
জালাল উদ্দিন আহমেদ
হীনমন্যতা
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৬ জুলাই,রবিবার,২০২৫ | আপডেট: ০৮:৪৪ পিএম, ৬ জুলাই,রবিবার,২০২৫

হীনমন্যতার সংজ্ঞা এখনো ভাল করে পড়া হয়নি আমার। এই শব্দটির প্রায়োগিক আচরনে আমার মা মাটি ও মানুষ আজ শতছিদ্র পরিত্যক্ত বিরান ভূমি যেন। কোথায় নেই এই শব্দটির ব্যবহার বা বিচরণ? ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পরিবার সমাজ রাষ্ট্র এমনকি ব্রম্ভান্ডের প্রতিটি গলিতে এই শব্দটির গলা পচা দুর্গন্ধে সৃষ্টিকুল আজ জ্বরাজীর্ণ। সৃষ্টি জগতের প্রতিটি পরতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা এ যেন এক ডাইবেটিকের রূপ। ডাইবেটিকস যেমন সমস্ত রোগের যোগফলের এক সামস্টিক আকার, এই হীনমন্যতাও সেইরূপ বিশ্বের সমস্ত অত্যাচার অনাচার গোলযোগ যুদ্ধবিগ্রহ ইত্যাদির সামগ্রিক অভিশপ্ত রূপ। জানি এই শব্দটির ব্যাখ্যা বিশ্লেষনে দুনিয়ার তাবড় মাথাওয়ালা মানুষেরা অনেক শ্রম ও ঘাম ঝরিয়েছেন। আমরাও তৃতীয় বিশ্বের আধাভুক্ত মানুষেরা ওসব নিয়ে চিন্তার অফুরন্ত খোরাকে স্নাত হওয়ার তৃপ্তিতে ঢেকুর তুলেছি। কিন্তু কি করি বলুন, মধ্যবিত্তের বাঙালী মন, যে নিজের না বলা কথাগুলি উগরে দিয়ে কিছুটা হলেও আত্মতৃপ্তির স্বচ্ছ জলধারায় অবগাহন করতে চায়। নৈতিক অবক্ষয় হতে উৎসারিত এই হীনমন্যতা যে সৃষ্টি জগতে কত বড় ক্ষতির কারন হয়ে এই সভ্য সমাজকে এলোমেলো করে দিচ্ছে তার হিসাব কষা বড় দূরুহ কাজ। আর হবেই বা না কেন, স্বেচ্ছাচারিতা আত্মরম্ভিতা গোষ্ঠী সুপ্রিমেসী সর্বোপরি ধর্মীয় বিভাজনের আত্মিক টান আজকের দিনে এই শব্দটির কালচারে ব্যাপকতা বাড়িয়েছে।
ব্যক্তিগত আচরনের সূত্র ধরেই এই শব্দটির ব্যপকতা শাখা প্রশাখা বিস্তার করে তা সময়ের ব্যবধানে বহুদূর হেঁটে চলে। সমাজ সংসারের গন্ডিতে চলমান খুচরো হীনমন্যতা ও তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় কত যে অনাচার এবং অনাসৃষ্টির জন্ম দিচ্ছে তার ইয়াত্তা নেই। কর্মক্ষেত্রের অনিয়ম একজন কর্মীর মন ও মননে যে ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক হীনমন্যতার বীজ বপন করে তার হাজারো উপমা উপস্থাপন করা যাবে। তাছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও এর ব্যাপকতা সময়ের বহমানতায় বেশ হিংস্র রূপ ধারন ক'রে বসে আছে। দেশের বর্তমান চালচিত্রে দেখা যায় সরকারী মেকানিজমের কোনো প্রতিষ্ঠানকে আজ আমরা কোমর সোজা করে দাঁড়াতে দেখিনা। কেন দেখি না, তার বয়ান দিতে গেলে তো আবার রাজনীতি নামক অদ্ভুতুড়ে শব্দটি আমাদের মাথায় চাঁটি মারা শুরু করে। কারন বাঙালী তো আবার রাজনীতি