বিএনপি কী করতে পারে, তা দেখে সিদ্ধান্ত নেবে জামায়াত
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২২ জুন,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:০৮ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায়ে বিএনপি কী করতে পারে, তা দেখে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নেবে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ বা যুগপৎ আন্দোলনে ফেরার আলোচনা এখনও হয়নি। জামায়াতের প্রথম অগ্রাধিকার মার্কিন ভিসা নীতির কারণে যে পরিবর্তন এসেছে তা কাজে লাগিয়ে এক যুগ বন্ধ থাকা দলীয় কার্যালয়গুলো খোলা। কার্যালয়ে সভা করতে ঈদের পর পুলিশের অনুমতি চাইবে দলটি।
গত শনি এবং রোববার ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার বৈঠক এবং দলটির নেতাদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তাঁরা জানিয়েছেন, বিএনপি একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারলে, জোটবদ্ধ বা যুগপৎ না হলেও এককভাবে আন্দোলনে সক্রিয় হবে জামায়াত।
গত ১০ জুন এক দশক পর পুলিশের অনুমতি নিয়ে রাজধানীতে সমাবেশ করেছে আদালতের রায়ে নিবন্ধন হারানো জামায়াত। এতে রাজনীতিতে নতুন আলোচনা তৈরি হয়েছে। দলটির প্রতি সরকার হঠাৎ নমনীয় হয়েছে কিনা–এ প্রশ্নও উঠেছে। জামায়াতের নায়েব আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সমকালকে বলেছেন, সরকারের সঙ্গে সমঝোতার সামান্যতম সুযোগও নেই।
চলতি মাসের শুরুতে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ফের যোগাযোগ শুরু এবং সম্পর্ক জোড়া লাগার গুঞ্জন শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। ১০ জুনের সমাবেশের পর বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ হয়নি বলে জানিয়েছেন ডা. তাহের। জামায়াতের হঠাৎ সমাবেশের অনুমতি পাওয়ায় বিএনপিও সন্দেহের চোখে দেখছে।
জুলাই থেকে ‘একদফা’ দাবিতে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেওয়া বিএনপির সঙ্গে জামায়াত থাকবে কিনা– প্রশ্নে সাবেক এমপি তাহের বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জামায়াত নিজস্ব সিদ্ধান্তে ও সামর্থ্য অনুযায়ী আন্দোলনে আছে, তা অব্যাহত থাকবে।
২০১০ সালে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর পর থেকে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে জামায়াত। বিচার ঠেকাতে ডাকা কর্মসূচিতে সহিংসতার মামলায় দলটির বহু নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হন।জামায়াতের হিসাবে এই সংখ্যাটি ৯৬ হাজার। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে রাজনীতিতে পুলিশের সঙ্গে বড় ধরনের সংঘর্ষের পর থেকে বন্ধ রয়েছে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কার্যালয়। এরপর একে একে সারাদেশে সব কার্যালয় বন্ধ হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জামায়াত অংশ নিলেও কার্যালয় খুলতে পারেনি।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম সমকালকে বলেন, কার্যালয় খুলতে পুলিশের অনুমতি চাওয়ার প্রয়োজন নেই। ঈদের পর থেকে পুলিশকে অবহিত করে কার্যালয়ে সভা, রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে।
২০১৩ সালে এবং ২০১৫ সালে বিএনপির পাশে হরতাল-অবরোধে ছিল জামায়াত। ২০১৮ সালের পর দূরত্ব তৈরি হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে দুই দলের জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভাঙলেও ১০ দফা দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে নেমেছিল জামায়াত। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার এবং কর্মসূচিতে হামলার নিন্দা প্রতিবাদ না করায় যুগপৎ আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ায় জামায়াত।
গত ১০ জুনের সমাবেশ থেকে জামায়াত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়। গত রোববার জামায়াতের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম মজলিশে শূরার সভায়ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে অনড় থাকার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয় বলে সমকালকে জানান আবদুল হালিম।
কিন্তু আন্দোলনের ধরন কী হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে এ নেতা সমকালকে বলেন, মজলিশে শূরার সকল সদস্য আন্দোলনের বিষয়ে একমত। তবে কর্মসূচি ও দিনক্ষণ ঠিক হয়নি।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে জুলাই থেকে জোরালো আন্দোলনে নামার কথা বলছে বিএনপি। সমমনা দলগুলোকেও একই আহ্বান জানিয়েছে দলটি। জামায়াত নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি রাজপথে কী করতে পারে, আন্দোলন কতটা জমাতে পারে, তার ওপর নির্ভর করে জামায়াত পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে।
আবদুল হালিম সমকালকে বলেন, একটি সফল সমাবেশ করেছে জামায়াত। পরবর্তী আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করবে। ধাপে ধাপে পরিণতির দিকে আন্দোলন নিয়ে যাবে।
দলটির নেতারা বলছেন– তাঁদের ধারণা, বিএনপি হরতাল-অবরোধের দিকে যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে সরকারকে চাপে রেখেছে। বিএনপি বড় বড় সমাবেশ করে সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়ানোর চেষ্টা করবে। জামায়াতও তাই সভা-সমাবেশ, কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর রাজনীতি করবে। বড় মিছিল, সমাবেশ করে শক্তিমত্তা জানান দেবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীতির কারণে সরকার আগের মতো সভা-সমাবেশে বাধা দেবে না বলে আশাবাদী জামায়াত।
১০ জুনের সমাবেশ করতে পেরে নেতাকর্মীর মধ্যে যে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে, হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দিয়ে তা শেষ করার পক্ষপাতী নন জামায়াত নেতারা। দলটির নেতাকর্মীরা এখনও গ্রেপ্তার হলেও আগের মতো ঢালাও ধরপাকড় হচ্ছে না। আবার কারাবন্দি নেতারাও মুক্তি পাচ্ছেন না। দলীয় আমির শফিকুর রহমান জামিন পাননি। জামিন পেলেও নায়েবে আমির শামসুল ইসলাম দুইবার, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার চারবার এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খানকে দুইবার ফের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে পুরেনো মামলায়। গোলাম পরওয়ার গত ১৩ জুন জামিন পেলেও এখনও ছাড়া পাননি।
জামায়াত নেতারা বলছেন, আগ বাড়িয়ে আন্দোলনে নামলে নেতাকর্মীরা ফের আগের মতো ধরপাকড়ের শিকার হতে পারেন। আন্তর্জাতিক চাপ এবং কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি আন্দোলন জোরদার করতে পারলে, জামায়াত তাতে সর্বাত্মকভাবে থাকবে। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে যারাই আন্দোলন করছে, তাদের পাশে আছে জামায়াত। বিএনপি আন্দোলন করছে। গণতন্ত্র মঞ্চ আন্দোলন করছে। এতে জামায়াতের অংশগ্রহণ না থাকলেও সমর্থন আছে।