জালাল উদ্দিন আহমেদ
জীবন যেখানে ধর্মাশ্রয়ী
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৪ জুন,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১২:১৬ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
জীবনটা এমনই। এই আছি এই নাই। কত স্বপ্ন কত সিঁড়ি গাঁথা নিয়ে আমাদের পথচলা। কিন্তু পথের গতি প্রকৃতি কি আমাদের জানা আছে! আমি জানি কি, আমার পথ চলার যতি চিহ্নটি কখন আমাকে অবগাহন করবে! সম্ভবতঃ জানা নেই বলেই হয়তো আমার চলার গতি থাকে দুর্বার দুর্বিনীত। কোন বাধাকে মানতে চায় না আমার এই চলার গতিপথ। অবশেষে হঠাৎ করে যখন নিভে যায় আমার এই জীবন প্রদীপ তখন সেই দুর্দমনীয় চলার উচ্ছ্বাস শেষ হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যায় ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে। কেউ গর্ত খুঁড়ে মাটির নীচে শুয়ে মিশে যেতে চায় কেউবা চিতা ভষ্ম জ্বালিয়ে আকাশ বাতাস ও মাটিতে তার নশ্বর দেহকে মিশিয়ে দিয়ে প্রস্থান করে। কিন্তু কেউ কি এই পরিণতির কথা ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করেনা যে প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে সবাইকে ওপথেই যেতে হবে। বাড়ি করি, গাড়ি করি, অবৈধ পথে সম্পদের পাহাড় গড়ি। উত্তর পুরুষদের সুখ সমৃদ্ধির উচ্চাভিলাষে হেন অপকর্ম নেই যা আমার এই কৃতকর্মে ঠাঁই পায় না। আর এসব করতে গিয়ে সমাজের গাঁথা সিঁড়িগুলোতে যে ধ্বস নামে তার মেরামতেই আমাদের গলদঘর্ম হতে হয়। আমরা তৃতীয় বিশ্ব, বিশেষ করে এই ভারতীয় উপমহাদেশের ভ্রংশ হয়ে যাওয়া দেশগুলো ধর্ম নিয়ে যেভাবে আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করি তা বোধ করি ব্রহ্মান্ডের অন্য কোথাও দেখা যায় কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে। ধর্মীয় আচার আচরনে আমরা পাকা ধর্মানুরাগী এবং ক্ষেত্রবিশেষ ধর্মাশ্রয়ীও বটে। তবে ধর্মের প্রকৃত পাঠের যে অনুশীলন সে সম্পর্কে আমরা থোড়াই কেয়ার করি।
এই উপমহাদেশে দুটি প্রধান ধর্ম বিদ্যমান। আবার ব্রহ্মদেশ ও সিংহল যোগ করলে অবশ্য আর একটি প্রাচীন ধর্ম আমাদের সামনে চলে আসে। অর্থাৎ আমরা তিনটি ধারায় বিভক্ত হয়ে এই বৃহত্তর ভারতীয় উপমহাদেশে বিরাজমান ধর্মীয় গোষ্ঠি হিসাবে প্রকাশিত রয়েছি বলে ধরে নেয়া যায়। তবে তৃতীয় ধারা অর্থাৎ বৌদ্ধ ধর্ম অত চড়াই উৎরাইয়ের যাঁতাকলে খুব বেশী মাথা ঘামায় বলে মনে হয় না। যদিও ইদানীংকার রাখাইন-রোহিঙ্গাদের নিয়ে বর্বরোচিত কাহিনি ও দৃশ্যপটের যে অবতারণা হচ্ছে তাতে করে বুদ্ধদেবের শান্তির বাণী আজ আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করে মানবেতর হাহাকারে পরিণত হয়েছে। তবে ভারতবর্ষের মূল ভূখন্ডে বিদ্যমান দুই প্রধান ধর্ম হিন্দু ও ইসলাম তাদের ভারতীয় “হিন্দু” জাতীয়তাবাদে কুঠারাঘাত