সচেতন জাতি। এই রাজনীতি গুলে জল খাওয়া বাঙালী ভারতীয় উপমহাদেশে কত ঘাটের যে পানি খেয়েছে তার কি কোন ইয়ত্বা আছে! হয়তো ক্ষমতা লিপ্সুতা কিংবা ধর্মীয় সূত্রের মাধ্যমে জাতিগত ভেদজ্ঞান সৃষ্টি ক’রে কতক ক্ষেত্রে হীনমন্যতাকে সহি হাদিসে রূপান্তর করা হয়েছে, কিন্তু ব্যক্তি জীবনের রেশ টেনে এই শব্দটির বাহ্যিক আচরন যখন জাতি রাষ্ট্রের কাঠামোতে তরঙ্গায়িত হয় তখন সেটাকে নিয়ে ভাবতে হয় বৈকি!
লিখতে গেলে তো সেই রাজনীতি ক্ষমতা গ্রহন বা শাসন নীতি এমনকি ভূ আঞ্চলিকতার বেড়াজালের কথাগুলিই সামনে চলে আসে। ভারতবর্ষ বরাবরই সর্বধর্ম সমন্বয়ের একক ইউনিটের একটি শান্তিপ্রিয় দেশ হিসাবে বিশ্বজনীন ছিল। বৃটিশ বণিক গুষ্টি এদেশে পা ফেলার পর সাম্য ও সৌহার্দের ভারতবর্ষে কেন যেন আমি তুমি বা আমরা তোমরার একটি প্রচ্ছন্ন ঝড় বয়ে যায়। এবং সেই বাতাসে ফু দিয়ে বৃটিশরা কিভাবে যে তুষের আগুনের আঁচটা তৈরী করে ফেললো সেটাই যেন এই হীনমন্যতা সৃষ্টির এক রহস্যজনক আখ্যান। কিভাবে শাসন ব্যবস্থার বাইরে রেখে সদ্য সাবেক হওয়া শাসক শ্রেনীর জাতিগোষ্ঠীকে ভারতবর্ষে এক চরমতম হীনমন্যতার অগ্নি স্ফুলিঙ্গে জর্জরিত করা হয়েছিল তার জ্বলন্ত প্রমান হচ্ছে সেদিনের সিপাহী বিদ্রোহের সূচনা। অবশ্য প্রিয়ভাজন হয়ে বৃটিশ হেঁসেলে জায়গা নেয়া গরিষ্ঠ সম্প্রদায় ভুত-ভবিষ্যতের হিসাব নিকাশ কষেই হয়তো লাঠি না ভেঙ্গে সাপ মারার কৌশলে পা বাড়িয়েছিল। আর তারাও তো পাঁচ সাত’শো বছরে জমে থাকা হীনমন্যতায় জর্জরিত ছিল। এভাবেই এশিয়া মহাদেশের শৌর্যবীর্য শান্তি সৌহার্দের ভারতবর্ষে তার ভূ-ভৌগলিক জাতিগত সহাবস্থানের শিকলকে ছিন্নভিন্ন করে সেখানে ধর্মীয় জাতিস্বত্বা নির্মানের বীজ বপন করা হোল। ফলে ধর্মীয় জাতিস্বত্বায় বিভাজিত সদ্য স্বাধীন ভারত পাকিস্তানে লঘু গুরুর হীনমন্যতায় জনপদে জমে থাকা তুষের আগুন স্ফুলিঙ্গে রূপ নিল।
সাতচল্লিশে ধর্মীয় জাতিস্বত্ত্বা বিনির্মান করে ভারতবর্ষকে খন্ডিত করন ছিল মানব সৃষ্টির এক চরমতম হীনমন্যতার মাইল ফলক। একজাতি একভাষা ও এক সংস্কৃতির এত নিটোল বন্ধন থাকার পরও শুধুমাত্র শাসন ক্ষমতা অপ্রাপ্তির হীনমন্যতায় বাংলা নামের ভারতবর্ষের সবচেয়ে উর্বর রাজ্যটিকেও খন্ডিত করা হোল। ধর্মের লেবাসে একটি অখন্ড জাতিস্বত্ত্বার দ্বিখন্ডিতকরন ছিল বাঙালী অস্মিতায় কুড়াল মারার সামিল। এবং সেটাও হয়েছিল এই হীনমন্যতার ভেলায় চড়ে। ব্রাহ্মন্য ঠাকুরদের যুপকাষ্ঠে ধুপদোনা আর ঢাকির সাথে বিরতিহীন কাসর ঘন্টা সঙ্গে অতি উৎসাহী যুবকদের ধুনুচি নাচের ধুন্দুমার আয়োজনে সেদিন বাঙালীর একটি শ্রেণী বেশ আমোদেই দিনগুলি পার করেছিল। পাশাপাশি