মই দিয়ে পার হতে হয় ২৯ লাখ টাকার সেতু
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৯ আগস্ট,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:১২ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বৈরাতীহাট সড়ক দিয়ে চলার পথে পড়বে একটি সেতু। একটু সামনে গেলেই পশ্চিমে হাজেরা-রাজ্জাক (এইচআর) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির ১০০ গজ উত্তর দিকে রয়েছে একটি খাল। এর দুপাশে কৃষিজমি। ওই খালের ওপর ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সেতুটি।কিন্তু দূর থেকে সেতুটি দেখলে চমকে উঠবে মন! সংযোগ রাস্তা ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে এটি। দুপাশে দুট মই রাখা আছে। এই মই বেয়ে পার হতে হয় সবাইকে। কিন্তু বয়স্ক, নারী ও শিশুরা আছে বিপাকে। অনেকেই এটি পার হতে গিয়ে হয়েছেন আহত।
সেতুতে সাঁটানো ফলকে থাকা তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের গ্রামীণ রাস্তায় সেতু/কালভার্ট নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।এইচআর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে হয়বতপুরগামী রাস্তায় হয়বতপুর খালের ওপর এই ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৯ লাখ ২৭ হাজার ৪০১ টাকা। এটির দৈর্ঘ্য ৩৬ মিটার।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্মিত সেতুটির সঙ্গে সংযোগ রাস্তা না থাকায় তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। বর্ষা মৌসুমে সেতুর কিছু অংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। তখন সেতু পারাপারে চরম বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। আর শুকনা মৌসুমে সেতুতে উঠতে মই ছাড়া উপায় নেই। উচুঁ রাস্তা না থাকায় এর দুপাশে থাকা দুটি মই-ই একমাত্র ভরসা।তবে দীর্ঘদিন ধরে সংযোগ রাস্তা না হওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছে সেখানকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এইচআর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পথ ধরে কৃষিজমির পাশ দিয়ে সরু রাস্তা। ওই পথ দিয়েই চলাচল করছে মানুষজন। আবার সেতুর উত্তর দিকে রয়েছে বসতবাড়ি, মসজিদ ও পুকুর।সেখানেও নেই মাটির সংযোগ রাস্তা। তাই দুপাশের মানুষের চলাচল করতে হয় এই সেতু দিয়ে। তবে মই বেয়ে সেতু পার বয়স্ক নারী-পুরুষদের জন্য কষ্টকর হওয়ায় তারা কৃষিজমির আইল ধরে যাতায়াত করেন।
স্থানীয় কৃষক শামছুল হক। সেতুর উত্তর পাশেই তার কৃষিজমি। আলাপকালে তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুরা মই বেয়ে সেতুতে উঠতে পারে না।এ পর্যন্ত অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেতু তৈরির হতে দুই বছরেরও বেশি সময় হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত চলাচল উপযোগী হয়ে ওঠেনি। তাহলে এত টাকা খরচ করে কার লাভ হলো?
কৃষক লোকমান মিয়া বলেন, ঠিকাদারকে অনেক দিন অনুরোধ করেছি, ব্রিজের দুই পাশে মাটি ফেলতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাটি ভরাট করেনি। আমরা ব্রিজের এপারে ৬০ পরিবার বসবাস করছি।
প্রতিদিন কত কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয়, তা কেউ না দেখলে বুঝবে না। আগে ব্রিজ ছিল না, তখনো কষ্ট হয়েছে। এখন ব্রিজ হয়েও কষ্ট হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত ব্রিজের দুই পাশে মাটি ফেলে সংযোগ রাস্তা করা হোক।
গ্রামের মাদরাসাপড়ুয়া নিশাত ইসলাম বলে, ব্রিজ হয়ে আমাদের অনেক ভালো হয়েছে। কিন্তু রাস্তা তো হয় নাই। এখন মই দিয়ে উঠতে-নামতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। আমরা ছোট, তাই অনেক সময় পড়ে যাই। আমরা চাই সরকার দ্রুত ব্রিজের সাথে রাস্তার সংযোগ করে দেবে।
শিক্ষার্থী রনি মিয়া বলে, ২৯ লাখ টাকা দিয়ে ব্রিজ তৈরি করে যদি মই দিয়ে পারাপার হতে হয়, তাহলে ব্রিজের তো দরকার ছিল না। আমাদের অনেক কষ্ট হয় এই ব্রিজ দিয়ে চলাচল করতে।
মই বেয়ে বাইসাইকেল ওপরে নেওয়া গেলেও রিকশা, ভ্যান ও মোটরসাইকেল তো পারাপার করা হয় না। এ জন্য আমরা চাই দ্রুত ব্রিজের দুপাশে মাটি ফেলানোর ব্যবস্থা করা হোক। তা না হলে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ব্রিজ কোনো কাজে আসবে না।
এলাকার মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করেছেন মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়া। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেখানে রাস্তা তৈরির জন্য মাটির খোঁজ করছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্রিজের দুপাশে রাস্তা নির্মাণের কাজ করা হবে।এ বিষয়ে মিঠাপুকুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মোশফিকুর রহমান বলেন, মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর দুই পাশের রাস্তায় মাটি ভরাট করে দেওয়া হবে। মাটি না পাওয়ার কারণে দুই পাশে রাস্তা করতে দেরি হচ্ছে।