করে ধর্মীয় জাতিস্বত্ত্বায় আবির্ভূত হয়ে যে দুর্বিনীত অশনির বীজ বপন করেছে তার রেশ আজ স্থায়িত্ব পেয়েছে। ভারত দ্বিখন্ডিত হওয়া ও দুটি ধর্মীয় জাতিস্বত্ত্বা তৈরী করা থেকে শুরু করে বিগত পৌনে এক'শ বছর ধরে এই উপমহাদেশে এক বিকট ধর্মীয় মেরুকরন হয়েছে। এর মাধ্যমে ভ্রষ্টাচারের এক স্থায়ী আবাসভূমি তৈরী করে শাসক শ্রেণী জনপদে যে নাকানি চুবানির স্থায়ী বন্দোবস্ত করেছে তা খোলা চোখেই দেখা যায়।
সবচেয়ে মজার বিষয়টি হোল, যে দুটি ধর্মীয় জাতিস্বত্ত্বা তৈরী করে অখন্ড ভারত ভেঙ্গে খন্ডিত রাষ্ট্রের পত্তন ঘটানো হোল তার মূল উপাদান ছিল ধর্ম। ধর্মকে বেচাকেনা করে রাষ্ট্রের মূল জাতি স্বত্ত্বার বিলুপ্তি ঘটিয়ে হিন্দু ও মুসলিম মেজরিটির ক্ষমতাবলে যে ভারত ও পাকিস্থানের সৃষ্টি হলো সেই ধর্মাচারের পথচলায় আমরা কি কখনো একনিষ্ঠ হয়েছি? ইসলামের জিগির তুলে তৎকালীন প্রকাশ্যের ইসলামী পাকিস্থান রাষ্ট্র যেভাবে “হর ঘর মে ইসলাম জিন্দা রহেগা” বলে জনপদকে উড়নচন্ডি বানিয়েছিল তার সুফল কি তারা ধর্মাচারের অনুশীলনে উচ্চকিত করতে পেরেছিল? ধর্মের নামে রাষ্ট্র বানানোর অঙ্গীকারে তারা কি একনিষ্ঠ ছিল? অপরদিকে হিন্দু প্রাধান্যের ভারত রাষ্ট্র তার ঘোষিত ধর্ম নিরপেক্ষতার ঝান্ডা উঁচু করে তুলে ধরতে পেরেছিল কি? উপরে ধর্ম নিরপেক্ষ আর অন্তরে ধর্মের শিকড়কে পোক্ত করার প্রচন্ড প্রত্যাশী হিন্দু প্রাধান্যের ভারত সরকার তার পথচলায় আজকের দিনে দাঁত খিঁচিয়ে তার আসল চেহেরায় বিদ্যমান হিন্দু সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসাবে তার শাশ্বত ঐতিহ্যের আঁতুড় ঘরে কুঠারাঘাত করছে প্রতিনিয়ত। রাষ্ট্রাচারের প্রতিটি পদক্ষেপে ধর্মীয় অনুভূতিকে সামনে এনে প্রাত্যহিক কর্মের শুরুটা যখন ধর্মের প্রাধান্যে সংঘটিত হয় তখন অনুভূতির ইনস্টিংক্টসগুলো ধর্মীয় আদলেই হাঁটতে পছন্দ করে। আমাদের সৃষ্টির আঁতুড়ঘর কিন্তু এভাবেই স্ফীত হয়েছে এবং ভারতবাসীকে ধর্মানুরাগী থেকে ধর্মাশ্রয়ী করে ফেলেছে।
প্রসঙ্গটা ছিল জীবন ও জীবনাচার নিয়ে। তো আমাদের জন্মই যেখানে আযান ও উলুধ্বনির লৌকিকতায় আচ্ছন্ন সেখানে জীবনের বিকাশ তো সেভাবেই হবে। কিন্তু ধর্ম তো খারাপ কিছু বলে না। কোনো ধর্ম কি বলে – তুমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড় কিংবা তুমি সকাল সন্ধ্যা পুজা অর্চনা কর শুধুমাত্র লৌকিকতার জন্য! ধর্মের শিক্ষা কি তাই বলে? ধর্ম মানুষকে শুদ্ধ করে। ধর্ম সমাজের জনপদে শৃংখলার বীজ বপন করে। ধর্ম মানুষ হয়ে মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরী করে। ধর্ম মানুষের ইহজাগতিক চেতনাকে পরিশুদ্ধ ক'রে ভ্রাতৃত্ত্বের বন্ধনকে সুদৃঢ় করে। কিন্তু আমরা চারিদিকে কি দেখছি। ধর্মকে হাতিয়ার করে ধর্মাশ্রয়ী মানুষ ভিন্ন ধর্মীয় মানুষদের প্রতিনিয়ত হেনস্থা করছে। হেয় করছে। রাষ্ট্রীয় মদতে