কাউন্সিল নিয়ে হেফাজতের দুই গ্রুপের কোন্দল প্রকাশ্যে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:৩৫ পিএম, ১৫ নভেম্বর,রবিবার,২০২০ | আপডেট: ০৭:৪৯ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রয়াত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংগঠনটিতে তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত নেতারা।
শনিবার চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করে এ 'হত্যাকাণ্ডের' বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও আগামীকালের কাউন্সিল বন্ধের দাবি জানান তারা।
শনিবার (১৪ নভেম্বর) বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে হেফাজতের ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী এসব দাবি করেন।
এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন আল্লামা আহমদ শফীর ছোট শ্যালক মো. মঈন উদ্দিন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহী।
উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির ছয় সদস্য এবং আহমদ শফীর নাতি মাওলানা কায়সার। সংবাদ সম্মেলনে আহমদ শফীর ছেলে ও হেফাজতের প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানী উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও ‘হত্যার হুমকি’ পেয়ে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানানো হয়।
মঈন উদ্দিন লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমার আপন বোন ফিরোজা বেগম (৮০) আমার ভগ্নিপতি হযরত আল্লামা শাহ আহমদ শফী হুজুরের অস্বাভাবিক মৃত্যুর শোকে অসুস্থ। আমি তার কান্না সহ্য করতে পারছি না। তার অনুরোধে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।
আল্লামা শফীর মৃত্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার ভগ্নিপতি হযরত আল্লামা শফি স্বাভাবিকভাবে মারা যাননি। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা তার খুনের সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে বিচার দাবি করছি। আমরা তার হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।
হেফজতের কাউন্সিল নিয়ে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের একটি সাংগঠনিক নিয়ম-নীতি আছে। এ নিয়ম-নীতিতে কাউন্সিলের প্রয়োজন নেই। সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে এ পদ নির্ধারণ করা হবে। তাই আমরা এ সংবাদ সম্মেলনে আগামীকালের (রোববার) কাউন্সিল বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।
এছাড়া শাপলা চত্বরে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ফাঁদে পা না দেয়ার কারণে শফী হুজুরকে তখন থেকেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয় দাবি করে তিনি বলেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় কিছু ছাত্রকে উস্কে দিয়ে জামায়াত-শিবিরের লেলিয়ে দেয়া ক্যাডার বাহিনী মাদ্রাসা অবরুদ্ধ রাখে। এ সময় বিভিন্ন ধর্মীয় বইয়েও অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
অন্যদিকে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে মঈনুদ্দীন রুহী বলেন, হেফাজতে ইসলামের বর্তমানে কোনো শূরা কমিটি নেই। ২০১৪ সালে প্রস্তাব হয়েছিল; কিন্তু শফী হুজুর বলেছিলেন শূরা করলে সারা দেশের আলেমদের নিয়ে করতে হবে। হেফাজতে ইসলাম এত বড় সংগঠন যে তাহলে দেশব্যাপী হাজারখানেক সদস্য হবে শূরার। তাই শূরা কমিটি হয়নি।
তিনি বলেন, নিজেরা আমীর হওয়ার জন্য এই শূরা কমিটির কথা বলা হচ্ছে। আমাদের গঠনতন্ত্র অনুসারে আমীরের অবর্তমানে সিনিয়র নায়েবে আমীর ভারপ্রাপ্ত হবেন। কেন্দ্রীয় কমিটি ও নির্বাহী কমিটির মতামতের ভিত্তিতে আমীর নির্বাচন হবে। কেন্দ্রীয় ও নির্বাহী কমিটির এখন পর্যন্ত কোনো সভা হয়নি। মহাসচিব নিজেই কাউন্সিলের ডাক দিয়েছেন।
রোববার সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেলে যাবেন কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে মঈনুদ্দীন রুহী বলেন, কাউন্সিলে যিনি সভাপতিত্ব করবেন (মহিবুল্লাহ বাবুনগরী) তিনি আগেই পদত্যাগ করেছেন। এরপর আর হেফাজতে ফিরে আসেননি। তাই এ কাউন্সিল অবৈধ।
সাতজন যুগ্ম মহাসচিবের মধ্যে পাঁচজন আমন্ত্রণ পাননি। ৩৫ জন নায়েবে আমীরের মধ্যে ২৩ জন এখনও দাওয়াত পাননি এবং তারা যেন আসতে না পারেন পরিকল্পিতভাবে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে রুহি দাবি করেন।
অন্যদিকে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ও হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামামবাদী এসব বিষয় অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, একটি কুচক্রি মহল হেফাজতকে বিতর্কিত করতে উঠে পরে লেগেছে। তারাই হেফাজতের আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিল বানচাল করতে নানা যড়ষন্ত্রে লিপ্ত। তবে তাদের উদ্দেশ্য কোনদিনও সফল হবে না। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সবাই কাউন্সিলে উপস্থিত থাকবেন বলে তিনি আশা করেন।