলমের সাথে সাক্ষাৎ করে এ দেশে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। সূত্র আরো বলছে, সরকারের ওপর বিদেশীদের নানামুখী চাপ ও শেষমেশ মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পরই আওয়ামী লীগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজপথে অনেকটা সহনশীল আচরণ করছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজপথে বিএনপি ও তার মিত্রদের চাঙাভাব দেখা যাচ্ছে। তারা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বড় ধরনের সভা সমাবেশ করে শক্তি জানান দিয়েছে। গত ১২ জুলাই ঢাকায় বড় সমাবেশ করে বিএনপি সরকার পতনের এক দফাও ঘোষণা করেছে।

সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। ওই মহাসমাবেশ নয়াপল্টন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার জন্য ডিএমপিতে চিঠি দিয়েছে দলটি। এ দিকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ যৌথভাবে ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ শিরোনামে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। সমাবেশটি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে অনুষ্ঠিত হবে। যদিও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল ২২ জুলাই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে ২৪ জুলাই সমাবেশ করার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে তারিখ পরিবর্তন করে ২৭ জুলাই ঘোষণা করা হয়। সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, গাজীপুর মহানগর, নারায়ণগঞ্জ মহানগর এবং টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা জেলা ও ময়মনসিংহ জেলার নেতৃবৃন্দ। এ জন্য মতবিনিময় সভা করেও কেন্দ্রের তরফ থেকে নেতা-কর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এর আগেও গত ২২ জুলাই বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ যৌথ উদ্যোগে সমাবেশ করে। এর আগে গত ১২ জুলাই বিএনপি নয়াপল্টন এবং আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে একই দিনে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করে। এর পর ১৮ ও ১৯ জুলাই ঢাকাসহ দেশব্যাপী দুই দিনের পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে সরকারের পদত্যাগের এক দফার আন্দোলনে নামে বিএনপি। ওই একই দিনে আওয়ামী লীগও ঢাকাসহ সারা দেশে ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ শিরোনামে শোভাযাত্রা কর্মসূচি পালন করে।

তবে একই দিনের কর্মসূচি পালন হলেও আওয়ামী লীগ একে পাল্টা কর্মসূচি বলতে নারাজ। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, বিএনপি যাতে অতীতের মতো জ্বালাও পোড়াও করতে না পারে, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে না পারে সে জন্য সরকারি দল হিসেবে দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে রাজপথে সতর্ক থাকা। ২৭ জুলাই আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে গতকাল সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রথমত, বিএনপি যে দিন সমাবেশ ডাকবে সে দিন এতো বড় ঢাকা শহরে আর কেউ সমাবেশ করতে পারবে না- এ নিয়ম তো নেই। দ্বিতীয়ত, বিএনপি যখন সমাবেশ ডাকে তখন তো মানুষ আতঙ্কে থাকে, সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের পাশে থাকা, বিশৃঙ্খলার বিষয়ে সতর্ক থাকা। সে দায়িত্ববোধ থেকেই ২৭ জুলাই যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সম্মিলিতভাবে সমাবেশের ডাক দিয়েছে। তিনি বলেন, তিনি বলেন, আমরা কখনোই সঙ্ঘাত চাই না, কারণ আমরা সরকারে আছি। বরং বিএনপি সঙ্ঘাত তৈরির অজুহাত খুঁজছে।

অপর দিকে বিএনপির দাবি- সঙ্ঘাত সৃষ্টির জন্য আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডেকেছে। গতকাল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী ২৭ তারিখে ঢাকায় আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবো। কোনো চক্রান্ত করে এ মহাসমাবেশ নস্যাৎ করা যাবে না। প্রশাসনের কাছে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, আমাদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে দেবেন। অন্যথায় সব দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রবীণ রাজনীতিক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, দেখতে হবে সমাবেশের উপযোগিতা আছে কি না। বিএনপি এর আগেও আন্দোলন-সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। বিএনপি সরকার পতনের ডাক দেবে আওয়ামী লীগ তো সরকারি দল হিসেবে ঘরে বসে থাকতে পারে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সঙ্ঘাত চায় না। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। তবে কেউ যদি রাজপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় তার জবাব দেয়া হবে, প্রতিহত করা হবে। এ জন্য শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে নেতা-কর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2