ধর্মের ঝান্ডা উঁচু করে মৌলবাদী আচরনে জনপদে বিভাজনের বীজ ছড়িয়ে দিতে শান্তিপ্রিয় সাধারন মানুষকে প্ররোচিত করছে। কেউ প্রকাশ্যে কেউবা অপ্রকাশ্যে। এই ধর্মকে সামনে রেখে সরকারী মেক্যানিজম থেকে শুরু করে সামাজিক ও স্থানীয় প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে এক অলিখিত জুজুর জিগির তুলে সমাজ ও রাষ্ট্রের আধিকারিক ও মাথারা ধর্মকে তাদের ক্ষমতার বর্ম হিসাবে ব্যবহার করতেও পিছপা হচ্ছে না। ফলে সমাজ ও জনপদে ধর্মের প্রতি একটা অস্বচ্ছ্ব ও চাপা বিষদগার সৃষ্টি হয়ে সামাজিক শাশ্বত বন্ধনগুলো ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলছে। আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মানুষগুলো ধর্মাশ্রয়ীর মোড়কে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় হেন অপকর্ম নেই যা তারা করছে না।
ইদানীংকার ফালনামায় দেখা যায় রাষ্ট্রাচারের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ভ্রষ্টাচারের ছায়া প্রতিচ্ছায়া আমাদের প্রতিটি ভাল উদ্যোগকে ব্যর্থতায় নিমজ্জিত করছে। মানুষের চাহিদার অতলান্তে শেষ বলে কিছু নেই। মানুষ দুর্বিনীত হচ্ছে। চাহিদার দুরাচারী আকাঙ্ক্ষায় মানুষ আজ নৈতিকতা হারিয়ে অমানবিক হয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ কেরানীর পদ হলো একজন সচিব। সেই বড় কেরানীর একজনকে আমি আমার কর্ম জীবনের মাঝ সময়ে দেখেছিলাম। তিনি লেখালেখি করে স্বনাম ধন্যও হয়েছেন। সেই বড় বড়বাবু কিছু দিনের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়েও তার পদধুলি রেখেছিলেন। কোন এক কাজে সম্ভবতঃ এক ছুটির দিনে তার ইস্কাটনের সরকারী বাসভবনে আমার যাওয়া হয়েছিল। ঘরে ঢুকে তাজ্জব হওয়া ছাড়া আর কিবা হতে পারে আমার। দেখি ডাইনিং টেবিলের কাঠের চেয়ারে বসে উনি লেখায় মজে আছেন। মাথার উপর ২৫ পাওয়ারের বাল্ব টিম টিম করে জ্বলছে। প্রথমে তাকে দেখতে পাইনি। কারন পাঁচ ফুট উচ্চতার মানুষটি যেন চেয়ারেই হারিয়ে গেছেন। অর্থাৎ একজন সচিব যে পারিবারিক জীবনে অত সাদামাটা ও নিরহংকারী হতে পারেন তা আমার দিব্যচক্ষেই আমি দেখেছি। কিংবা সে সময়ে শাহ আব্দুল হান্নানের মত মাটিতে পাত পেড়ে খাওয়া সচিবদের গল্প তো আমরা শুনেছি। এসব অযাচিত কথাবার্তা অপ্রাসঙ্গিক হলেও জীবন মৃত্যুর ঠিকুজিতে এর প্রাসঙ্গিকতা যথার্থই বলে মনে করি। যখন দেখি ইদানীংকার একজন অতিরিক্ত সচিবের ঢাকা কানাডা লন্ডনে আধা ডজন বাড়ী ও শত কোটি টাকার অর্থের মজুদির হিসাব তখন তৃতীয় বিশ্বের হাড় হাভাতে মানুষগুলির কথা অবধারিতভাবেই চোখের সামনে চলে আসে। হাড় জিরজিরে ওইসব মানুষগুলোকে জরাজীর্ণতায় নিমজ্জিত হতে দেখি আর দেখি তাদেরই সন্তান হয়ে জন্ম নেয়া বিএ এমএ পাশ করা বাঙালী আদমদের স্বপ্নপুরীর আরব্য রজনীর গল্প। দেখি কেরানী সুপারভাইজার এমনকি বড় বাবুর গাড়ি চালক কিংবা ভূমি অফিসের পিয়ন হয়ে জীবন শুরু করা ইদানীংকার বঙ্গ সন্তানদের জীবনাচারের সুপার ক্যারিশ্মেটিক কেচ্ছা কাহিনী।