আতর গোলাপের মৌ মৌ গন্ধে আচকান জোব্বা আর মাথায় জিন্নাহ ক্যাপ লাগিয়ে অন্যশ্রেণীর বাঙালীও তাদের ধর্মীয় জৌলুশে সেদিন মসজিদে আযান দিয়ে পাড়া মহল্লায় মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছিল। তবে ক্ষমতার শীর্ষ বিন্দুর সেই দিল্লি আর করাচির হিন্দি আর উর্দু বলয় যখন ক্ষমতার হ্যাঁচকা টানে বাঙালীর আত্মরম্ভিতার শেকড়ে জল ঢালা শুরু করলো তখন কি অখন্ড বাঙালীস্বত্ত্বার আঁতুড়িতে(অন্ত্রে)টান পড়ে নি! এসব ধর্তব্যে না নিয়ে পশিমাংশের মাথা ওয়ালা কোঁচা বাবুরা “ও কিছু না” বলে চালিয়ে দিয়ে ধর্মীয় মানদন্ডে খন্ডিত ভারতে ‘বন্দে মাতরমে’ মনোযোগী হোল। কিন্তু পুর্বাংশের “কাদা মাটির বাঙালীরা” তাদের আপন অস্মিতার লাগাম ধরে “জয় বাংলা”র জিনে টান মারলো এবং কামিয়াব হোল। চব্বিশ বছরের হীনমন্যতার যাঁতাকলে নিষ্পেষিত কাদা মাটির বাঙালী তার আপন অস্মিতায় জ্বলে উঠে নিজের উঠানে পা দিল। অপরদিকে তুষের আগুনে জ্বলে পুড়ে খাক হওয়া পশ্চিম খন্ডের বাঙালীরা যতই ‘এই পিয়ারী ভারত মা তুঝে ম্যাঁই শির ঝুকাতি হ্যায়’ করুক না কেন, অন্তরের নাড়ির টানে তারাও যে ধুঁকছে সেটা তো দিব্য চক্ষেই দেখা যাচ্ছে। চব্বিশ বছরের বাঙালী বিহারীর তালগোলে যে স্ফুলিঙ্গ পুবের বাঙালীদেরকে তাদের আপন অস্তিত্ত্বের স্বাদে দুর্বার করেছিল, পাশাপাশি বাঙালী বাহারীর পঁচাত্তর বছরের বিষাক্ত শংকরায়ন বোধ হয় পশ্চিমের বাঙালীদের লক্ষণ রেখা পেরোনোর মেয়াদোত্তীর্ণ করিয়েই ছেড়েছে। ইদানীং হিন্দুস্তান তৈরীর মাস্টারপ্লানে হিন্দি আর হিন্দু বলয় সৃষ্টি করে পশ্চিমের বাঙালীকে যেভাবে কচলানো হচ্ছে তাতে করে ওদের বাঙালী অস্তিত্ত্বের নিশানাটুকুই না কবে বিলীন হয়ে যায় - সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সবকিছুর মূলে আছে এই হীনমন্যতা। এখান থেকেই জেদ বা জিদ, এই জেদ থেকেই হিংসা, হিংসা থেকে হিংস্রতা, এই হিংস্রতা থেকেই ধংসাত্মক কর্মকান্ড এবং তা থেকে মানবতা জাতিস্বত্ত্বা রাষ্ট্র ব্যবস্থা ইত্যাদির পতন বা পচন শুরু।
আজকে জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী অধ্যায়ে বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডে যে অস্বস্তি এবং ক্ষেত্র বিশেষে অশান্তি ও নৈরাজ্য চলছে তার মূল সূত্রই হচ্ছে এই হীনমন্যতা। সেদিনের পুচকে ছাত্র যুবা, হাতে গোনা যায় যাদের বয়স, এই ছোকরাগুলো কি এমন করলো যে তাদের পাশে বসে আমাদের রাজনীতি শিখতে হবে! পাশাপাশি চেয়ার সোফায় বসে চা-পানির আয়োজনে দেশ শাসনের বাহাসে তাদেরকে এত মূল্য দিতে হবে! রাজনীতির কি জানে ওরা! আজকের বাস্তবতায় এটাই হচ্ছে হীনমন্যতা।

