অর্পন-দর্পন স্মৃতি ফাউন্ডেশন আমাদের কথা
রাশেদুল ইসলাম
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০১:০৭ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
অর্পন-দর্পন স্মৃতি ফাউন্ডেশন একটি অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সেচ্ছাসেবী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান । ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা জনাব মোঃ রাশেদুল ইসলাম ও তাঁর সহধর্মীনি অধ্যাপক শারমিনা পারভিন। এই দম্পতির দুই শিশুপুত্র শাদমান আবসার অর্পণ এবং আদনান রাশেদ দর্পণ যথাক্রমে ১৯৯২ এবং ১৯৯৪ সালে মৃত্যুবরণ করে । এই দম্পতি বিশ্বাস করেন যে, তাদের ছেলে দুটি বেঁচে থাকলে তারা সমাজের সকল প্রকার ভাল ও সৎকাজ করত । এই চিন্তাধারা থেকেই তাঁরা তাদের অকাল প্রয়াত দুটি শিশু সন্তানের স্মৃতির উদ্দেশ্যে যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলাধীন মুক্তারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের পাশে ২০০৯ সালে নিজস্ব অর্থায়নে অর্পন-দর্পন স্মৃতি পাঠাগার স্থাপন করেন। পাঠাগারটি শুরু থেকে স্থানীয় জনগণের বইপড়ার সুযোগদানের পাশাপাশি সীমিত আকারে জনকল্যাণমূলক কাজ করে আসছে । ২০১৬ সালে সোসাইটিজ রেজিষ্ট্রেশন অ্যাক্ট-১৮৬০ এর আওতায় অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসাবে অর্পন-দর্পন স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হলে (রেজিষ্টেশন নং S-12301/2016) অর্পন-দর্পন স্মৃতি পাঠাগার এই ফাউন্ডেশনের একটি অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয় ।
মিশন
নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সৎকাজ করা এবং অন্যকে সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করা ।
ভিশন
সৎকাজে প্রতিযোগিতামূলক একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করা ।
কর্মপদ্ধতি
অর্পন-দর্পন স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতাদের জন্য একটি স্পর্শকাতর সংস্থা। তাদের আবেগ, অনুভূতি ও বাস্তবতা বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানের মিশন, ভিশন এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ফাউন্ডেশন তার কাজ-কে দুভাগে বিভক্ত করেছে-
১। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সৎকাজ করা
নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সৎকাজ করার জন্যই অর্পন-দর্পন স্মৃতি পাঠাগার স্থাপন করা হয়। অর্পন-দর্পন স্মৃতি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শারমিনা পারভিন নিজে এই পাঠাগারের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। পাঠাগারটি বর্তমানে যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলাধীন মুক্তারপুর এবং আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী তরুণ তরুণীদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। অর্পন-দর্পন স্মৃতি পাঠাগার এলাকার মানুষের সাধারণ পাঠাগার সেবা প্রদানের পাশাপাশি নিম্নবর্ণিত জনকল্যাণমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে :
কভিড ১৯
করোনা মহামারির এই দু:সময়ে অর্পন-দর্পন স্মৃতি পাঠাগার এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সচেতনামুলক কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি মানুষের মাঝে সীমিত পরিসরে মাস্ক, সেনিটাইজার, খাবার ইত্যাদি বিতরণ করে আসছে ।
স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র
এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য অর্পন-দর্পন স্মৃতি পাঠাগার ভবনের একটি অংশে “হাজী আব্দুল জলিল স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র” স্থাপন করা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে । স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য একজন মেডিক্যাল এসিস্যান্ট এবং তাঁর কাজে সহায়তা করার জন্য একজন সহকারী নিয়োগ করা হবে । শুক্রবার ব্যতিত প্রতিদিন সকাল ৯:০০ টা হতে বিকাল ৫:০০ টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি খোলা থাকবে ।
উপার্জনমুখী কার্যক্রম
অর্পন-দর্পন স্মৃতি পাঠাগার এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির মহিলাদের সেলাই প্রশিক্ষণ, হাঁসমুরগি পালন, বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষসহ বিভিন্ন ধরণের উপার্জনমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকে ।
শিক্ষাচর্চা কেন্দ্র
অর্পন-দর্পন স্মৃতি পাঠাগার সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের একডেমিক পড়াশুনায় সহযোগিতার পাশাপাশি তাদের ক্যারিয়ার গঠনের বিভিন্ন শিক্ষামুলক কার্যক্রমসহ উদ্যোক্তা তৈরীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে আসছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরির জন্য আবেদন করা, ইন্টারভিউ এ অংশগ্রহণ সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমে পাঠাগার সহায়তা দিয়ে থাকে ।
অর্পন-দর্পন স্মৃতি পাঠাগার প্রতিবছর শীতে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করার চেষ্টা করে । এছাড়া গ্রামের মুসল্লিদের ঈদের নামাজ পড়ার সুবিধার্থে মুক্তারপুর ঈদগাঁ মাঠ প্রস্তুতকরণসহ অনুসংগী সেবা প্রদান করে থাকে ।
২। অন্যকে সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করা