যে ধর্মকে সামনে রেখে আমরা আমাদের ব্যক্তি জীবনের উৎকর্ষতার সিঁড়ি গাঁথি সেই ধর্মের শিক্ষায় আলোকিত না হয়ে শুধুমাত্র ধর্মাচারের লৌকিকতায় আমি মহান ধর্মানুরাগী সমাজ সেবক বা দানবীর হয়ে সমাজ তথা রাষ্ট্রে আলোকিত হতে চাই। প্যান্ডেমিকের এই মহা দুর্দিনের শুরুর দিকের কথা। তখনও জুমার নামাজে কড়াকড়ির আরোপ লাগেনি। সেই সময়ের কোন এক জু'মার নামাজে ইমাম সাহেব মসজিদ উন্নয়নের জন্য মুসুল্লিদের কাছে সাহায্যের কথা বলেন। কেউ পাঁচ'শ, কেউ এক হাজার যে যেমন পারেন দেয়ার চেষ্টা করেন। এভাবেই স্রষ্টার এবাদতখানা বা আল্লার মসজিদ গড়ে উঠে বাংলার শহর বন্দরে। তো সেদিন দেখলাম ইমাম সাহেব গদগদ ভাবে উচ্চারন করলেন শৃংখলা বাহিনীর অমুক কর্তা পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছেন। হাত উঁচিয়ে লম্বা করে একটা দোয়াও করা হোল তার জন্য। খুব স্বাভাবিক কি? পরে জানলাম মাস ছয়েক আগে কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনে উনি আমার পড়শিও হয়েছেন। ধর্মের আঁতুড় ঘরেই যেসব অনিয়ম চলে তার ভুরি ভুরি উপমা দেয়া যায়। একজন হায়দার বাবাকে নিয়ে যে ব্যবসার ফাঁদ পাতা হয়েছে ঢাকার একটি গোরস্থান সংলগ্ন এলাকায় তা চোখে না দেখলে বুঝা মুস্কিল। এবং এসব করছে কারা? খোঁজ নিয়ে জানা যাবে সমাজের হোমড়া চোমড়ারাই এসবের মূল স্টেক হোল্ডার।
লেখাটি এলোমেলো। শুরু করলাম জীবন দিয়ে। হাঁটা শুরু হোল ভারতীয় উপমহাদেশ, ধর্ম, চাকরি, ব্যবসা, দান-খায়রাত এবং অবশেষে কবরের সাতকাহন। এটাই আসল কথা। যে ধর্মাচারনের অহমিকায় ধর্মীয় জাতিস্বত্ত্বা তৈরী করে রাষ্ট্র গঠিত হলো সেই ধর্মাচারনের প্রকৃত অনুশীলনে সেই দুই জাতি কি তার উৎকর্ষতা সাধনে এগিয়েছিল। নাকি ধর্মাশ্রয়ী দুর্বিনীত শাসকদের প্রশ্রয়ে দুটি জনপদকে ধর্মানুরাগী না বানিয়ে ধর্মাশয়ী হিংস্র অমানুষ বানিয়েছে তা ভেবে দেখা দরকার। জন্ম-মৃত্যুর মাঝখানে কর্ম! গত দু'বছর ধরে চলছে অভিশপ্ত করোনা কাল। কিন্তু এত বড় মহামারীতেও কি আমাদের কোন শিক্ষা হয়েছে? আশরাফুল মোখলুকাতের আলোকছটায় আমরা কি উচ্চস্বরে বলতে পারি আমরা মনহুশ নয়, আমরা মানুষ। একজন মমতাময়ী নারী তার পিতৃচ্ছ্বটার আলোকে বাঙালী জাতিকে সামনে এগিয়ে নিতে চাচ্ছেন আর তার আমলা পারিষদরা তাদের স্বপ্নের সেকেন্ড হোমের নেশায় মত্ত হয়ে তার চেষ্টাকে ব্যর্থ করতে তার চারপাশে উই পোকার মত কিলবিল করছে। আবার সেই তাদেরই কেউ যখন করোনায় ঘায়েল হয়ে মাটির নীচে আশ্রয় নিচ্ছে তখন সাধারন মানুষ ইন্নালিল্লাহ না পড়ে আলহামদুলিল্লাহ পড়ছে। মানুষ কতটা বিতৃষ্ণ হলে এরকম বৈসাদৃশ্য আচরনে প্রকাশিত হয় তা কি আমরা অনুমান করতে পারিনা!