মালয়েশিয়া থেকে ফেরত ৩ প্রবাসী জঙ্গি নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ক্যাসিনোকাণ্ড অভিযানের নেপথ্য কাহিনী জানলে চমকে যাবেন আপনিও

হীনমন্যতা

জোহরান মামাদানির জয়ে মোদি-ভক্তরা কেন ক্ষিপ্ত

ভারতের যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল কুশল বরণের

হাসিনার যতসব ভুল

কারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, জানালেন অ্যাটর্নি জেনারেল

শাহ আমানতের রানওয়েতে বিমানে যান্ত্রিক ক্রটি: অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন ৩৮৭ যাত্রী

গাজায় হিরোশিমার চেয়ে ৬ গুণ শক্তিশালী বোমা ফেলেছে ইসরায়েল

সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় ৪ দিনের রিমান্ডে

আদানি পাওয়ারের ৪৩৭ মিলিয়ন ডলারের বকেয়া পরিশোধ সম্পন্ন

যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ. লীগ : পার্থ

খাবারের অভাবে জাপানে বাংলাদেশি তরুণের মর্মান্তিক মৃত্যু!

৫ লাখ কর্ম ভিসা দিচ্ছে ইতালি, সুযোগ পাবেন যারা

সেই সহকারী কমিশনার তাপসী তাবাসসুম চাকরিচ্যুত

দুনিয়ার সবচেয়ে আজব সেতু বাংলাদেশে!

গাছের সঙ্গে বাঁধা সাত শিশু কাওছারের জীবন!

কারাগারে পরিকল্পনা, তিন মাসেই কোটিপতি ২ যুবক

সিডনিতে দুই বাংলাদেশীর আকস্মিক মৃত্যু

সিডনিতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুনী খুন

অক্সফোর্ডের করোনার ভ্যাকসিন বিরোধীতায় অস্ট্রেলিয়ার ইমাম ও আর্চবিশপ

অস্ট্রেলিয়ার কারাগারেই আরেক বন্দিকে কোপালেন সেই বাংলাদেশি ছাত্রী সোমা

কিশোরীর সাথে যৌন সম্পর্কের চেষ্টাঃ সিডনিতে বাংলাদেশী ছাত্র গ্রেপ্তার

মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার সেরা ৪-এ বাংলাদেশি-অস্ট্রেলিয়ান কিশোয়ার

হুইপপুত্রের গোপন ব্যবসার বলি তরুণ ব্যাংকার

খোলা চুলে সিগারেট হাতে এবার নতুন বার্তা দিলেন পরীমণি

কুইন্সল্যান্ডে বারবিকিউ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককের আকস্মিক মৃত্যু

মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে পড়ে সিডনির দুই বাংলাদেশীর মৃত্যু

প্রণব মুখার্জি আর নেই
