জালাল উদ্দিন আহমেদ
মুক্তিযুদ্ধঃ খন্ডিত চেতনা(৫)
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩ জুলাই,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০২:৪৯ এএম, ২৬ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
পুর্ব প্রকাশের পর…..
৫
স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক বা স্বাধীনতার ঘোষনা ইত্যাদি নিয়ে বিস্তর আলোচনা সমালোচনা আমাদের আছে। শোনা যায় এটা নিয়ে আজকাল পিএইচডি করার যোগাড় যন্ত্রনাও চলছে। ঘোষক তার আশেপাশের বিশৃংখলা এবং রাষ্ট্রীয় প্রেক্ষিতে সংঘটিত দৃশ্যপটের অচলায়তন ভাঙ্গার প্রতিরোধে জাতিকে উদবুদ্ধ করতে লিখিত ফরমানের ঘোষনা পাঠ করে তা জাতি তথা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানাতেই পারেন। কিন্তু তিনি কখনোই সেটার ঘোষনাকারী হতে পারেন না। তিনি অবশ্যই সেই ঘোষনার পাঠক। তবে দিশাহীন বাঙালীর নেতৃত্ব শুন্য সেইসব উন্মাতাল দিনে তৎসময়ের সেই অখ্যাত মেজরের দীপ্র কন্ঠের ঘোষনা পাঠ গোটা বাঙালীর ধমনীতে অগ্নিস্ফুরন ঘটিয়েছিল বৈকি! কারন এই ঘোষনাটি এমন একজন মানুষের মুখ থেকে সাধারন বাঙালী শুনেছিল যিনি সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গন হতেই এই ঘোষনাটি পাঠ করেছিলেন।
এই ঘোষনা ও ঘোষনা পাঠ নিয়ে যে কত শত ফর্মুলা বা প্যাঁচাল চলছে তার কোন ইয়ত্বা নেই। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক বা ঘোষনাকারী যে একজনই তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আর তিনি হচ্ছেন এদেশের কিংবদন্তি নেতা ও সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী এবং বাঙালী জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। তাঁর ৭ মার্চের সেই কাব্যময় বজ্রকন্ঠের ঘোষনা বাঙালীর আপন অস্তিত্বে পৌঁছানোর একমাত্র ডাক। আবার ঘোষনা পঠের যতশত ফন্দি ফিকির হোক না কেন, ২৭ মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র (চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রটিই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বেতার কেন্দ্র) হতে ইথারে ভেসে আসা সেই অখ্যাত মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠ বাঙালী তথা বিশ্ব সম্প্রদায় প্রথম শুনেছিল। সুতরাং জিয়াউর রহমান নামের ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেই বাঙালী মেজরটিই ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা পাঠের প্রথম মুক্তিযোদ্ধা। তাছাড়া সেসব দিশেহারা উন্মাতাল দিনে সশস্ত্র বাহিনীর একজন বাঙালী যোদ্ধার দীপ্র কন্ঠের "I major Zia, provisional commander in-chief of Bangladesh liberation army, hereby proclaims, on behalf of Sk. Mujibor Rahman, the independence of Bangladesh" আহ্বান দিশাহীন সাধারন বাঙালীকে যে তাদের নিজ অস্তিত্বে একাট্টা করেছিল তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। তদুপরি বঙ্গবন্ধুসহ বাঘা বাঘা ডাকসাইটে জাতীয় নেতারা যখন জাতির এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের সময় সবাই লোকচক্ষুর অন্তরালে, তখন ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন পোষাক পরা সামরিক অফিসারের ঘোষনা পাঠ গোটা বাঙালী জাতির ধমনীতে অগ্নিস্ফুরন ঘটিয়েছিল বলে মনে করা হয়। এবং সেটাই আম বাঙালীর কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা বলে স্বতঃসিদ্ধতা পেয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর নামে ঘোষিত একজন উর্দিপরা সিপাহীর সেই ডাকেই অপামর বাঙালী মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা ভরসা পেয়েছিল, স্বস্তি পেয়েছিল, বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার সিপাহীদের কাছে মাঠে ময়দানে অস্ত্র ধরা শিখে পরম পরাক্রান্ত পাকিস্থানী চৌকস সেনাবাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে টক্কর দিয়েছিল। অর্থাৎ ৭ মার্চের রেসকোর্স ময়দানে মহান নেতার সেই ঐতিহাসিক ঘোষনা "এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা কর" এবং ২৭ মার্চে জিয়াউর রহমান নামের এক বাঙালী সেনাপতির মুখে মহান নেতার নির্দেশ সম্বলিত স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠ গোটা বাঙালী জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে স্বতঃস্ফুর্ত করেছিল।
অথচ বাংলাদেশের এই স্বাধীনতার ঘোষনাকে নিয়ে অনুগতদের যে কতশত ফন্দি ফিকির তার ইয়ত্বা নেই। এই ঘোষনাকে নিয়ে যে যেভাবে পারছে তার মত করে গল্প তৈরী করে তা বাজারজাত করছে। মোদ্দাকথা, মহান নেতার সাতই মার্চের স্বাধীনতার ডাককে সাতাশে মার্চে মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে বেতার ঘোষনার মাধ্যমে পরিপুর্নতা দিয়েছেন মেজর জিয়াউর রহমান নামের রনাঙ্গনের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। এটাই সত্য এবং সাধারনে প্রকাশ্য। এখানে দ্বিতীয়জন প্রথম জনের সম্পুরক। দ্বিতীয়জন একজন সফল সিপাহশালার যিনি প্রথমজন অর্থাৎ মহান নেতার আদর্শে উদবুদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষনা পাঠে আপামর জনগোষ্ঠীকে উদবুদ্ধ করেছিলেন। এখানে আমার তোমার বলে কিছু নেই, তেমনি এটা নিয়ে রাজনীতি করারও কোন অবকাশ নেই। যা কিছু অর্জন বা অবদান সবটুকুই মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বেই হয়েছে। ইতিহাসের প্রয়োজনেই জিয়াউর রহমান নামক এক মহান সেনাপতির আবির্ভাব ঘটেছে যা বাঙালীর মহান মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছে। ( চলমান.…..…)