আবারো বলছি, ধর্মাশ্রয়ী হয়ে মানুষ দুর্বিনীত হচ্ছে। মনুষত্ব ও নৈতিকতাকে শিকেই তুলে সমাজকে কলুষিত করছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের সুষম বিকাশ হচ্ছে না এই ধর্মের জুজুর ট্যাগ লাগিয়ে। তবে হাঁ, যদি ধর্মানুরাগী হয়ে মানুষ তার সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মানে এগিয়ে আসতো তাহলে এই হতাশা, বঞ্চনা বা অসামঞ্জস্যতার আবহ বিদায় নিত। ধর্মের সুবাতাসে মানুষের মনুষত্ব বিকশিত হোত। সমাজ শক্তিশালী হোত। বিভাজন ও বিভেদের কচকচানিতে মানুষকে হা পিতেশ করতে হোত না। এটা আমরা জানি, যেমন জানেন ধর্ম ব্যবসায়ের মোড়কে অবস্থান নেয়া ধর্মগুরুরাও। এসবের সমাধান হওয়া প্রয়োজন। নইলে দুর্বৃত্যায়ন, দাদাগিরি, ঘুষ, সুদ এবং লোভ মনুষ্য সমাজকে একদিন ধ্বংসের চরমতম মূল্যে তা পরিশোধ করতে হবে। লক্ষ্য করা যায় অনিয়মের দৃষ্টি গ্রাহ্যতায় মানুষ নামের অমানুষগুলো যখন শৃংখলে আবদ্ধ হয় তখন তার মধ্যে ধর্মাশ্রয়ী হয়ে প্রকাশিত হওয়ার এক প্রচন্ড প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। এভাবেই ধর্মকে সামনে এনে আমাদের সমাজে অনিয়ম ও সামাজিক অসামঞ্জস্যতার সুত্রপাত হয়। সুতরাং কি নিয়ে এত অহংকার, এত দাম্ভিকতা। সামান্য এক ছোট অনুজীবের দংশনে যখন ছটপট করতে করতে একজন প্রবল প্রতাপশালী সমাজপতি বা প্রশাসনের বড় বাবুর হাসপাতালের বিছানায় ভবলীলা সাঙ্গ হয় তখন কোন্ অহংকার বা দাপটে আপনি দুনিয়াদারির এই ক্ষনিকের মোহজালে পরাক্রমশালী সমাজপতি বা নেতা হওয়ার বড়াই করে সমাজের গাঁথা সিঁড়িগুলোকে ছত্রাখান করার দুঃসাহস দেখান। আমরা আশাবাদী সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত দুটি কাজ ঠিকমত পালন করলে সমাজ ও রাষ্ট্রের সমস্ত অনিয়ম নিমেষেই উবে যাবে। হক্কুল্লাহ্ ও হক্কুল ইবাদের পথনির্দেশনায় চললে দুনিয়ার সমস্ত অনিয়ম দূরীভূত হবে ইন্ শা আল্লাহ্!