ফের আলোচনায় ‘সংলাপ’: আওয়ামী লীগে মতানৈক্য
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৮ জুন,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:২৩ এএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমুর ইউটার্ন * আলোচনার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি -ওবায়দুল কাদের * সংলাপের কোনো বিকল্প নেই -স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নানা গুরুত্বপূর্ণ অভিন্ন ইস্যুতে দুই মেরুতে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও দুদলের অবস্থান বিপরীতমুখী। সংকট নিরসনে হঠাৎ করেই সামনে এসেছে দুদলের আলোচনা। সংলাপ নিয়ে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা আমির হোসেন আমুর দেওয়া বক্তব্যে রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করে। এর মধ্য দিয়ে সংকট নিরসনে দুদলের এক টেবিলে বসার সম্ভাবনা দেখছিলেন অনেকে।
তবে ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায়। এ ইস্যুতে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা-মন্ত্রীদের মধ্যে দেখা দেয় মতানৈক্য। প্রভাবশালী দুই নেতা আমুর বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রভাবশালী এক মন্ত্রী সংলাপের পক্ষে মত দেন। আর আমির হোসেন আমু নিজেও তার অবস্থান থেকে সরে আসেন।
গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সিনিয়র নেতাদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে যখন বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন, সেখানে তাদের এমন বক্তব্যে দলের ভেতরে-বাইরে বিভ্রান্তির সুযোগ তৈরি হতে পারে। তাই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সতর্কতার সঙ্গে কথা বলা উচিত।
মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ১৪ দলের সমাবেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রয়োজনে জাতিসংঘের প্রতিনিধির মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে বলে জানান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, প্রয়োজনে জাতিসংঘের প্রতিনিধি আসুক আমরা বিএনপির সঙ্গে মুখোমুখি বসে আলোচনা করে দেখতে চাই, কীভাবে সবাই মিলে একটি অংগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়। সেটা আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা হতে পারে, অন্য কোনো পথে নয়।
নিজের এমন বক্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অবস্থান পরিবর্তন করেন আমির হোসেন আমু। বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আলোচনাসভায় তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ইস্যুতে কাউকে আলোচনার জন্য আহ্বান করা হয়নি। আলোচনার জন্য কাউকে বলা হয়নি, কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। কাউকে আহ্বান করা হয়নি। কাউকে আহ্বান করার সুযোগ নেই। এটা আওয়ামী লীগের বাড়ির দাওয়াত নয় যে দাওয়াত করে এনে খাওয়াব।’
১৪ দলের মুখপাত্র আরও বলেন, জোটনেত্রী শেখ হাসিনা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে যে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সেটা তিনি করবেন। নির্বাচন হবে সংবিধানের ভিত্তিতে। সবাইকে সে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। আগামীতে ক্ষমতা কার হাতে থাকবে সেটা জনগণ নির্ধারণ করবে। সেই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে বলা যায়, কিন্তু আলোচনার জন্য নয়।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে বারবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল। সেই নির্বাচনে জাতিসংঘ থেকে তারানকোকে (জাতিসংঘের সাবেক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো) পাঠানো হয়েছিল। আমাদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা তাদের সামনে প্রমাণ করেছিলাম নির্বাচন না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে। একটি দেশের জন্য সাংবিধানিক শূন্যতা কাম্য হতে পারে না। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আমু বলেন, সেদিনও তোমরা আলোচনায় পরাজিত হয়েছিলে। তার মাধ্যমে আমাদের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছিল। ধারাবাহিকভাবে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটি জায়গায় আনতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আজকেও নির্বাচন হবে সংবিধানের ভিত্তিতে। দেশে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হতে দেওয়া যাবে না।
এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এর আগে একাধিকবার বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা নাকচ করেছেন।
আমির হোসেন আমুর মঙ্গলবারের বক্তব্যের পরদিন বুধবার সকালে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আলোচনার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজেদের সমস্যা আমরা আলোচনা করব, প্রয়োজন হলে নিজেরাই সমাধান করব। জাতিসংঘের মধ্যস্থতার কথাও উড়িয়ে দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, এখন বাইরের বিষয়টা কেন বারবার আসে? জাতিসংঘ কেন মধ্যস্থতা করবে? জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করবে এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট এই স্বাধীন বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত হয়নি।
এদিকে সচিবালয়ে সাংবাদিকরা আমির হোসেন আমুর বক্তব্য নিয়ে অবস্থান জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমির হোসেন আমু আমাদের দলের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। তার এ বক্তব্য নিয়ে আমাদের দলের মধ্যে, সরকারের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। এমনকি ১৪ দলের মধ্যেও কোনো আলোচনা হয়নি। এটি সম্পূর্ণভাবে তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। তবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, তিনি বলেছেন আসলে গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে তিনি ঠিক সেভাবে বলেননি। যেভাবেই আসুক এটি তার ব্যক্তিগত অভিমত, দল, সরকার কিংবা ১৪ দলের কোথাও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
এদিকে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বুধবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংলাপ চলমান থাকবে। সংলাপের বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, সবকিছুই সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল আরও বলেন, আওয়ামী লীগ একটি জনপ্রিয় দল। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণের ক্ষমতায় জনগণকে নিয়েই চলতে হবে। আর জনগণের ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে হলে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই আলোচনার বিকল্প কিছু নেই।