অর্পণ-দর্পণ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের আওতায় অন্যকে সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী প্রধান জনাব মোঃ রাশেদুল ইসলাম ২০১৬ সাল থেকে লেখালেখি শুরু করেন । তাঁর লেখা বইগুলো ফাউন্ডেশনের স্থায়ী সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় । বইগুলো নিম্নরূপঃ
১) মারাক্কেশের বাতাস
২) চাঁদের পাহাড়
৩) পাগলামামা
৪) রোজকার টুকিটাকি
৫) সাকুরা মৌসুমে
৬) নিজেকে অভিজাত মনে হয়
৭) লকডাউনে আমার মা
অর্পণ-দর্পণ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক শারমিনা পারভিন রচিত ‘স্মৃতিতে মুক্তিযুদ্ধ ও আমার জীবন’ বইটির গ্রন্থস্বত্বও অর্পণ-দর্পণ স্মৃতি ফাউন্ডেশন-কে দেয়া হয়েছে।
অন্যকে সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ‘অর্পণ- দর্পণ স্মৃতি ফাউনডেশন’ এর আওতায় ‘আমিই পারি’ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে । বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ এবং বিচক্ষণ ও জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গের নিকট থেকে পাওয়া শিক্ষা থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, যেকোন ব্যক্তি মানুষের জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতা সম্পূর্ণ সেই ব্যক্তির উপর নির্ভর করে । ফলে, যেকোন ছেলেমেয়ে নিজের জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে, যদি তার লক্ষ্যের দিকে দৃঢ় মনোবল নিয়ে এগিয়ে যায়, তাহলে যৌক্তিক বিচারে তার সেই লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনা শতকরা একশ’ ভাগ । তবে এই সফলতার কোন মূল্য থাকে না , যদি তার মধ্যে মানবিক কোন গুণ কাজ না করে, যদি তার মধ্যে দেশপ্রেম না থাকে বা তার মধ্যে পরিশুদ্ধ ধর্মীয় ও নৈতিক চেতনাবোধ কাজ না করে । এসব বিবেচনায় ‘নিজে সৎকাজ করি এবং অন্যকে সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করি’ শ্লোগান দিয়ে শুরু হওয়া ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য বইপড়ি’ প্রতিযোগিতা কাম্য সমাধান দিতে সক্ষম বলে আমরা মনে করি ।
‘‘আমি-ই পারি’ কর্মসূচির আওতায় ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য বইপড়ি’ প্রতিযোগিতা প্রথমে পরীক্ষামুলকভাবে শুরু করা হয় । এ প্রতিযোগিতায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীসহ সমাজের যে কোন শ্রেণী পেশার মানুষ চাইলেই অংশগ্রহন করতে পারেন। ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য বইপড়ি’ প্রতিযোগিতার প্রথম পর্ব যশোরের ঝিকরগাছায় জাগ্রত ঝিকরগাছার উদ্যোমি স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় সফলভাবে সমাপ্ত হয় । মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় চলমান ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য বইপড়ি’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে অক্টোবর, ২০২১ মাসের মধ্যেই পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে । ‘আমি-ই পারি’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য বইপড়ি’ প্রতিযোগিতার প্রত্যাশিত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ফলাফল নিম্নরূপঃ
প্রত্যক্ষ ফলাফল-
ক) প্রতি উপজেলার কমপক্ষে ১০০ জন প্রতিযোগী ছেলেমেয়েকে এই প্রতিযোগিতায় অন্তর্ভুক্ত করা।
খ) প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ছেলেমেয়ে এবং সেচ্ছাসেবীদের একটি মানবিক গুণসম্পন্ন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার একটি কার্যকর প্রয়াস ।
গ) প্রতিযোগী ছেলেমেয়েদের যে কোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্য করে তোলা।
ঘ) ক্ষতিকর ভিডিও গেম ও মাদকাশক্তির মত খারাপ অভ্যাস থেকে ফিরিয়ে এনে ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে উদ্বুদ্ধ করা।
পরোক্ষ ফলাফল-
ক) ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য বইপড়ি’ প্রতিযোগিতা আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট উপজেলা পর্যায়ের তরুণ তরুণীদের তথ্যপ্রযুক্তি এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে বাস্তব দক্ষতা অর্জনে সহায়ক।
খ) সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরিতে সহায়ক ।
গ) ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য বইপড়ি’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী এবং স্বেচ্ছাসেবী তরুণ তরুণী সরকারের ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে ।
ঘ) এ ধরণের প্রতিযোগিতা এসডিজি ৪ এ বর্ণিত শিক্ষা বিষয়ক লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে ।
অতিসম্প্রতি অর্পন-দর্পন স্মৃতি ফাউন্ডেশন এবং কিউ কে আহমদ ফাউন্ডেশন যৌথভাবে দেশের পুরাতন ২১ টি জেলার ৫০ টি উপজেলায় ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য বইপড়ি’ প্রতিযোগিতা আয়োজনের সমঝোতা হয়েছে । ডিসেম্বর ২০২১ মাসের মধ্যে দুপক্ষের সমঝোতা স্মারক সাক্ষরসহ প্রতিযোগিতার বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হবে আশা করি ।
এছাড়া ‘আমি-ই পারি’ কর্মসূচির আওতায় চলতি অর্থবছর (২০২১-২২) নিম্নবর্ণিত কার্যক্রমগুলো করার পরিকল্পনা রয়েছে:
(১) শিশু-কে ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ানো নয়-শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন ও বাস্তবায়ন;
(২) প্রতিটি জাতীয় দিবসে প্রতিপাদ্য বিষয়ের সাথে মিল রেখে ব্যতিক্রমধর্মী প্রোগ্রাম এর আয়োজন ও বাস্তবায়ন ।